ঢাকা, ০৯ এপ্রিল – সম্প্রতি বিক্ষোভ ও হরতালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রামের হাটহাজারীসহ কয়েকটি স্থানে তাণ্ডব চালিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। এর রেশ না কাটতেই নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয় রিসোর্টে সংগঠনটির যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক এক নারীসহ অবরুদ্ধ হওয়ার বিতর্কিত ঘটনায় কোণঠাসা হয়ে কৌশলী ভূমিকা নিয়েছে হেফাজত। সংগঠনটির নেতারা গ্রেপ্তার এড়াতে সংঘাত হতে পারে, এমন কর্মসূচি থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ কারণে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে গতকাল বৃহস্পতিবার যে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছিল, তা স্থগিত করেছে সংগঠনটি।
দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আজ শুক্রবারও সংগঠনটি কোনো কর্মসূচি পালন করবে না। উসকানিমূলক বক্তব্যের অভিযোগে ‘শিশু বক্তা’ রফিকুল ইসলাম মাদানীকে গ্রেপ্তারের পর গতকাল মামুনুল হক ফেসবুক লাইভে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলেও ব্যক্তিগত ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। এদিকে পুলিশ ও র্যাবের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, মামুনুল হকসহ হেফাজতের কেন্দ্রীয়, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ঢাকার কয়েকজন নেতা নজরদারির মধ্যে আছেন। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি অন্তত ৯৮টি মামলার তদন্তে জড়িতদের শনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন : ইউএনওদের নিরাপত্তার জন্য দেওয়া হবে গানম্যান
গতকাল ফেসবুক লাইভে মামুনুল হক বলেন, ‘আমি সবার কাছে দোয়া চাই। আমার ব্যক্তিগত অসাবধানতার কারণে যে ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়েছে এবং যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ না করার কারণে যে ক্ষতির সম্মুখীন ব্যক্তিগতভাবে হয়েছি, সে জন্য নিজেই মর্মাহত। আমার কারণে আজকে অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাঁদের কাছে আমি হাত জোড় করে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।’
স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফরের বিরোধিতা করে মামুনুলসহ হেফাজত নেতাদের আহ্বানে ২৫ মার্চ থেকে কর্মসূচি এবং ২৮ মার্চ হরতালে সংঘাতে অন্তত ১৭ জন নিহত হয়। এসব ঘটনায় দেশে যখন আলোচনা-সমালোচনা চলছিল, এর মধ্যেই গত ৩ এপ্রিল সোনারগাঁর রয়েল রিসোর্টে এক নারীকে নিয়ে ‘রিফ্রেশমেন্ট’ বা একান্তে সময় কাটাতে যান হেফাজত নেতা ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় মহাসচিব মামুনুল হক। স্থানীয় লোকজনের সন্দেহ হলে নারীসহ তাঁকে অবরুদ্ধ করা হয়। তখন তিনি ওই নারীকে নিজের দ্বিতীয় স্ত্রী ‘আমেনা তৈয়বা’ বলে পরিচয় দেন। বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে হেফাজতের নেতাকর্মীরা ওই রিসোর্টে ভাঙচুর করে মামুনুল হককে ছিনিয়ে নিয়ে যান। পরে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কয়েকটি অডিও ফাঁস হয়, যেখানে মামুনুল হক ওই নারীকে শহীদুল ইসলামের সাবেক স্ত্রী হিসেবে নিজের স্ত্রীর কাছে পরিচয় দেন। হেফাজতের একাধিক নেতার ফাঁস হওয়া ফোনালাপেও ক্ষোভের কথা জানা গেছে। অডিওতে মাওলানা ফজলুল করিম কাশেমী ও ফয়সাল আহমেদ নামের হেফাজতের দুই নেতা মামুনুল হকের কর্মকাণ্ডকে ভুল আখ্যায়িত করে যেকোনো মূল্যে তাঁদের অবস্থান শক্ত করে ধরে রাখার পরামর্শ করেন। হরতাল-নাশকতায় দায়েরকৃত মামলাগুলোতে হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের নাম না থাকলেও রিসোর্টকাণ্ডে দুটি এবং ঢাকার নাশকতায় দুটি মামলায় মামুনুলের নাম রয়েছে। অন্যদিকে গত মঙ্গলবার রাতে নেত্রকোনা থেকে আটকের পর গাজীপুরের গাছা থানায় ‘শিশু বক্তা’ রফিকুল ইসলাম মাদানীর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছে র্যাব।
গাজীপুর থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, রফিকুলকে গতকাল সকালে জেলা কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। এর আগে নজিরবিহীন কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থায় একটি প্রিজন ভ্যানে করে তাঁকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। গাজীপুর মহানগর পুলিশের ডিসি (্দক্ষিণ) ইলতুৎ মিশ জনান, গত ১০ ফেব্রুয়ারি বোর্ডবাজারের কলমেশ্বরে একটি কারখানা চত্বরে ওয়াজ মাহফিলে সরকার ও সরকারপ্রধানকে কটাক্ষ করে বক্তব্য দেন রফিকুল। ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই বক্তব্যসহ আরো অনেক উসকানিমূলক বক্তব্য প্রচার হলে সরকারের ভেতরে ও বাইরে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
এদিকে গত বুধবার রাতে মামুনুল হকের মোহাম্মদপুরের মাদরাসা এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবস্থানে গ্রেপ্তারের গুজব ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশের একটি সূত্র জানায়, হাইকমান্ডের নির্দেশনা পেলে যেকোনো সময় মামুনুলসহ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতাকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এ কারণে মামুনুলসহ সক্রিয় হেফাজত নেতাদের কার্যক্রম ও গতিবিধির ওপর কড়া নজরদারি করা হচ্ছে।
অন্যদিকে মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলায় বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছিল হেফাজত। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৪৪ ধারা জারির পর বুধবার সন্ধ্যায় তারা সমাবেশ স্থগিতের ঘোষণা দেয়। সংগঠনটির সূত্র জানায়, মামুনুল ইস্যুতে বিব্রত হলেও কিভাবে পরিস্থিতি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় তা নিয়ে ভাবছে হেফাজত। এ কারণে নতুন করে কোনো সহিংসতা ছড়াতে পারে, এমন কর্মসূচি দিচ্ছে না সংগঠনটি।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর কমিটির প্রচার সম্পাদক মুফতি আব্দুল মুমিন বলেন, ‘শুক্রবার (আজ) আমাদের কোনো কর্মসূচি নেই।’
মাদানীর নামে ঢাকায় মামলা
‘শিশু বক্তা’ রফিকুল ইসলাম মাদানীর নামে ঢাকায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। আদনান শান্ত নামে একজন মতিঝিল থানায় মামলাটি করেছেন। গতকাল সন্ধ্যায় ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার সৈয়দ নুরুল ইসলাম জানান, মামলাটি ডিএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিট তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
সূত্র : কালের কণ্ঠ
এন এইচ, ০৯ এপ্রিল