ক্রিকেট

এবারও ভারতকে কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেবে বাংলাদেশ?

ঢাকা, ০৩ ডিসেম্বর – অন্য সময় হলে হইচই পড়ে যেতো। সাজ সাজ রব উঠতো চারদিকে। গোটা দেশ মেতে উঠতো ক্রিকেট উৎসবে। কিন্তু এবার তা নেই এখন। কী করে থাকবে? বিশ্বের অন্য দেশের মতো খেলাপ্রেমী বাংলাদেশের মানুষও যে মেতে আছে বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে!

অঘটন, চমক আর নাটকীয়তায় পরিপূর্ণ বিশ্বকাপ ফুটবল এরইমধ্যে দারুণ সাড়া ফেলেছে। স্বল্প পরিচিতির তুলনামূলক দুর্বল দলের কাছে আর্জেন্টিনা, জার্মানি আর ব্রাজিলের মতো বিশ্বসেরা দলগুলোর পরাজয়ে রীতিমতো চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে সারা বিশ্বে।

এদিকে, গ্রুপ পর্বে খেলা শেষে শুরু হয়েছে নকআউট পর্ব। চলছে সেরা ষোলোর লড়াই। শেষ আটে কোন কোন দল থাকবে? তা নির্ধারণী লড়াই চলছে। মোটকথা সর্বোচ্চ উত্তেজনা আর আকর্ষণে বিশ্বকাপ ফুটবল। এমন অবস্থায় রাত পোহালে শুরু হবে বাংলাদেশ আর ভারতের তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ।

অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে তাই এ সিরিজ নিয়ে উৎসাহ, উদ্দীপনা কম। তারপরও মিরপুরে ৪ ডিসেম্বর প্রথম ম্যাচের সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। টিকিট কাউন্টারে সব টিকিট শেষ। কারণ একটাই তুলনামূলক সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে ভালো খেলে এবং প্রায় সমানতালে লড়াই করার বেশ রেকর্ড আছে বাংলাদেশের।

ভক্ত ও সমর্থকদের প্রত্যাশা এবারও সেই ধারা অব্যাহত থাকবে এবং ঘরের মাঠে সাত বছর আগে ভারতকে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ হারানো বাংলাদেশ এবারও কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।

রাত পোহালে বাংলাদেশ আর ভারতের প্রথম ওয়ানডে। রোববার (৩ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টায় শুরু হবে প্রথম ম্যাচ। শক্তি ও সামর্থ্যের ফারাক আছে বেশ। বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, লোকেশ রাহুল, হার্দিক পান্ডিয়ার মতো বিশ্বসেরা পারফরমারের দল ভারত অনেক শক্তিশালী।

দলটির ট্র্যাক রেকর্ডও অনেক সমৃদ্ধ। বাংলাদেশের সঙ্গে জয়ের পাল্লাও অনেক ভারি। ৩৬ বারের মোকাবিলায় ভারতের জয় ৩০টিতে। বাংলাদেশ জিতেছে পাঁচবার। একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছে।

ইতিহাস, পরিসংখ্যান, শক্তি-সামর্থ্য আর অর্জন, কৃতিত্ব ও সাফল্যের মানদণ্ডে ভারত ফেবারিট। টাইগার ক্যাপ্টেন লিটন দাসও মানছেন ভারত বেটার টিম। কিন্তু তারও মনে হয়, বাংলাদেশ আর ভারত ক্রিকেট লড়াইয়ে এক অন্যরকম প্রতিদ্বন্দ্বিতার বাতাবরণ তৈরি হয়েছে।

তামিম ইকবালের ইনজুরিজনিত অনুপস্থিতিতে নেতৃত্ব পাওয়া লিটনের কণ্ঠে দৃঢ় সংকল্প, ‘ভারত ভালো দল। তাদের খ্যাতি এবং ফর্ম দুইই আছে। তবে আমরা ইদানিং ভারতের বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রিকেট খেলি। তাই আমার বিশ্বাস ভারত আর আমাদের আন্ডারডগ ভাবে না। আমার মনে হয় এটাই বড় ব্যাপার।’

মূলত ২০১৫ সালের বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বাংলাদেশ আর ভারত ম্যাচ পেয়েছে ভিন্নমাত্রা। একটা অন্যরকম প্রাণচাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে।

মাঠের লড়াইয়ে ভারতের জয়ের পাল্লা বেশি থাকলেও বাংলাদেশও প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলেছে বেশ। কয়েকটি ম্যাচে বেশ হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে। বাংলাদেশের জয়ের অবস্থাও তৈরি হয়েছিল। মাঠের সিদ্ধান্ত ও ঘটনাও কিছু উত্তেজনা ছড়িয়েছে।

মোটকথা ভারত, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া আর ইংল্যান্ডের মত চিরপ্রতিদ্বন্দ্বির লড়াই হিসেবে প্রতিষ্ঠিত না হলেও অনেক কারণেই ভারত আর বাংলাদেশ ক্রিকেট ম্যাচে একটা বাড়তি প্রতিদ্বন্দ্বিতা পরশ লেগেছে ।

খোদ ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মাও স্বীকার করেছেন, ‘হ্যাঁ, ভারত ও বাংলাদেশ ম্যাচে একটা অন্যরকম প্রতিদ্বদ্বিতা তৈরি হয়েছে।’

বাংলাদেশ তো ভারতের সমমানেরও শক্তির দল না। তারপরও কী কারণে সে দেশের সঙ্গে একটা লড়াই, উত্তেজনা তথা প্রতিদ্বদ্বিতার বাতাবরণ তৈরি হয়েছে?

তার কারণ হিসেবে ভারত অধিনায়ক মনে করেন, ‘বাংলাদেশ গত ৭-৮ বছরে একটা অন্যরকম দলে পরিণত হয়েছে। দিনে দিনে বাংলাদেশ নিজেদেরকে একটা চ্যালেঞ্জিং জায়গায় নিয়ে গেছে। আমাদের জেতাটা সহজ হচ্ছে না। কষ্ট করে ঘাম ঝরাতে হচ্ছে। আমরা নিকট অতীতে যতগুলো ম্যাচ খেলেছি, তার প্রায় সবটাতেই প্রতিদ্বদ্বিতা হয়েছে। বাংলাদেশ প্রায় সমানতালে লড়াই করেছে। এমনকি টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটেও আমাদের জিততে খুব কষ্ট হয়েছে।’

তিনি বলেন, আমার খুব মনে আছে, ২০১৫ সালে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে ওয়ানডে সিরিজ হেরে গেছি। আমরা জানি, গত কয়েকবছরে বাংলাদেশ অনেক উন্নতি করেছে। বিশ্বাস করি আমাদের জেতা সহজ হবে না। বাংলাদেশের মাটিতে বাংলাদেশকে হারাতে হলে আমাদের নিজেদের সেরাটা দিয়েই জিততে হবে।’

দুই পক্ষের অধিনায়কের কথায় পরিষ্কার প্রতিদ্বদ্বিতার আভাস। দেখা যাক প্রধান ব্যাটিং স্তম্ভ তামিম আর এক্সপ্রেস বোলার তাসকিন ছাড়া বাংলাদেশ কতটা প্রতিদ্বদ্বিতা গড়ে তুলতে পারে?

সূত্র: জাগোনিউজ
আইএ/ ০৩ ডিসেম্বর ২০২২

Back to top button