ঢাকা, ১১ এপ্রিল – রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালেরই কোভিড ইউনিট ভরে গেছে রোগীতে। ফলে নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরেও শয্যা মিলছে না। কোভিড রোগীর চিকিৎসায় হাসপাতালগুলোতে যত শয্যা বরাদ্দ আছে তার চেয়ে অনেক বেশি রোগী এরই মধ্যে ভর্তি আছে।
গতকাল শনিবার রাজধানীর কুর্মিটোলা জেলারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট এ হাসপাতালে কোভিড রোগীর জন্য নির্দিষ্ট শয্যা ২৫০। তবে এই হাসপাতালে বাড়তি আরো ১৫০ রোগী ভর্তি আছেন। অর্থাৎ হাসপাতালটিতে মোট কোভিড রোগী আছেন ৪০০। কোভিড রোগীর জন্য থাকা ১০টি আইসিইউ শয্যার একটিও খালি নেই।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং আইসিডিডিআরবির চিত্র আরো ভয়াবহ। জানা গেছে, রাজধানীর বেশ কিছু (পোস্তগোলা, মালিবাগ ও মৌচাক) এলাকার বাসিন্দারা আক্রান্ত রোগী নিয়ে এসব হাসপাতালে গিয়েও ভর্তি করাতে পারেননি। কয়েক হাসপাতাল ঘুরে শেষ পর্যন্ত ভর্তি হতে পেরেছেন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে।
আরও পড়ুন : রাজধানীর যে দুই এলাকা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে গতকাল দুপুরে অপেক্ষারত কয়েকজন কোভিড রোগীর স্বজনের সঙ্গে কথা হয়। এদেরই একজন রাজধানীর মালিবাগ এলাকার বাসিন্দা সাইফুল। তিনি জানান, তার মা শামসুন্নাহার (৫২) অসুস্থ। গত ৯ এপ্রিল দুপুরের পর তার পেটে প্রচন্ডদ ব্যথা ও জ্বরের প্রকোপ বাড়তে থাকে। মাকে নিয়ে প্রথমে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তির জন্য যান তিনি। সেখানে দীর্ঘক্ষণ চেষ্টা করেও ভর্তি করাতে পারেননি। সাইফুল বলেন, ‘সেখান থেকে আত্মীয়স্বজনের পরামর্শে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসি। এরই মধ্যে তিন-চার ঘণ্টা পথেই চলে গেছে। এতে মা আরো কাহিল হয়ে পড়েছেন। মায়ের শারীরিক অবস্থা দেখেই এখানকার দায়িত্বরত চিকিৎসকরা প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ভর্তি করে নেন।’
মৌচাক এলাকার বাসিন্দা তুলি তার বাবা বাদশাহ মিয়াকে (৪৮) এই হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন। তুলি জানান, ভর্তির আগে তাকেও অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘বাসার কাছেই মুগদা হাসপাতাল। সেখানে সিট খালি ছিল না। পরে গত ৮ এপ্রিল এখানে ভর্তি করাই। প্রথমে অক্সিজেন লাগলেও এখন সেটা লাগছে না। তবে শারীরিকভাবে আমার পিতা খুবই দুর্বল। জ্বরসহ কোভিডের নানা উপসর্গ রয়েছে।’
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে পাতা চেয়ারে শরীর কুঁকড়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায় রোগী মর্জিনা বেগমকে (৫৫)। তাকে ঘিরে বসে ছিলেন মেয়ে লিজাসহ পরিবারের দু-তিনজন। লিজা বলেন, ‘দুপুর দেড়টায় মাকে নিয়ে এসেছি, এখন তিনটা বাজে। এখনো প্রাথমিক চিকিৎসা শুরুর জন্য যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা, সেটি শেষ হয়নি।’ তিনি আরো বলেন, ‘এর আগে আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে নিলেও সেখানে সিট খালি না থাকায় বাধ্য হয়ে এখানে নিয়ে এসেছি। এখানে চিকিৎসকরা ভর্তি করতে রাজি হয়েছেন এটাই আমাদের জন্য স্বস্তির।’
দিন দিন কোভিড সংক্রমণ বাড়তে থাকায় ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা শহরে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল কোভিড রোগীতে পরিপূর্ণ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে ৬৫৪টি সরকারি এবং ৫০৫৫টি বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে। তবে কোভিড রোগীর চাপ ও আতঙ্কে সাধারণ রোগীরা অতি জরুরি না হলে হাসপাতালে যাচ্ছেন না। তার পরও হাসপাতালগুলোতে জায়গা নেই।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক মিলি দে বলেন, কোভিড সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এ হাসপাতালে রোগীর চাপ অনেক। হাসপাতালের ৬ তলা কেবিন বেডে ১০০টি শয্যা ও ২০টি আইসিইউ আছে। কোনোটাই খালি নেই।
রোগীদের দুর্ভোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালের চেয়ারম্যান ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের এখানে কোনো আইসিইউ বেড খালি নেই। সাধারণ বেডগুলোর কয়েকটা রেখে অন্যগুলো কোভিড রোগীদের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে সারাদেশে মোট আইসিইউ শয্যার সংখ্যা ৬০০। এর মধ্যে বর্তমানে ফাঁকা রয়েছে ১৪৮টি। আর ঢাকা মহানগরীতে আইসিইউ শয্যা রয়েছে ৩০৫টি। এর মধ্যে ফাঁকা রয়েছে ১১টি। গতকাল পর্যন্ত সারাদেশে ৫৫ লাখ ৮৩ হাজার ৫০৭ জনকে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে। আর ৮১ হাজার ৩২৩ জনকে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে সারাদেশে মোট আইসিইউ শয্যার সংখ্যা ৬০০। এর মধ্যে গতকাল ফাঁকা ছিল ১৫৫টি। আর ঢাকা মহানগরে ৩০৫ আইসিইউ শয্যার মধ্যে ফাঁকা ১৭টি। আগের দিন সারাদেশে আইসিইউ শয্যা ফাঁকা ছিল ১৪৯টি। আর ঢাকা মহানগরে ফাঁকা ছিল ১৩টি।
সূত্র : প্রতিদিনের সংবাদ
এন এইচ, ১১ এপ্রিল