ইসলাম

হজরত ইদরিস [আ.]-কে নিয়ে কিছু ভুল ইতিহাসের সমাধান!

তারিখুল হুকামার ৩৪৮ পৃষ্ঠায় তৃতীয় হারমাসের আলোচনায় বর্ণিত হয়েছে যে, একদল আলেম এই বিশ্বাস পোষণ করেন, হজরত নুহ [আ.]-এর প্লাবনের পূর্বে পৃথিবীতে যে-পরিমাণ বিদ্যা প্রসার লাভ করেছে, তার সবকিছুরই আদি শিক্ষক এই প্রথম হারমাস। তিনি মিসরের উচ্চভূমির অধিবাসী ছিলেন এবং হিব্রুভাষীরা তাঁকে খানুখ নবি বলে মানতো।

তারিখুল হুকামার ৩৪৮ পৃষ্ঠায় তৃতীয় হারমাসের আলোচনায় বর্ণিত হয়েছে যে, একদল আলেম এই বিশ্বাস পোষণ করেন, হজরত নুহ [আ.]-এর প্লাবনের পূর্বে পৃথিবীতে যে-পরিমাণ বিদ্যা প্রসার লাভ করেছে, তার সবকিছুরই আদি শিক্ষক এই প্রথম হারমাস। তিনি মিসরের উচ্চভূমির অধিবাসী ছিলেন এবং হিব্রুভাষীরা তাঁকে খানুখ নবি বলে মানতো। তিনি হজরত আদম [আ].-এর প্রপৌত্র ছিলেন। অর্থাৎ, খানুক (ইদরিস) বিন ইয়ারুদ বিন মাহলাইল বিন কীনান বিন আনুশ বিন শীস বিন আদম [আ.]।

তাঁরা এটাও দাবি করেন যে, দর্শনশাস্ত্রের গ্রন্থগুলোতে যেসব জ্ঞানগর্ভ আলোচনা এবং নক্ষত্রসমূহের গতিবিধির বিবরণ পাওয়া যায় তা সর্বপ্রথম হজরত ইদরিস [আ.]-এর পবিত্র জবান থেকে নিঃসৃত হয়েছে। আল্লাহ তাআলার ইবাদতের জন্য ইবাদতখানা নির্মাণ, চিকিৎসা শাস্ত্রের আবিষ্কার, জমিন ও আসমানের যাবতীয় বস্তু সম্পর্কে যথোপযুক্ত কবিতার মাধ্যমে মতামত প্রকাশই তাঁর প্রাথমিক কার্যাবলির অন্তর্ভুক্ত। তিনি সর্বপ্রথম প্লাবনের সংবাদ প্রদান করেন এবং আল্লাহর বান্দাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করেন।

আরও পড়ুন: দুশ্চিন্তা দূর করার ১০ আমল

তিনি বলেছিলেন, আমাকে দেখানো হয়েছে যে তা একটি আসমানি মহামারী। তা পৃথিবীকে পানি ও আগুনের মধ্যে জড়িয়ে ধরছে। এই দৃশ্য দেখে ইদরিস [আ.] যাবতীয় জ্ঞানের ধ্বংসপ্রাপ্তি এবং শিল্প ও পেশার ধ্বংস হওয়ার ব্যাপারে শঙ্কিত হয়ে পড়লেন। তিনি মিসরে পিরামিড এবং চারদিক থেকে বন্ধু প্রকোষ্ঠ নির্মাণ করে সেগুলোতে যাবতীয় শিল্প এবং সে-সম্পর্কিত নব-আবিষ্কৃত যন্ত্রপাতিসমূহের ছবি বানালেন। তিনি সকল জ্ঞান ও শাস্ত্রের তথ্যাবলি ও বিবরণ অঙ্কিত করালেন। যাতে এসব শিল্প ও বিদ্যা চিরকালের জন্য স্থায়ী থাকে এবং ধ্বংসের থাবা তাদের কোনো ক্ষতি করতে না পারে।

সিদ্ধান্ত : দার্শনিকদের এবং বিজ্ঞান ও দর্শনের প্রাচীন গ্রন্থগুলোর এসব আজগুবি ও অনর্থ (অবশ্য কোনো কোনোটি ছাড়া) বক্তব্যগুলোর সারমর্ম এই যা হজরত ইদরিস [আ.]-এর সম্পর্কে মনগড়া কিচ্ছা-কাহিনির আকারে রচনা করা হয়েছে। এগুলো বিবেক-বুদ্ধিসম্মত নয় এবং এগুলোর সমর্থনে কোনো উদ্ধৃতিও নেই। বরং তথ্যানুসন্ধান এবং ইতিহাসের বিশুদ্ধ তত্ত্বজ্ঞান এসব মনগড়া কিচ্ছা-কাহিনির অসারতা ও ভিত্তিহীনতাকে আজ এমনভাবে প্রকাশ করে দিচ্ছে যে (নতুন তথ্য ও বিশুদ্ধ ইতিহাসকে) অস্বীকার করা বাস্তব ও সত্যকে অস্বীকার করারই নামান্তর।

যেমন, পিরামিড ও চারদিক থেকে বন্ধ প্রকোষ্ঠ-এর ইতিহাস নতুন আবিষ্কারের কল্যাণে আজ আমাদের সামনে সম্পূর্ণ উন্মোচিত এবং নতুন নতুন আবিষ্কার পিরামিড ও তার সমাধিসমূহের খোদাইলিপি ও খোদাইচিত্র, (ইলম ও নকশা) শিল্প ও কারিগরি বিদ্যার চিত্র অঙ্কনকারীদের নাম এবং বিভিন্ন যুগে সেগুলোকে বিভিন্ন স্তরে উন্নীতকারীদের নাম, তাদের দেহাবয়ব, তাদের মণি-মুক্তার ভাণ্ডার, বিভিন্ন যুগের হস্তলিপি এবং বর্ণমালার সংযোজন চোখের সামনে নিয়ে এসে দিবালোকের মতো উজ্জ্বল করে তুলেছে।

কোথায় এই প্রকৃত তথ্য ও বাস্তবতা আর কোথায় সেই ভিত্তিহীন মনগড়া রচনা। আজকাল মিনা, খোফো, মুনকারে এবং তোতামান খামেন এবং অন্যান্য বাদশাহর অবস্থাবলি সম্পর্কে কার অজানা আছে? তারপরও এসব অর্থহীন বক্তব্যগুলোকে এখানে উদ্ধৃত করা এজন্য সঙ্গত মনে হলো যে মানুষ জেনে রাখুক নবিদের সম্পর্কে বিজ্ঞানী ও দার্শনিকদের গ্রন্থাবলিতেও কেমন উদ্ভট ও অর্থহীন কিচ্ছা-কাহিনি লেখা হয়েছে। এ-সম্পর্কে নির্ভুল সত্যের পরিমাণ কেবল ততটুকুই যা কুরআনুল কারিম ও সহিহ হাদিসে উদ্ধৃত করা হয়েছে।

এন এইচ, ২০ অক্টোবর

Back to top button