অপরাধ

হুমায়ুনের কবিরের জাল টাকারr ‘টাঁকশাল’

ঢাকা, ২০ অক্টোবর- হুমায়ুন কবিরের বয়স ৫০ বছরের কাছাকাছি। এক সময় কমিশনের বিনিময়ে জাল টাকার বাণিজ্য করতেন। এখন তিনি নিজেই টাকা তৈরির ‘টাঁকশালের’ মালিক। এ কাজে তার বেতনভুক্ত কর্মচারীও রয়েছে। কিন্তু তার টাঁকশালে তৈরি সবই জাল টাকা। জাল টাকা তৈরির অন্ধকার রাজ্যে তাকে ‘গুরু’ মানেন সবাই। সারাবছরই টুকটাক জাল নোট তৈরি হলেও ঈদ, পূজা, নির্বাচনসহ নানা উৎসবে ব্যস্ত হয়ে ওঠে তার কারখানা। দুর্গাপূজা উৎসব সামনে রেখে ফের কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছিল হুমায়ুনের ‘টাঁকশাল’। তার আগেই দলবল নিয়ে গোয়েন্দা জালে আটকে গেছেন তিনি।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) রাজধানীর মোহাম্মদপুরের নূরজাহান রোডে হুমায়ুনের জাল টাকার কারখানার সন্ধান পেয়েছে। রোববার ডিবির গুলশান বিভাগের একটি দল ওই কারখানায় অভিযান চালিয়ে হুমায়ুনসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে। সেখানে তল্লাশি চালিয়ে ৪৯ লাখ টাকার জাল নোট জব্দ করা হয়। নিরাপত্তা সুতা, বিশেষ ধরনের কাগজ আর কালিসহ জব্দ করা সরঞ্জামে তৈরি করা যেত আরও অন্তত চার কোটি টাকার জাল নোট।

আরও পড়ুন: রাজধানীতে ময়লার বালতিতে মিলল কন্যা শিশুর মরদেহ

ডিবি কর্মকর্তারা বলছেন, এ নিয়ে হুমায়ুনকে সপ্তমবারের মতো গ্রেপ্তার করা হলো। এর আগে র‌্যাব, ডিবি ও থানা পুলিশের হাতে বারবার গ্রেপ্তার হয়েছেন তিনি। সর্বশেষ দেড় বছর আগে কারাগার থেকে বেরিয়ে নূরজাহান রোডে এই জাল টাকার টাঁকশাল গড়ে তোলেন তিনি। এবারের অভিযানে হুমায়ুনের সঙ্গে জামাল উদ্দিন (৪২), তাসলিমা আক্তার (৩০) ও সুখী আক্তারকে (৩০) গ্রেপ্তার করে ডিবি। তারা হুমায়ুনের কারখানার কর্মচারী। জানা গেছে, হুমায়ুনের বিরুদ্ধে জাল টাকার কারবারের অভিযোগে অন্তত ১০টি মামলা রয়েছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের ডিসি মশিউর রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন, হুমায়ুনের চক্র দুর্গাপূজা সামনে রেখে সারাদেশে অন্তত পাঁচ কোটি টাকার জাল নোট ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টায় ছিল। কিন্তু গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে চক্রটিকে আগেই গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়।

ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, টাকার লেনদেন বেড়ে গেলেই জাল নোট কারবারিরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। ঢাকায় এই জাল নোট তৈরি হলেও খুলনা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশালসহ দেশের বড় বড় নগরগুলোতে নিজেদের এজেন্টদের মাধ্যমে জাল নোট ছড়ানো হয়। এ জন্য দেশজুড়েই হুমায়ুনের জাল নোট বিক্রির নেটওয়ার্ক রয়েছে।
ডিবি হেফাজতে হুমায়ুন কবির জানান, তিনি শুধু জাল নোট তৈরির কাজটাই শিখেছেন। এ জন্য বারবার ধরা পড়লেও নানা কৌশলে কারাগার থেকে বেরিয়ে একই কাজ করে চলেছেন। তার উৎপাদিত এক লাখ টাকার জাল নোট ১০ থেকে ১১ হাজার টাকায় এজেন্টদের কাছে বিক্রি করেন। তৃণমূল পর্যায়ে এক লাখ টাকার জাল নোট ২০ থেকে ২২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। খুচরা কারবারিরা এসব নোট আসল নোটের বান্ডিলে ঢুকিয়ে দেয়।

ডিবির এক কর্মকর্তা জানান, সাধারণ কারও হাতে জাল নোট পড়লে আইনি ঝামেলা এড়াতে তিনি বিষয়টি গোপন করে নোটটি ধ্বংস করে ফেলেন। এ জন্য বাজারে অসংখ্য জাল নোট থাকলেও তা বোঝা যায় না। তা ছাড়া চক্রগুলো এমনভাবে এই নোট তৈরি করে যে সাধারণত প্রথম দেখায় আসল-নকল বোঝা যায় না। তাই বড় অঙ্কের নোট ভালোভাবে যাচাই না করলে প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

ডিবি জানায়, গ্রেপ্তার তাসলিমা আক্তারের স্বামী সাইফুল ইসলাম জাল নোট তৈরি করতে গিয়ে গত জানুয়ারিতে র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছে। হুমায়ুনের ভাই কাওসারও জাল নোটের চিহ্নিত কারবারি। বর্তমানে সেও কারাগারে।

সূত্র: সমকাল

আর/০৮:১৪/২০ অক্টোবর

Back to top button