দক্ষিণ আমেরিকা

ব্রাজিল মানবজাতির জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে

ব্রাসিলিয়া, ১৩ মার্চ – ব্রাজিলে করোনার নতুন ধরন (স্ট্রেইন) জেঁকে বসায় দেশটিতে করোনায় মৃত্যু ও শনাক্ত যেন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। বুধবার এক দিনে দুই হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এএফপির প্রতিবেদনে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

বুধবার দেশটিতে ২ হাজার ২৮৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে মোট ২ লাখ ৬৮ হাজার ৩৭০ জনের মৃত্যু হয়। বিশ্বে মৃত্যুর দিক দিয়ে শীর্ষে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের পরই ব্রাজিলের অবস্থান।

দেশটির জীববিজ্ঞানবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফিউক্রুজের চিকিৎসক ও গবেষক মার্গারেথ ডালকলমো বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, দেশটি এখন মহামারির সবচেয়ে খারাপ সময় পার করছে। ২০২১ সাল খুব কঠিন হবে।

ফিউক্রুজের তথ্যমতে, দেশটির ২৭টি রাজ্যের ২৫টিতে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের ৮০ শতাংশের বেশি আসনে এখন রোগী। বৃহস্পতিবার করোনা ভাইরাসকে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মহামারি হিসেবে ঘোষণার বর্ষপূর্তি ছিল। বিশ্বজুড়ে ১১ কোটি ৮০ লাখ মানুষ এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। আর মৃত্যু হয়েছে ২৬ লাখের বেশি মানুষের।

বুধবার দেশটিতে নতুন করে ৭৯ হাজার ৮৭৬ জন শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো এক দিনে সর্বোচ্চ আক্রান্তের ঘটনা ঘটল। ফিউক্রুজের তথ্যমতে, রিও ডি জেনিরো, সাও পাওলোসহ ১৫টি রাজ্যের রাজধানীগুলোতে আইসিউই সুবিধার ৯০ শতাংশের বেশি আসনে এখন রোগী। আর ব্রাসিলিয়ার রাজধানীতে আইসিইউতে কোনো শয্যা খালি নেই। পাশাপাশি পোর্তো এলেগরে ও ক্যাম্পো গ্রেনেডে আইসিইউর শয্যার চেয়ে রোগী ছাড়িয়ে গেছে।

আরও পড়ুন : ব্রাজিলে একদিনে মৃত্যু ২২৮৬, সংক্রমণ ৮০ হাজার

প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবেদনে বলা হয়, অতিরিক্ত রোগীর চাপে দেশটিতে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ব্রাজিলের মহামারি বিশেষজ্ঞ পেদ্রো হালাল বিসিসির আউটসাইড সোর্স টিভি অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আমরা যদি জনগণের জন্য টিকাদান কর্মসূচি দ্রুত শুরু না করি, তাহলে তা বিশাল ট্র্যাজেডি হবে। তিনি বলেন, লোকজন মনে করছে সরকারের কাছে তারা পরিত্যক্ত।

আর ফিউক্রুজের মহামারি বিশেষজ্ঞ জেসেম অরেলানা এএফপিকে বলেন, ২০২০ সালে কোভিড-১৯–এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পরাজয় ঘটেছে। আর এই বছরের প্রথমার্ধে সেখান থেকে এক চুল উন্নতিরও কোনো সুযোগ নেই। এখন আমরা যা করতে পারি, তা হলো টিকাদান কর্মসূচির মধ্য দিয়ে যদি অলৌকিক কিছু ঘটে থাকে।

গত মঙ্গলবার দেশটিতে ৭০ হাজার রোগী শনাক্ত হয়েছে। গত সপ্তাহের তুলনায় তা ৩৯ শতাংশ বেশি। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, করোনার নতুন ধরন অনেক বেশি সংক্রামক। এটা লাতিন আমেরিকা অঞ্চল এবং এর বাইরেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। এটা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে পরিস্থিতি ভয়ংকর হবে।

ফিউক্রুজের মহামারি বিশেষজ্ঞ জেসেম ওরেলানা এএফপিকে বলেন, ‘ব্রাজিল মানবজাতির জন্য হুমকি হয়ে উঠবে।’

করোনার মহামারি শুরু থেকেই লকডাউনের বিরুদ্ধে কথা বলছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারো। করোনার ঢেউ সামলাতে লকডাউনকে পাগলামি বলেছেন বলসোনারো। জুলাই মাসে নিজেও করোনায় সংক্রমিত হন বলসোনারো। করোনায় সংক্রমিত হওয়ার পরেও তিনি মাঝেমধ্যে তার বাসভবনের বাইরে আসতেন।

এমনকি একসময় এক র‍্যালিতে তিনি মাস্কও খুলে ফেলেন। শুধু করোনাকে হেলাফেলা নয়, করোনাভাইরাসের টিকা নিয়েও নানা সময় সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বলসোনারো। সাফ জানিয়েছেন, তিনি টিকা নেবেন না। ব্যঙ্গ করে বলেছেন, টিকা কেবল তার পোষা কুকুরের জন্য। করোনার ব্যাপক সংক্রমণের পরও মাস্ক পরার তেমন কোনো কার্যকারিতা আছে বলে মনে করেন না বলসোনারো।

ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে এসে তিনি বলেন, বোকাদের আমি বলতে চাই, আমি করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে গেছি। আমার শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে গেছে। তাহলে আমি আর কেন টিকা নেব?’

তিনি বলেন, ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা নিলে মানুষ কুমিরে রূপান্তরিত হতে পারে বা নারীর দাঁড়ি গজাতে পারে। পুরুষকণ্ঠ পরিণত হতে পারে নারীকণ্ঠেও।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস ব্রাজিলের এই পরিস্থিতিকে ‘খুবই উদ্বেগজনক’ বলে উল্লেখ করেছেন। আঞ্চলিকভাবে এটি আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে সতর্ক করেন তিনি।

এখন বিরোধীরা করোনাকালে প্রেসিডেন্টের যাবতীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। এ ব্যাপারে সোচ্চার হয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট লুলা ডি সিলভা। তিনি বলেছেন, বলসোনারো একের পর এক বোকার মতো সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। গত সপ্তাহেও তাকে বলতে শোনা গেছে, করোনা নিয়ে কেউ যেন ঘ্যান ঘ্যান না করে। কত দিন আপনারা করোনার জন্য বাড়িতে থাকবেন এবং সবকিছু বন্ধ করে রাখবেন। মৃত্যুর জন্য আমরা দুঃখিত কিন্তু আমাদের একটি সমাধান প্রয়োজন। তিনি বলেছিলেন, এসব কারণ যে অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে, তা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে সৃষ্ট ক্ষতির চেয়ে বেশি হবে।

সাবেক নেতা লুলা প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তকে ‘স্টুপিড’ বলে দাবি করে তা লোকজনকে অনুসরণ না করার অনুরোধ করেন এবং টিকা নেওয়ার অনুরোধ করেন। তবে বলসোনারো এই সমালোচনাকে অযৌক্তিক বলে দাবি করেন।

সূত্র : বাংলাদেশ জার্নাল
এন এইচ, ১৩ মার্চ

Back to top button