আবিরনকে হত্যার দায়ে সৌদি গৃহকর্ত্রীর মৃত্যুদণ্ড
রিয়াদ, ১৫ ফেব্রুয়ারি – সৌদি আরবে বাংলাদেশি গৃহকর্মী আবিরন বেগমকে হত্যার দায়ে দেশটির নাগরিক গৃহকর্ত্রী আয়েশা আল জিজানীর মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছেন সৌদি আরবের আদালত। রিয়াদের একটি ফৌজদারি আদালত এই রায় দেন বলে আজ সোমবার প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মামলার প্রধান আসামি গৃহকর্ত্রী আয়েশা আল জিজানীর বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃত ও সুনির্দিষ্টভাবে হত্যাকাণ্ড সংঘটনের দায়ে আদালত ‘কেসাস’ (জানের বদলে জান) এর রায় দেন।
এতে আরও জানানো হয়, মামলার অপর আসামি গৃহকর্তা বাসেম সালেমের বিরুদ্ধে আলামত ধ্বংস, আবিরনকে বাসার বাইরে অবৈধভাবে কাজে পাঠানো ও গৃহকর্মীর চিকিৎসার ব্যবস্থা না করার অভিযোগে তিন বছর দুই মাস কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার সৌদি রিয়াল জরিমানা করেন আদালত।
অপর আসামি কিশোর ওয়ালিদ বাসেম সালেমের হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতা করার প্রমাণ পায়নি আদালত। তবে, আবিরনকে বিভিন্নভাবে অসহযোগিতা করায় তাকে সাত মাসের কিশোর সংশোধনাগারে থাকার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
রায়ের বিরুদ্ধে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করার সুযোগ আছে বলে জানানো হয়েছে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মংস্থান মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা ও মন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান জানান, রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম শাখা এ মামলার বিচারের কাজ তদারকি করেছে। প্রবাসী কর্মীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে সরকারের সব ধরনের সহযোগিতা থাকবে বলে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ জানিয়েছেন।
খুলনার পাইকগাছার মেয়ে আবিরন বেগম স্থানীয় দালালের সহযোগিতায় ঢাকার একটি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে ২০১৭ সালে সৌদি আরবে যান। ২০১৯ সালের ২৪ মার্চ তাকে হত্যা করা হয়। ওই বছরের ২৪ অক্টোবর তার মরদেহ দেশে আনা হয়।
মরদেহ যেদিন আসে ওই দিন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে একটি কমিটি গঠন করে। কমিশনের অবৈতনিক সদস্য নমিতা হালদারকে এই তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি ২৫ নভেম্বর খুলনার পাইকগাছা উপজেলার রামনগর গ্রামে আবিরনের বাবা আনছার সরদারের বাড়ি পরিদর্শন করে, এজেন্সি, মন্ত্রণালয়, দূতাবাসসহ সবার সঙ্গে কথা বলে ওই বছরের ১৫ ডিসেম্বর বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দেন।
প্রতিবেদনে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড, জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) বিভিন্ন স্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি, আবিরনকে হাত বদল করে বিদেশ পাঠানো বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সি, দালালসহ অভিযুক্তদের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরে দায়ীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির সুপারিশ করা হয়।