মিডিয়া

বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা উন্নয়নশীল দেশের ক্ষেত্রে উদাহরণ

ঢাকা, ০৩ মে – তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও বিস্তৃতি উন্নয়নশীল দেশের ক্ষেত্রে একটি উদাহরণ। আমরা মুক্ত গণমাধ্যমে বিশ্বাস করি, গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। প্রতিবেশী অনেক দেশেই গণমাধ্যমের এ রকম বিস্তৃতি ঘটেনি এবং এমন অবাধ স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে কাজ করে না।

একই সঙ্গে তিনি বলেন, স্বাধীনতার সঙ্গে দায়িত্বশীলতাকে যোগ করতে হয়, তাহলেই গণমাধ্যম সঠিকভাবে পরিচালিত হয়। আর যদি স্বাধীনতার সঙ্গে দায়িত্বশীলতা না থাকে তাহলে অনেক ক্ষেত্রে সমাজের ক্ষতি হয়, রাষ্ট্রেরও ক্ষতি হয়।

বুধবার (৩ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম’ দিবস উপলক্ষে ‘মানবাধিকার সংরক্ষণ ও গণতন্ত্র সম্প্রসারণে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

সভায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে দৈনিক যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম, দৈনিক সমকাল সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, জাতীয় প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক মো. আইয়ুব ভুঁইয়া প্রমুখ অংশ নিয়ে দেশে গণমাধ্যমের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ পথযাত্রা নিয়ে কথা বলেন।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। গণতন্ত্র এবং গণমাধ্যম একে অপরের পরিপূরক। গণমাধ্যম ব্যতিরেকে গণতন্ত্র হতে পারে না। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বচ্ছতা ব্যতিরেকে গণতন্ত্র কখনো পথ চলতে পারে না, গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা টিকে থাকতে পারে না। সে কারণে গণতন্ত্রকে সংহত করতে হলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা অবশ্যই প্রয়োজন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার গণতন্ত্র ও বহুমাত্রিক সমাজ ব্যবস্থার বিকাশ, ন্যায়ভিত্তিক-বিতর্কভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা কায়েম করার লক্ষ্যে গণমাধ্যমের বিস্তৃতি এবং স্বাধীনতার ওপর জোর দিয়েছে, উল্লেখ করে পরিসংখ্যান দিয়ে ড. হাছান বলেন, গত ১৪ বছরে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনসহ সম্প্রচারে আসা টেলিভিশন চ্যানেলের সংখ্যা ৩৯টি, খুব সহসা আরও কয়েকটি সম্প্রচারে আসবে। বেসরকারি টেলিভিশন এবং বেতারের যাত্রাও শুরু হয়েছিল জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে। আমরা যখন ২০০৯ সালে সরকার গঠন করি তখন টিভি চ্যানেল ছিল ১০টি আর দৈনিক পত্রিকা ছিল সাড়ে ৪শ’, যা এখন ১২৬০। ২২টি বেসরকারি এফএম রেডিও’র লাইসেন্স দেওয়া আছে, ১২টি সম্প্রচারে আছে, কয়েক ডজন কমিউনিটি রেডিও’র লাইসেন্স দেওয়া আছে, যার বেশিরভাগই সম্প্রচারে আছে। অনলাইন গণমাধ্যম কয়শো কিংবা কয় হাজার সেটি একটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যাপার। এরই মধ্যে দুই শতাধিক অনলাইন গণমাধ্যমের রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়েছে, পত্রিকা এবং টেলিভিশনের অনলাইনসহ সেটা আরও অনেক বেশি।

তিনি বলেন, আজকে হাজার হাজার সাংবাদিক গণমাধ্যমে কাজ করছেন। বিদগ্ধ সাংবাদিকরা তাদের ‘ট্যালেন্ট’ প্রকাশের সুযোগ পেতেন না, যদি গণমাধ্যমের এ রকম ব্যাপক বিস্তৃতি না ঘটতো। আমাদের আশেপাশের দেশে গণমাধ্যমের এ রকম বিস্তৃতি ঘটেনি এবং সাংবাদিকরা এ রকম অবাধ স্বাধীনতার মধ্যে কাজ করতে পারেন না। কয়েকটি ছাড়া প্রায় সব টেলিভিশন আওয়ামী লীগ সরকারের হাত ধরে অনুমোদন পেয়েছে। সব টেলিভিশনে প্রতিদিন রাতের বেলায় টক শো’তে সরকারের সমালোচনা হয়। প্রকাশিত সংবাদেও সরকারের ব্যাপক আলোচনা হয়। এক্ষেত্রে সরকার কখনো হস্তক্ষেপ করে না। কারণ, আমরা মুক্ত গণমাধ্যমে বিশ্বাস করি, গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি।

হাছান মাহমুদ বলেন, একটি জেলেপল্লি থেকে কীভাবে সিঙ্গাপুর উন্নত দেশে রূপান্তরিত হলো। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত প্রায় সব দেশের চেয়ে সিঙ্গাপুরের মাথাপিছু আয় বেশি। সিঙ্গাপুরের চারটি চ্যানেল রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পত্রিকাও রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত। থাইল্যান্ডে সব টেলিভিশন চ্যানেল ফিড একটা জায়গা থেকে আপলিংক করা হয়। কোনো কনটেন্ট পছন্দনীয় না হলে তা বন্ধ করে বিজ্ঞাপন বা অন্য কিছু দেওয়া হয়। আমাদের দেশে তা নয়। মালয়েশিয়ার ছেলেমেয়েরা আশির দশক পর্যন্ত আমাদের দেশে পড়তে আসতো। এখন আমাদের ছেলেমেয়েরা সেখানে যাচ্ছে। তারা কীভাবে এ জায়গায় এলো সেটি একটি বিস্ময়। সেখানে গণমাধ্যমের এতো স্বাধীনতা নেই, বিস্তৃতিও নেই।

ইউরোপের দেশগুলোর উদাহরণ দিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাজ্যে ভুল বা অসত্য সংবাদ পরিবেশন কিংবা কারও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা নষ্ট হওয়ার দায়ে গণমাধ্যমকে প্রতিনিয়ত মোটা অংকের জরিমানা গুনতে হয়। বিবিসিতে একজন এমপির বিরুদ্ধে ভুল সংবাদ পরিবেশিত হওয়ার কারণে পুরো বিবিসি টিমকে পদত্যাগ করতে হয়েছে। ১৩০ বছরের পুরনো পত্রিকা ‘নিউজ অব দ্যা ওয়ার্ল্ড’ একটি ভুল অসত্য সংবাদ পরিবেশনের কারণে কয়েক মিলিয়ন পাউন্ড জরিমানা পরিশোধ করতে গিয়ে দেউলিয়া হয়ে বন্ধ হয়ে গেছে। আমাদের দেশে এ ধরনের ঘটনা কখনো ঘটেনি। কন্টিনেন্টাল ইউরোপেও যুক্তরাজ্যের মতোই ভুল বা অসত্য সংবাদ পরিবেশনের কারণে গণমাধ্যমকে মোটা অংকের জরিমানা গুনতে হয়, শাস্তি পেতে হয়।

এ সময় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমি সবসময় বলেছি আজকেও বলবো, সাংবাদিক, গৃহিণী, চাকরিজীবী, কৃষক অর্থাৎ সর্বক্ষেত্রে সব মানুষকে ডিজিটাল নিরাপত্তা দেওয়ার জন্যই এ আইন। অনেক সাংবাদিকও এ আইনে ডিজিটাল নিরাপত্তার জন্য অপসাংবাদিকতার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। আজকের আলোচনায় সাংবাদিকরাও বলেছেন, এ আইনের প্রয়োজন রয়েছে। এ ধরনের আইন আজকে পৃথিবীর প্রায় সব দেশে করেছে। অনেক দেশে এ আইন আমাদের চেয়ে কঠোর।

তিনি বলেন, তবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগ বন্ধ হওয়া অবশ্যই প্রয়োজন। কারণে-অকারণে মামলা ঠুকে দেওয়া, সঙ্গে সঙ্গে আবার গ্রেফতার করা- এগুলো অবশ্যই বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। এ ব্যাপারে আমি একমত। কোনো একটি গোষ্ঠীকে কোনো আইন থেকে বাদ দেওয়া সমীচীন নয়, কিন্তু কারও ওপর যেন অপপ্রয়োগ না হয় তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। আগের তুলনায় অপপ্রয়োগ কমেছে, এটি শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসতে হবে।

সূত্র: জাগো নিউজ
আইএ/ ০৩ মে ২০২৩

Back to top button