চাঁদপুর

মায়ার ছেলে দীপু চৌধুরীকে ঘিরে খুনের অভিযোগ সহ নানা বিতর্ক

চাঁদপুর, ২০ ফেব্রুয়ারি – অর্ধশতাধিক সন্ত্রাসীসহ বেআইনি শর্টগান, বন্দুক, পিস্তল ও রিভলবার নিয়ে মোহনপুর পর্যটন কেন্দ্র দখলের চেষ্টার অভিযোগে ১৭ ফেব্রুয়ারি চাঁদপুরের অতিরিক্তি চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হাসানের আদালতে মামলা হয়েছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার বড় ছেলে সাজেদুল হোসেন ওরফে দীপু চৌধুরীর বিরুদ্ধে। মামলায় দীপু ছাড়াও আরো ১৮ জনকে আসামি করা হয়েছে।

এর আগেও বিভিন্ন সময়ে মায়া পরিবারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছে। দুই পুত্র ও কন্যার জামাতাকে ঘিরে বিতর্ক যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার। আওয়ামী লীগের শুরু হওয়া ১৯৯৬ সালে শাসনকালের মেয়াদে মায়া প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে বড় ছেলে দীপু চৌধুরীকে ঘিরে নানা কাহিনী তাকে বিব্রত করেছিল।

ছোট ছেলে রনি চৌধুরীর বিরুদ্ধে গুলশান, বনানী ও উত্তরায় বিভিন্ন সময়ে নানা অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে মন্ত্রীর মেয়ের জামাতা নারায়ণগঞ্জের সেভেন মার্ডার কাহিনীর হোতা চাকরিচ্যুত সেনা কর্মকর্তা তারেক সাঈদ। তাকে নিয়েও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে নানা সময়ে। এমনকি হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টার অভিযোগও উঠেছিল তার বিরুদ্ধে।

জানা গেছে, ঢাকার রাজনীতিতে একসময় বিশাল অবস্থানে থাকা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াকে তার সন্তানরা আওয়ামী লীগ সরকারের দুই মেয়াদেই বিব্রত করেন। প্রথমবার দীপু চৌধুরী নানা অপকর্মে উত্তরা কাঁপাতেন। তার নেতৃত্বে উত্তরা ফ্রেন্ডস ক্লাব দখলে ছিল। ওই ক্লাবের আধিপত্য ও জমি দখল নিয়ে ২০০০ সালের দিকে তিতাস নামে একজনকে হত্যা পর্যন্ত করা হয়। দীপু চৌধুরী এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলে অভিযোগ উঠলে দেশ-বিদেশে তোলপাড় শুরু হয়। দীপু চৌধুরীসহ অন্য সাঙ্গোপাঙ্গদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। তার পরও তিনি থাকেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

আরও পড়ুন : যে কারণে একুশে পদক পেলেন ভাষা সৈনিক এম শামসুল হক

এবার গত ১২ ফেব্রুয়ারি মোহনপুর পর্যটন কেন্দ্র দখল নিতে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের নিয়ে হামলা ও গুলি ছোড়ার ঘটনায় ফের বিতর্কে দীপু চৌধুরী। এ ঘটনায় ১৭ ফেব্রুয়ারি চাঁদপুরের অতিরিক্তি চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হাসানের আদালতে মামলা হয়েছে। মোহনপুর পর্যটন কেন্দ্রের ম্যানেজার মোহাম্মদ জাকির হোসেন বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন। অভিযোগ আমলে নিয়ে ঘটনা তদন্ত ও আলামত উদ্ধার করে প্রতিবেদন জমা দিতে মতলব উত্তর থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

মামলায় অভিযোগে বলা হয়েছে, পর্যটনকেন্দ্রটি দখলে নিতে কিছুদিন ধরে বাদীপক্ষকে ভয়-ভীতি ও হুমকি দিয়ে আসছেন দীপু চৌধুরী। এরই ধারাবাহিকতায় ১২ ফেব্রুয়ারি আসামিরা অর্ধশত সন্ত্রাসীসহ বেআইনি শর্টগান, বন্দুক, পিস্তল, রিভলবার ইত্যাদিসহ অতর্কিত পর্যটনকেন্দ্রের সামনে হাজির হন। এ সময় পর্যটনকেন্দ্রের মালিকসহ কয়েকজনকে হত্যার উদ্দেশে খুঁজতে থাকেন তারা। একপর্যায়ে আসামিরা গুলি ছোড়েন। শব্দ শুনে এলাকার লোকজন এগিয়ে এলে আসামিরা গুলি ছুড়তে ছুড়তে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ছয়টি গুলির খোসা জব্দ করেছে।

বিএনপির শাসন এবং ওয়ান-ইলেভেনের সময় মায়া চৌধুরী মাঠে থাকলেও তার সন্তানদের উৎপাত ছিল না। কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দীপু চৌধুরী ও তার ছোট ভাই রনি চৌধুরী আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেন, অল্প সময়ের মধ্যেই পাল্টে যায় তাদের চালচলন। বিভিন্নভাবে তারা বিপুল অর্থসম্পদের মালিক বনে যান। এর মাঝে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে রাজধানীর সিসা বার নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রমের অভিযোগ জমা হয় তাদের বিরুদ্ধে। তাদের বোনের স্বামী তারেক সাঈদ র‌্যাবে থাকার সময় তাকে ব্যবহার করে দীপু ও রনি অনেক কাজ করেন। নারায়ণগঞ্জ খুনের পর দীপু ও রনিকে জড়িয়ে তখন অনেক খবরও পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।

আওয়ামী লীগের একজন ত্যাগী নেতা মোফাজ্জেল হোসেন চৌধুরী মায়া। কিন্তু সব সময় তিনি সন্তানদের নিয়ে ঝামেলায় থাকেন। মায়ার উত্তরসুরিরা রাজনীতি নয়, তারা ব্যস্ত বাপ ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন নিয়ে। মায়া পুত্রদের লাগাম টেনে না রাখলে দল ও সরকারকে আরো বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হবে।

সূত্র: কালের কন্ঠ
এন এ/ ২০ ফেব্রুয়ারি

Back to top button