জাতীয়

ডিজিটাল আইন বাতিলের দাবি টিআইবির

ঢাকা, ২৭ ফেব্রুয়ারি – ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ও নিবর্তনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের জোর দাবি জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নিবর্তনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিতর্কিত যেসব ধারায় মুশতাকসহ অনেকের বিরুদ্ধে ‘রাষ্ট্র ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করিবার অভিপ্রায়ে অপপ্রচারের’ যেসব অভিযোগের কথা মামলার এজহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ব্যক্তি বিশেষে তার অপব্যবহার ও অপব্যাখ্যার একটি ন্যক্কারজনক দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে বলে মন্তব্য করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।

তিনি বলেন, একই মামলায় অন্য অভিযুক্তরা জামিন পেলেও ছয়বার আবেদন করা সত্ত্বেও মুশতাক আহমেদের জামিন না হওয়া, প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। তার চেয়েও বড় বিষয় হচ্ছে, রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি রক্ষার নামে দিনের-পর-দিন জেলখানায় আটকে রাখা এবং রাষ্ট্রীয় হেফাজতে মৃত্যুকে সরকার আর ৮-১০টি ঘটনার মতোই বিবেচনা করছে। এক্ষেত্রে মৃত্যুর কারণ তদন্তের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তাতে বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটিকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বা ব্যক্তিবিশেষ দূরভিসন্ধিমূলকভাবে অপব্যবহার করছে কিনা? সে সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাব পাওয়া যাবে, এমন আশা প্রায় অলীক। যদিও এমন মর্মান্তিক ঘটনার কার্যকর জবাবদিহি নিশ্চিতে এসব প্রশ্নের উত্তর জানা আজ জরুরি হয়ে পড়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও তার অপব্যবহারই যে মুশতাকের মৃত্যুর কারণ, এ কথা সরকার কীভাবে অস্বীকার করবে?

আরও পড়ুন : আল-জাজিরার প্রতিবেদন নিয়ে যা বললেন প্রধানমন্ত্রী

গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য বলছে, ২০২০ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে ৪৫৭ ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করে ১৯৭টি মামলা হয়েছে, যেখানে ৪১টি মামলায় ৭৫ জন পেশাদার গণমাধ্যমকর্মীকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এই আইনের করা মামলার অধিকাংশেরই বাদী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নয় তো ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি যে বিরোধী মত ও সমালোচকদের কন্ঠরোধ করতেই কার্যত ব্যবহৃত হচ্ছে, তা বলাটা অত্যুক্তি হবে না। একইভাবে আইনটি বহাল রেখে দেশে বাকস্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার চর্চা অব্যাহত রয়েছে এমন দাবি অবান্তর। অবিলম্বে এই বিতর্কিত আইনটি বাতিলের দাবি জানাচ্ছি আমরা।

জনকল্যাণমূলক উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার পূর্বশর্ত সমালোচনানির্ভর জবাবদিহিতা। সমালোচক মাত্রই শত্রু নয়; সমালোচক শুভাকাঙ্ক্ষী হতে পারেন, ইতিবাচক অর্জনের অনুঘটক হতে পারেন উল্লেখ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলছেন, সরকারের সমালোচনা করা নাগরিকের অধিকার, তথা মতপ্রকাশের অধিকার কোনো সভ্য সমাজে অপরাধ বলে গণ্য হতে পারে না। একইসঙ্গে রাষ্ট্র ও সরকার যে দুটি ভিন্ন সত্ত্বা তাও একাকার করার কোনো সুযোগ নেই। সরকারের দুর্নীতি এবং অনৈতিক ও অন্যায় কাজের সমালোচনা করতে ব্যক্তি যে বাকস্বাধীনতার চর্চা করেন, তা কোনো অর্থেই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত হতে পারে না। সমালোচনাকারী মূলত দেশের ও দশের কল্যাণে একটি কার্যকর জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র ব্যবস্থা দেখতে চায়। এই সত্যটা উপলব্ধি করার ক্ষেত্রে সরকারের সৎসাহসের অভাবের পাশাপাশি ইচ্ছাশক্তিও তিরোহিত হয়েছে। যার জ্বলন্ত প্রমাণ মুশতাক আহমেদের মৃত্যু।

সূত্র : আরটিভি
এন এইচ, ২৭ ফেব্রুয়ারি

Back to top button