করোনা টিকার প্রথম ৫৬,৯৯,০৪২ ও দ্বিতীয় ডোজ ১১,৫১,৭৬৭ জন নিয়েছেন
ঢাকা, ১৮ এপ্রিল – দেশে নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়লেও এর প্রতিষেধক বা টিকার জোগান বাড়ছে না। গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ৬ ঘণ্টায় দেশে কোভিডপ্রতিরোধী টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন ১২ হাজার ১৫৭ জন। এ নিয়ে দেশে ৫৬ লাখ ৯৯ হাজার ৪২ জন প্রথম ডোজ টিকা নিলেন। গত রাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গতকাল দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিয়েছেন ২ লাখ ২১ হাজার ৬১৬ জন। এ পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজ নিলেন ১১ লাখ ৫১ হাজার ৭৬৭ জন। গত ৮ এপ্রিল বৃহস্পতিবার শুরু হয় দ্বিতীয় ডোজ টিকাদান।
গতকাল যারা টিকা নিয়েছেন তাদের মধ্যে মাত্র চারজনের সামান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (জ্বর, টিকা দেওয়া স্থান লাল হওয়া ইত্যাদি) দেখা গেছে। গতকাল পর্যন্ত যারা টিকা নিয়েছেন তাদের মধ্যে ৯৬৭ জনের মাথাব্যথা, গলাব্যথা, হালকা জ্বরের মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
প্রথম ডোজ টিকা গ্রহীতার সংখ্যা কমতে কমতে ১৩ হাজারে নেমে এসেছিল গত ৭ এপ্রিল। আগের দিন ছিল ১৬ হাজারের ঘরে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গত বৃহস্পতিবার দেশে কোভিডপ্রতিরোধী টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন ১০ হাজার ৫৭২ জন। এর আগের দিন বাংলা নববর্ষের ছুটির কারণে বন্ধ ছিল টিকাদান কার্যক্রম। গত মঙ্গলবার প্রথম ডোজ নেন ২৬ হাজার ৭৫০ জন। গত ১৩ এপ্রিল সোমবার নেন ২২ হাজার ৪৫৬ জন। গত ১২ এপ্রিল রবিবার প্রথম ডোজ নিয়েছিলেন ২৩ হাজার ৬৫৭ জন। গত ১০ এপ্রিল নিয়েছিলেন ১৯ হাজার ৯৪৩ জন। এর আগে ৭ এপ্রিল প্রথম ডোজ নিয়েছিলেন ১৩ হাজার ২৮ জন। গত ৬ এপ্রিল নিয়েছিলেন ১৬ হাজার ১৮১ জন। গত ৫ এপ্রিল নিয়েছিলেন ৪১ হাজার ৩২২ জন। গত ৪ এপ্রিল নিয়েছিলেন ৪৫ হাজার ৫৩৮ জন। গত ৩ এপ্রিল নিয়েছিলেন ৩৯ হাজার ৮৪৩ জন। গত ১ এপ্রিল নিয়েছিলেন ৪২ হাজার ৩৬০ জন। আগের দিন নিয়েছিলেন ৫০ হাজার ৭৫২ জন। সরকারি ছুটির কারণে ৩০ মার্চ বন্ধ ছিল টিকাদান কার্যক্রম। এর আগের দিন টিকা নেন ৫৬ হাজার ৪৩১ জন। ২৮ মার্চ নিয়েছিলেন ৫৮ হাজার ৪২৪ জন। ২৭ মার্চ নিয়েছিলেন ৬৫ হাজার ৩৬৮ জন।
আরও পড়ুন : অবশেষে বিমানের ফ্লাইটের অনুমতি পাওয়া গেছে ৩ রুটে
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য মতে, গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করে গতকাল পর্যন্ত দেশে কোভিড-১৯ প্রতিরোধী টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন যারা, তাদের মধ্যে পুরুষ ৩৫ লাখ ৩৩ হাজার ৬৫৫ এবং নারী ২১ লাখ ৬৫ হাজার ৩৮৭ জন। গতকাল বিকাল পর্যন্ত টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন ৭১ লাখ ৪ হাজার ৫৬৩ জন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, দেশে গতকাল যারা প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন তাদের মধ্যে পুরুষ ৭ হাজার ৬৬৬ এবং নারী ৪ হাজার ৪৯১ জন। গতকাল প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন ঢাকা বিভাগে ৪ হাজার ৩৭৭ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৬৩৪, চট্টগ্রাম বিভাগে ২ হাজার ১৮০, রাজশাহী বিভাগে ১ হাজার ৩৫৫, রংপুর বিভাগে ১ হাজার ১৩৮, খুলনা বিভাগে ১ হাজার ৪৫২, বরিশাল বিভাগে ৪৮৮ এবং সিলেট বিভাগে ৫৩৩ জন।
ঢাকা বিভাগের মধ্যে ঢাকা মহানগরে গতকাল প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন ২ হাজার ৩৯১ জন। দেশে গতকাল পর্যন্ত যতজন প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন তাদের মধ্যে আছেন ঢাকা বিভাগে ১৭ লাখ ৬৫ হাজার ৪৪৯ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ২ লাখ ৮৩ হাজার ৪২৫, চট্টগ্রাম বিভাগে ১১ লাখ ৫৩ হাজার ১৬, রাজশাহী বিভাগে ৬ লাখ ৫২ হাজার ৮৩০, রংপুর বিভাগে ৫ লাখ ৮৫ হাজার ৩৪১, খুলনা বিভাগে ৭ লাখ ১৭ হাজার ৯৫৪, বরিশাল বিভাগে ২ লাখ ৪৫ হাজার ২৯৪ এবং সিলেট বিভাগে ২ লাখ ৯৫ হাজার ৭৩৩ জন। ঢাকা বিভাগের মধ্যে ঢাকা মহানগরে টিকা নিয়েছেন ৮ লাখ ৯৬ হাজার ৯০৯ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত ১ থেকে ৬ মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন টিকা নেন যথাক্রমে ১ লাখ ১৬ হাজার ৩০০ জন, ১ লাখ ১৪ হাজার ৬৮০, ১ লাখ ১৮ হাজার ৬৫৪, ১ লাখ ২১ হাজার ১০ এবং ১ লাখ ৯৮৩ জন। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি টিকা নিয়েছিলেন ১ লাখ ৮২ হাজার ৮৯৬ জন। পরদিন নিয়েছিলেন ১ লাখ ৮১ হাজার ৯৮৫ জন। ২৫ ফেব্রুয়ারি নেন ১ লাখ ৮১ হাজার ৪৩৯ জন। এরপর থেকে টিকা নেওয়ার হার আরো কমতে থাকে। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি টিকা নেন ১ লাখ ৩৩ হাজার ৮৩৩ জন। ২৮ ফেব্রুয়ারি নেন ১ লাখ ২৫ হাজার ৭৫২ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা শুরুর দিকে বলেছিলেন, সরকার প্রতিদিন ৩ লাখ ৬০ হাজার মানুষকে টিকা দিতে প্রস্তুত। প্রথম মাসে প্রায় ৬০ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল সরকার। পরে এ সংখ্যা কমিয়ে ৩৫ লাখ ধরা হয়েছে।
গত ২৭ জানুয়ারি দেশে প্রথম কোভিডপ্রতিরোধী টিকা নেন এক নার্স। প্রথম দিন টিকা দেওয়া হয় বিশিষ্ট ২৬ নাগরিককে। পরদিন রাজধানীর পাঁচটি হাসপাতালে ৫৪১ ব্যক্তিকে টিকা দেওয়া হয়। আর ৭ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে শুরু হয় কোভিডপ্রতিরোধী গণটিকাদান কার্যক্রম। ওইদিন সারা দেশে টিকা নিয়েছিলেন ৩১ হাজার ১৬০ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ২৩ হাজার ৮৫৭ এবং নারী ৭ হাজার ৩০৩ জন।
বাংলাদেশে দেওয়া হচ্ছে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কোভিশিল্ড। সবাইকে এ টিকার দুটি করে ডোজ নিতে হবে। সরকারের কেনা এ টিকার তিন কোটি ডোজের মধ্যে প্রথম ৫০ লাখ ডোজ গত ফেব্রুয়ারি মাসে আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। এ ছাড়া ভারতের উপহার হিসেবে আরো ২০ লাখ ডোজ অক্সফোর্ডের টিকা পেয়েছে বাংলাদেশ। পরে দ্বিতীয় চালানে এসেছে আরো ২০ লাখ ডোজ। সবশেষ ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরকালে ১২ লাখ ডোজ টিকা উপহার হিসেবে পাওয়া গেছে।
সূত্র : প্রতিদিনের সংবাদ
এন এইচ, ১৮ এপ্রিল