পুষ্টি

ড্রাগন ফলের বিস্ময়কর গুণাগুণ

ড্রাগন একটি বিদেশি ফল। ইদানিং সব জায়গাতেই পাওয়া যায়। এটি প্রকৃতপক্ষে এক ধরনের ফণীমনসা প্রজাতির ফল। দেখতে কিছুটা ডিম্বাকৃতির উজ্জ্বল গোলাপি রঙের। তবে এর স্বাস্থ্য উপকারিতা শুনলে চমকে উঠবেন সবাই। এ ফলটি বিগত কয়েক বছর ধরে চাষ করা হচ্ছে আমাদের দেশেও। বেশ সাড়াও পাওয়া যাচ্ছে এই ফল চাষে। ড্রাগন ফল সুস্বাদু, লোভনীয় এবং পুষ্টিগুণে ভরপুর। এর রয়েছে অনেক ভেজষ ও ওষুধি গুণ।

এটি দেখতে ক্যাকটাসের মতো। এই ফলের খোসা নরম, কাটলে ভিতরটা দেখতে লাল বা সাদা রঙের হয়ে থাকে। একটি ড্রাগন ফলে ৬০ ক্যালরি এবং প্রচুর ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন সি, ওমেগা ৩ ও ওমেগা ৯ থাকে। এই ফলে আছে বিটা ক্যারোটিন ও লাইকোপিনের মতো অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টও। বিটা ক্যারোটিন শরীরে ভিটামিন এ-তে রূপান্তরিত হয়ে ত্বক, চোখ ও ইমিউন সিস্টেমের উন্নতি করে।

চলুন জেনে নেই এর ওষুধি গুণ সম্পর্কে

হার্ট ভালো রাখে: এই ফলের বীজে রয়েছে ওমেগা ৩ ও ওমেগা ৯ ফ্যাটি অ্যাসিড যা হার্ট ভালো রাখতে সহায়তা করে। নিউ ইয়র্কের পুষ্টিবিদ ও দ্য স্মল চেঞ্জ ডায়েটের লেখক কেরি গানস বলেন, ড্রাগন ফলের ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে প্রদাহনাশক উপাদান রয়েছে। ঠিক এই কারণে এটি খেলে হার্টের রোগের ঝুঁকি ও জয়েন্টের ব্যথা অনেকটাই কমে যায়। এছাড়া বিষণ্নতা কমাতেও সাহায্য করে।

কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ: যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা আছে তারা এই ফল খেতে পারেন। কারণ একটি ড্রাগন ফলে প্রায় সাত গ্রাম ফাইবার আছে, যা দৈনিক সুপারিশকৃত পরিমাণের চারভাগের প্রায় একভাগ। এছাড়াও এটি অন্ত্রের বর্জ্য দূরীকরণে সাহায্য করে। সালসা তৈরি করে অথবা ফ্রুট সালাদ বা স্মুদিতে যোগ করে ড্রাগন ফল খেতে পারেন। তবে এই ফলের স্বাদ একেবারে হালকা।

রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে: আমাদের সবারই কমবেশি আয়রনের ঘাটতি থাকে। ড্রাগন ফলটি বেশ পরিচিত আয়রনের জন্য। ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের এই সমস্যা বেশি দেখা দেয়। কিন্তু আমরা অধিকাংশ আয়রন গ্রহণ করি মাংস, মাছ, বাদাম ও ডাল জাতীয় খাবার থেকে। উচ্চ পরিমাণে আয়রন পাওয়া যায় অল্প কিছু ফলে। তার মধ্যে একটি হলো ড্রাগন ফল। ১০০ গ্রাম ড্রাগন ফলে ১.৯ মিলিগ্রাম আয়রন রয়েছে, যা দৈনিক সুপারিশকৃত মাত্রার ১০ শতাংশেরও বেশি। আয়রন প্রয়োজন হিমোগ্লোবিন উৎপাদনের জন্য, যা শরীরের টিস্যুতে অক্সিজেন পৌঁছাতে লোহিত রক্তকণিকাকে সাহায্য করে।

ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী রাখে: আমরা সাধারণত জেনে থাকি ভিটামিন সি ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে তোলে। আর তার জন্য আমরা ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফলের দিকে ঝুঁকে পড়ি। এর মধ্যে অন্যতম হলো কমলা। তবে ইমিউন সিস্টেমের ক্ষমতাকে বাড়াতে বেছে নিতে পারেন ড্রাগন ফলকেও। এই ফলটিতে আছে প্রচুর ভিটামিন সি। বেথ ওয়ারেন নিউট্রিশনের প্রতিষ্ঠাতা ও পুষ্টিবিদ বেথ ওয়ারেন বলেন, ‘অক্সিডেটিভ স্ট্রেস জনিত ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে যে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট প্রয়োজন তা ফল ও শাকসবজিতে রয়েছে। ড্রাগন ফলটি প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টের একটি উৎস।

চুলপড়া কমায়: আমাদের চুলপড়া সমস্যায় সবাইকে কমবেশি পড়তে হয়। আর আয়রন ঘাটতি হলেই চুলপড়া সমস্যায় ভুগতে হয়। তবে নিয়মিত ড্রাগন ফল খেলে চুলপড়া অনেকাংশেই কমে যায়। নিউ ইয়র্ক সিটির আইকান স্কুল অব মেডিসিনের ডার্মাটোলজি বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট ক্লিনিক্যাল প্রফেসর গ্যারি গোল্ডেনবার্গের মতে, এই ফল আয়রন ঘাটতি জনিত রক্তস্বল্পতার অন্যান্য উপসর্গও প্রশমিত করতে পারে, এর মধ্যে রয়েছে অত্যাধিক ক্লান্তি, ত্বকের বিবর্ণতা, মনোনিবেশে সমস্যা, মাথাব্যথা ও হাত-পায়ে ঠান্ডা অনুভূতি।

এম এউ, ১৩ জুলাই

Back to top button