নমনীয় হেফাজত সমঝোতামুখী
ঢাকা, ২১ এপ্রিল – দেশের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক তান্ডব চালিয়ে এখন ধরপাকড়ের মুখে অনেকটাই নমনীয় কওমি মাদরাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। সংগঠনের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী গত সোমবার এক ভিডিও বার্তায় নেতাকর্মীদের প্রতি জলালাও-পোড়াওসহ কোনো রকম সংঘাতে না জড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, ‘কোনো সংঘাতে যাবেন না। কোনো জ্বালাও পোড়াও করবেন না। হেফাজতে ইসলাম ভাঙচুর আর জ্বালাও-পোড়াওয়ে বিশ্বাস করে না।’ তিনি দাবি করেছেন, হেফাজত দেশের বড় একটি অরাজনৈতিক দল। কাউকে ক্ষমতায় বসানো বা ক্ষমতা থেকে নামানো হেফাজতের উদ্দেশ্য নয়। কোনো পার্টি বা দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন হেফাজতে ইসলামের উদ্দেশ্য নয়।
বাবুনগরী অবশ্য দাবি করেন, মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদের নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে। হেফাজতের একটি প্রতিনিধিদলও গত সোমবার মধ্যরাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ‘ঢালাও গ্রেপ্তার’ বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে। ওই সাক্ষাতে অংশ নেওয়া একজন হেফাজত নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসব কথা জানিয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে সহিংসতার ঘটনাগুলোর ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ছাড় না দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে।
হেফাজতের বেশ কয়েকজন নেতা বলছেন, তাদের সংগঠনে নেতৃস্থানীয় মুরব্বি ও অরাজনৈতিক নেতাদের মাধ্যমে সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ খোঁজা হচ্ছে। গত ২৬ মার্চ থেকে তিন দিন ধরে হেফাজতের কর্মসূচি ঘিরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হাটহাজারীসহ বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক সহিংসতা হয়। সেসব সহিংসতার ঘটনায় ১০০-এর মতো মামলা হয়েছে। এ ছাড়া ২০১৩ সালে হেফাজতের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচিতে যে সহিংসতা হয়েছিল, সেই মামলাগুলোও এখন সামনে আনা হয়েছে।
আরও পড়ুন : আজ থেকে চলবে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট
রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের আগে দিনের বেলায় হেফাজতের নেতারা পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। যদিও কোনো পক্ষ থেকেই বৈঠকগুলোর বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করা হয়নি। তবে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব নূরুল ইসলাম জেহাদি গত সোমবার বিবিসিকে বলেছেন, পুরো পরিস্থিতি হেফাজতকে সংকটে ফেলেছে। এখন তারা গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের জন্য আইনি লড়াই চালাবেন এবং একইসঙ্গে তারা আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় নেতা বেশ কয়েকজন গ্রেপ্তার হয়ে গেছে। অনেককে তো ২০১৩ সালের মামলার আসামি বানাইছে। অনেককে বর্তমান মামলায় আসামি করা হয়েছে। সংকট হয়ে গেছে। এখন এগুলো আইনগতভাবে মোকাবিলা করার চেষ্টা চলতেছে।’
নুরুল ইসলাম জেহাদি বলেন, আলোচনার মাধ্যমেই সমাধানের আশা তারা করছেন। তিনি আরো বলেন, ‘সার্বিক বিষয়ে পরামর্শের মাধ্যমে একটা সুরাহা হবে বলে আশা করি। পরস্পরের মধ্যে আলোচনা করে যদি একটা ভুল বোঝাবুঝির নিরসন হয়, সেটাতো খারাপ না।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে নূরুল ইসলাম জেহাদির নেতৃত্বে হেফাজতের প্রতিনিধিদলে ছিলেন সদ্য আটক হওয়া হেফাজত নেতা মামুনুল হকের ভাই মাহফুজুল হকও।
ওই বৈঠকের পর প্রতিনিধিদলটির একাধিক সদস্য নিশ্চিত করেছেন যে তাদের আলোচনায় মূলত তিনটি বিষয় এসেছে ঢালাও গ্রেপ্তার বন্ধ, সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত ঘটনাগুলোর তদন্ত এবং কওমি মাদরাসা খুলে দেওয়া। তারা গ্রেপ্তার হওয়া নেতাকর্মীদের মুক্তিও দাবি করেন।
গত কয়েকদিনে হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক এবং সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদীসহ বেশ কিছু নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।
সোমবার মধ্যরাতের বৈঠকে হেফাজত নেতারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেন, ‘এভাবে ঢালাও গ্রেপ্তারের কারণে ভুল বোঝাবুঝির’ পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের জানিয়েছেন যে কোনো ঢালাও গ্রেপ্তার হচ্ছে না বরং সাম্প্রতিক সময়ে যেসব সহিংসতা ঘটেছে সেগুলোর ভিডিও ফুটেজ দেখে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা হচ্ছে।
হেফাজত নেতারা বলছেন, তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ঘটনাগুলোর সঠিক তদন্তের অনুরোধ করেছেন এবং একইসঙ্গে বলেছেন যে হেফাজত সরকারের প্রতিপক্ষ নয়, এমনকি তারা কোনো রাজনৈতিক সংগঠনও নয়।
তারা বলছেন, তারা আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান চাইছেন এটি তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন।
সূত্র : প্রতিদিনের সংবাদ
এন এইচ, ২১ এপ্রিল