পুষ্টি

ভিটামিন বি ১২ আপনার স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কেন জরুরি?

ভিটামিন বি১২ আমাদের শরীরের রক্তকণিকা তৈরি, সুস্থ এবং স্বাস্থ্যবান রাখার জন্য প্রয়োজন। শরীরের স্নায়ু যেন ঠিকভাবে কাজ করে সেক্ষেত্রে ভিটামিন বি১২ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। স্যামন ফিস, টুনা ফিস, মুরগি, ডিম, পনির, দই এবং দুধে ভিটামিন বি১২ পাওয়া যায়। কিন্তু সবচেয়ে বেশি পরিমাণে পাওয়া যায় গরুর কলিজা থেকে। ডিমে মাছ বা মাংসের মতো ভিটামিন বি১২ পাওয়া যায় না। ভেজিটেবল বা শাকসবজিতে ভিটামিন বি১২ থাকে না। ফলেও ভিটামিন বি১২ পাওয়া যায় না। তবে ফলে ফলিক এসিড পাওয়া যায়।

শাকসবজিতে যেহেতু ভিটামিন বি১২ পাওয়া যায় না তাই যারা ভেজিটেরিয়ান অর্থাৎ প্রাণিজ কোনো পণ্য খান না তাদের প্রক্রিয়াজাত গ্রেইনস বা শস্য যেমন- ফর্টিফাইড ব্রেড, ক্র্যাকারস্, সিরিয়ালস্ খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত। ভিটামিন বি১২ কোবালামিন নামেও পরিচিত। পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন।

ভিটামিন বি১২ অভাব হলে যেসব লক্ষণ দেখা যায় সেগুলো হলো-
(ক) অবশভাব: আপনি যদি হাত-পা এবং পায়ের পাতায় পিন বা সুই জাতীয় কিছু অনুভব করেন তাহলে আপনার শরীরে ভিটামিন বি১২ এর পরিমাণ কম থাকতে পারে। ভিটামিন বি১২ এর পরিমাণ কমে গেলে স্নায়ুকে আবৃত করে রাখার রক্ষাকারী আবরণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে বা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সিলিয়াক ডিজিজ, ক্রনস্ ডিজিজ এবং অন্য অন্ত্রের রোগগুলো শরীরের ভিটামিন শোষণকে কঠিন করে তোলে। আবার হার্ট বার্ণের কিছু ওষুধ সেবন করলেও এমনটি হতে পারে।

(খ) স্বাভাবিকের চেয়ে অধিকতর ঠান্ডার অনুভূতি: প্রয়োজন অনুযায়ী ভিটামিন বি১২ ছাড়া পরিমাণমতো স্বাস্থ্যবান লোহিত রক্তকণিকা থাকে না, অক্সিজেন শরীরের বিভিন্ন অংশে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। ফলে স্বাভাবিকের চেয়ে অধিকতর ঠাণ্ডা অনুভূত হতে পারে। বিশেষ করে আপনার হাত এবং পায়ের পাতায়।

(গ) ব্রেন ফগ: ভিটামিন বি১২ এর অভাবজনিত কারণে ডিপ্রেসন বা হতাশা, কনফিউশন, মেমোরি সমস্যা এবং ডিমেনসিয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। ভিটামিন বি১২ সাপ্লিমেন্ট সাধারণত নিরাপদ। প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি দৈনিক ২.৪ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন বি১২ গ্রহণ করতে পারেন। যদি আপনি প্রয়োজনের অতিরিক্ত গ্রহণ করেন তাহলে তা প্রস্রাবের সঙ্গে বের হয়ে যাবে। তারপরও অধিক ডোজ ভিটামিন বি১২ গ্রহণ করলে ডিজিনেস, মাথা ব্যথা, দুশ্চিন্তা, বমি বমি ভাব এবং বমি হতে পারে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ভিটামিন বি১২ সেবন করতে হবে।

(ঘ) দুর্বলতা: ভিটামিন বি১২ এর পরিমাণ কমে গেলে মাংসপেশির শক্তি কম হতে পারে। আপনি দুর্বলতা অনুভব করতে পারেন অথবা লাইট হেডেড অনুভূতি হতে পারে।

(ঙ) মসৃণ জিহ্বা: ভিটামিন বি১২ এর পরিমাণ কম হলে এট্রপিক গ্লসাইটিস হতে পারে। জিহ্বার ওপর ছোট বাম্পকে প্যাপিলা বলে যা নষ্ট হওয়া শুরু করে। ফলে জিহ্বাকে মসৃণ এবং গ্লসি দেখা যায়। সংক্রমণ, ওষুধজনিত কারণে এবং অন্য অবস্থায় এমনটি হতে পারে।

লক্ষণ: মুখে ঘাঁ, মাড়ি অথবা জিহ্বায় ঘাঁ অথবা আলসার দেখা যেতে পারে ভিটামিন বি১২ এর পরিমাণ কমে গেলে।
ভিটামিন বি১২ এর পরিমাণ কমে যাওয়ার কারণগুলো : (১) পুষ্টিগত কারণ (২) ক্লোরামফেনিক্যাল জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করলে ভিটামিন বি১২ কমে যেতে পারে (৩) প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর যেমন- ল্যানসোপ্রাজল এবং ওমিপ্রাজল জাতীয় ওষুধ সেবনের কারণে (৪) পেপটিক আলসার ওষুধ সিমেটিডিন এবং রেনিটিডিন জাতীয় ওষুধ (৫) ডায়াবেটিসের জন্য মেটফরমিন জাতীয় ওষুধ।

ভিটামিন বি১২ কমে যাওয়ার সার্বিক লক্ষণ: মুখে ঘাঁ, খাবারে অরুচি, অতিরিক্ত ওজন হারানো, কনস্টিপেশন হতে পারে ভিটামিন বি১২ এর পরিমাণ কমে গেলে। ভিটামিন বি১২ এর অভাব হলে রক্তস্বল্পতা দেখা দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে মেগালোব্লাস্টিক এনিমিয়া দেখা যায়। পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন বি১২ এবং ফলিক অ্যাসিডের অভাবে আপনি অল্পতেই ক্লান্তি অনুভব করতে পারেন। এ ছাড়া দুর্বলতা, ডিমেনসিয়া, কনস্টিপেশন অথবা ডিপ্রেশন অর্থাৎ হতাশা দেখা যেতে পারে। এ ছাড়া মুখে ও জিহ্বায় ক্ষত দেখা দিতে পারে।
এসব কারণেই মুখে বা জিহ্বায় কোনো আলসার বা ক্ষত দেখা দিলে যদি ভিটামিন বি১২ এর অভাবে হয়ে থাকে তবে সে ক্ষেত্রে রিবোফ্লাভিন দিয়ে কোনো কাজ হবে না। জিংক সাপ্লিমেন্ট কোনো কাজে আসবে না। শরীরে কোনো সমস্যা দেখা দিলে আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে সমস্যার উৎস এবং সমাধান। এ কারণেই মুখে এবং শরীরে ভিটামিন বি১২ এর কারণে কোনো সমস্যা দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করবেন।

এম ইউ

 

Back to top button