জাতীয়

বছরজুড়ে সীমিত হয়েছে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি, সক্রিয় নেতাকর্মী

শেখ তৌফিকুর রহমান

ঢাকা, ২৩ ডিসেম্বর – বছরজুড়ে সাংগঠনিক কার্যক্রমের মধ্যদিয়ে সক্রিয় ছিলো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বছরের শুরুতে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত ছিলো দলটি। পরবর্তীতে মুজিববর্ষের শুরুতে দেশে আসে করোনাভাইরাস মহামারির আঘাত। সে আঘাত মোকাবিলাতেও মানুষের পাশে ছিলো দলটি। এরপর ঘূর্ণিঝড় আম্ফান এবং বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যায় দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ায় দলটির নেতাকর্মীরা। করোনার নিউ নরমাল পরিস্থিতির মধ্যে সাংগঠনিক কার্যক্রমে জোর দেয় দলটি। দলের বেশ কয়েকটি সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনের কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদনও দেয়া হয়। মোট কথা করোনাকালেও বছরজুড়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে গেছে দলটি।

সিটি নির্বাচনের ব্যস্ততা: বছরের শুরুতেই ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনকে সামনে রেখে ব্যস্ত ছিলো দলটি। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে আতিকুল ইসলাম এবং দক্ষিণে শেখ ফজলে নূর তাপস দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেন। জানুয়ারি মাস জুড়েই কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা দুই মেয়র প্রার্থীর পক্ষে জোর প্রচারণা চালান। ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ভোটে দুই প্রার্থীই জয় লাভ করেন।

সাংগঠনিক তৎপরতা বাড়াতে কর্মসূচি: কেন্দ্রীয় সম্মেলন ও সিটি নির্বাচনের পর সাংগঠনিক ভিত মজবুত করতে তৎপরতা বাড়ায় দলটি। এর অংশ হিসেবে নেয়া হয় বেশ কিছু কর্মসূচি। এ সময় সম্মেলন সম্পন্ন হওয়া ইউনিটগুলোর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের তাগিদ দেয় দলটি। পাশাপাশি জেলাগুলোর অসমাপ্ত সম্মেলন শেষ করা, সাংগঠনিক সফর, সদস্য সংগ্রহ অভিযান, প্রতি জেলার কমপক্ষে দু’জন প্রবীণ নেতাকে মুজিববর্ষ উপলক্ষে সংবর্ধনা দেয়া, জেলা-উপজেলায় বর্ধিত, প্রতিনিধি ও কর্মীসভা সম্পন্ন করারও নির্দেশনা দেয়া হয়।

আরও পড়ুন : মোংলায় পরিবেশগত ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে নির্মাণকাজ

মুজিববর্ষের কর্মসূচির পরিকল্পনা: চলতি বছরের ১৬ মার্চ মুজিববর্ষে জাতীয় উদযাপন কমিটিরও অনুষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় করে দলীয় কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা দেয়া হয়। এক সংবাদ সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, মুজিববর্ষ উপলক্ষে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি চলবে বছরজুড়ে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে দলের পক্ষ থেকে স্মরণিকা প্রকাশ করার কথা বলা হয়। এছাড়া দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত, ‘মুজিববর্ষে কেউ গৃহহীন থাকবে না’-এমন ঘোষণাকে দলীয় কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করার কথা জানান ওবায়দুল কাদের। পরবর্তীতে দলের কর্মসূচির সঙ্গে সমন্বয় করে কর্মসূচি দেয় ১৪ দল।

করোনা সংকটে মানুষের পাশে: শুরু থেকেই করোনা মোকাবিলায় মাঠে ছিলো মূল দল ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। ঘরবন্দী মানুষের পাশে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করা হয়। বিনামূল্যে মাস্ক, স্যানিটাইজারসহ করোনা প্রতিরোধমূলক সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়। পাশাপাশি প্রত্যেক নেতাকর্মীকে নিজ নিজ এলাকায় সচেতনতা ও সতর্কতামূলক কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়। মূল দলের পাশাপাশি সহযোগী সংগঠনগুলোও এসব কর্মসূচিতে অংশ নেয়।

এক কোটি ২০ লাখ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা: করোনা দুর্যোগে দলের পক্ষ থেকে প্রায় এক কোটি ২০ লাখ পরিবারের মাঝে খাদ্য সহায়তাসহ প্রায় ১০ কোটি টাকা নগদ সহায়তা দেয়া হয়েছে। ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ উপকমিটির উদ্যোগে সারাদেশের সব জেলা-উপজেলায় বিভিন্ন ধরনের ত্রাণ সহায়তা বিতরণ করা হয়। সভানেত্রীর নির্দেশে ত্রাণ ও খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি নগদ সহায়তা, ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, টেলিমেডিসিন, লকডাউন এলাকায় রাতে খাবার পৌঁছানো, ইফতার ও সেহরি বিতরণ, সবজি বিতরণসহ কৃষকদের ধান কেটে ঘরে তুলে দেয়া হয়।

আরও পড়ুন : পাকিস্তান থেকে ফিরছেন কারাবন্দী ২৯ বাংলাদেশি

ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে: মে মাসে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাব মোকাবিলা ও ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা ও পুনর্বাসন কার্যক্রম চালানো হয় দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে। বিপর্যস্ত উপকূলসহ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার নেতাকর্মীদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সহযোগিতা ও পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিচালনায় স্থানীয় প্রশাসনকে সহযোগিতা করেন নেতাকর্মীরা।

ডিজিটাল প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকীর বছরে আড়ম্বরপূর্ণ ও জাঁকজমক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের পরিকল্পনা ছিল দলের। কিন্তু করোনার কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতি সে পরিকল্পনায় বাদ সাধে। তাই সীমিত পরিসরে ৭১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করে দলটি। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দলীয় সভাপতির বক্তব্য, জুমের মাধ্যমে বৈঠক, সামাজিক দূরত্ব মেনে সীমিত পরিসরে জাতির জনকের মাজার ও প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণ করে এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হয়।

বন্যার্তদের পাশে: জুন মাসে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বন্যা দেখা দেয়। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জনগণের পাশে থাকতে নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেয়া হয়। এ সময় বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সারাদেশের নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি গ্রহণ ও বন্যা দুর্গত মানুষের পাশে থেকে সার্বিক সহায়তার নির্দেশনা দেয়া হয়।

স্বাভাবিক সাংগঠনিক কার্যক্রমে ফেরার চেষ্টা: করোনাকালিন পরিস্থিতির মধ্যে স্বাভাবিক সাংগঠনিক কার্যক্রমে ফেরার চেষ্টা করে দল। এর অংশ হিসেবে সম্মেলন হওয়া পাঁচ সহযোগী সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন্দ্রে জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। এছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা-উপজেলা শাখা সম্মেলনের কার্যক্রম শুরুর নির্দেশনা দেয়া হয়। পাশাপাশি দলের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বাভাবিক সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করার আহ্বান জানানো হয়। চলতি বছর ৩ অক্টোবর সাংগঠনিক কাজে গতি আনতে দেশের আটটি সাংগঠনিক বিভাগের জন্য কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্যদের সমন্বয়ে আটটি টিম গঠন করে দলটি। এছাড়া দায়িত্বে অবহেলার কারণে বিভিন্ন জেলা ইউনিটরে সভাপতি সাধারণ সম্পাদককে অব্যাহতি দেয়া হয়।

আরও পড়ুন : যত প্রতিকূলতাই আসুক লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হব না : মেয়র তাপস

বিভিন্ন সহযোগী-অঙ্গ সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা: সম্মেলনের দীর্ঘদিন পর পাঁচ সহযোগী সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে দলটি। সেগুলো হলো স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ এবং যুবলীগ। এছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়।

ভাস্কর্য ইস্যু মোকাবিলা: ভাস্কর্য নিয়ে চলমান বিতর্ককে প্রথম দিকে হালকাভাবে নিলেও এখন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টিকে দেখছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ভাস্কর্য নিয়ে ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যা, আইনগত পদক্ষেপ এবং প্রগতিশীল ইসলামী চিন্তাবিদদের মতামত তুলে ধরে জনমত গঠন করে বিতর্কের অবসান চায় ক্ষমতাসীন দলটি। কুষ্টিয়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙচুরের পর এ বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়ে এগোচ্ছে সরকার। আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী মহলেও খোঁজা হচ্ছে এর কার্যকর সমাধানের কৌশল। ইতোমধ্যেই দলের শীর্ষ ফোরামে এ নিয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে।

সুত্র : বাংলাদেশ জার্নাল
এন এ/ ২৩ ডিসেম্বর

Back to top button