জাতীয়

দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে: অর্থমন্ত্রী

ঢাকা, ০৫ এপ্রিল – করোনা পরিস্থিতির প্রভাব মোকাবিলা ও অর্থনৈতিক উত্তরণে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন এবং টিকা প্রদান কার্যক্রম বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে জাতীয় সংসদে উত্থাপিত এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়। অবশ্য চলতি অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিবি) বাস্তবায়ন আগের চেয়ে কম হওয়ার কথাও এতে উল্লেখ করা হয়েছে।

রবিবার (৪ এপ্রিল) ‘বাজেট ২০২০-২০২১: দ্বিতীয় প্রান্তিক (জুলাই-ডিসেম্বর) পর্যন্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি ও আয়-ব্যয়ের গতিধারা এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ সংক্রান্ত প্রতিবেদন’ জাতীয় সংসদে উপস্থান করা হয়। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের পক্ষে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক সংসদে এ প্রতিবেদন উত্থাপন করেন।

অর্থমন্ত্রী প্রতিবেদনে জানান, সামগ্রিকভাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে সামষ্টিক অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক ইতিবাচক অবস্থায় রয়েছে। বিশেষ করে, মাথাপিছু জাতীয় আয় বাড়ছে, প্রবাসী আয় বৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রার সন্তোষজনক রিজার্ভ, চলতি হিসাবের লেনদেনে উদ্বৃত্ত অবস্থা, মুদ্রা বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা ও মূল্যস্ফীতির নিম্নমুখী প্রবণতা নির্দেশ করে— আমরা অর্থনৈতিক ক্ষতি কাটিয়ে ওঠে সমৃদ্ধির ধারায় ফিরে আসতে সক্ষম হবো।

আরও পড়ুন : আজ থেকে শুরু হলো ৭ দিনের লকডাউন

তিনি বলেন, ‘চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে অর্থনীতির উল্লেখযোগ্য সূচকগুলোর সার্বিক ইতিবাচক অবস্থা নির্দেশ করে— আমরা অর্থনৈতিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠে সমৃদ্ধির ধারায় ফিরে আসতে সক্ষম হবো।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ের তুলনায় ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ে এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, দ্বিতীয় প্রান্তিক শেষে এনবিআর কর রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৫৩৪ কোটি টাকা, যা বিগত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৩.৯৫ শতাংশ বেশি। করোনার প্রভাব সত্ত্বেও রাজস্ব খাতে নানারকম সংস্কারমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন চলমান থাকায় রাজস্ব আদায়ের হার আশাব্যঞ্জক।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সরকারি ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৪১ হাজার ৫১৪ কোটি টাকা। বিগত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় সরকারি ব্যয় ১০.৫৮ শতাংশ কমেছে। করোনার প্রভাব দীর্ঘতর হওয়ায় চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে সরকারি ব্যয় প্রত্যাশিত মাত্রায় হয়নি। তবে সামনের দিনগুলোতে এই ব্যয় বাড়ানোর জোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, সরকারের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)-এর তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছে মোট বরাদ্দের ২৪.৩৩ শতাংশে, যা বিগত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২৭.৪৩ শতাংশ। কোভিড-১৯ এর প্রভাবে বাস্তবায়ন অগ্রগতি কিছুটা পিছিয়ে আছে।

এতে বলা হয়, চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক শেষে প্রবাস আয় হয়েছে ১৬.৯১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, অর্থাৎ বিগত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৭.৫৯ শতাংশ, বিগত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ২৫.৫২ শতাংশ। সরকার ২ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ায় ও রেমিট্যান্স পাঠানো সহজ করাসহ বিভিন্ন সংস্কারমূলক কার্যক্রম নেওয়ার কারণে প্রবাস আয়ের ক্ষেত্রে উচ্চ প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত আছে।আগামী দিনগুলোতে উচ্চ প্রবৃদ্ধির এ ধারা বজায় রাখতে সরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে।

অর্থমন্ত্রীর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা চলমান রয়েছে। রিজার্ভ রেকর্ড পরিমাণ বেড়ে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বরে দাঁড়িয়েছে ৪৩.১৭ বিলিয়ন ডলারে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, দ্বিতীয় প্রান্তিক শেষে রফতানি আয় ১৯.২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা বিগত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় মাত্র ০.৩৬ শতাংশ কম। বিগত অর্থবছরের একই সময়ে এক্ষেত্রে সংকোচনের হার ছিল ৫.৮৪ শতাংশ। বর্তমান অর্থবছরে রফতানির কিছুটা ঊর্ধ্বগতি করোনার প্রভাব কাটিয়ে রফতানি ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত বহন করে।

প্রতিবেদনে আমদানি ব্যয় ৬.৮ শতাংশ কমে তা ২৫.২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে বলে বলা হয়েছে। মূলত করোনার প্রভাবে শিল্প খাতের কাঁচামাল ও মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি কম হওয়ায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে অর্থমন্ত্রী উল্লেখ করে এটিকে সাময়িক অভিহিত করেন।

সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন
এন এইচ, ০৫ এপ্রিল

Back to top button