শিক্ষা

ঝুলে আছে ২ লাখ ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ

আসিফ কাজল:

ঢাকা, ০৮ অক্টোবর- সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের একটি শ্রেণি থেকে উপরের শ্রেণিতে উঠানো হচ্ছে অটোপ্রমোশন দিয়ে। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যেহেতু এ বছর পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না, তাই প্রমোশন দিয়ে শিক্ষার্থীদের পরের শ্রেণিতে পড়াশোনা শুরু করার ব্যবস্থা নিতে হবে। ২০২০ সালের এইচএসসি পরীক্ষা না হওয়ায় সব শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রবেশ করবেন। কিন্তু যারা চার বছর ডিপ্লোমা কোর্সের শেষ সেমিস্টারে রয়েছেন তাদের কি হবে? এমন প্রশ্নে হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন দেশের পলিটেকনিক কলেজগুলোর লাখো শিক্ষার্থী। পরীক্ষা না হওয়ার কারণে সারাদেশের প্রায় ২ লাখ শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন ঝুলে আছে। শেষ বর্ষের শুধুমাত্র মৌখিক পরীক্ষা সম্পন্ন না হওয়ায় চাকরির বাজারেও প্রবেশ করতে পারছেন না তারা।

ঢাকা পলিটেকনিক কলেজের ৮ম পর্বের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমাদের ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষাক্রমটি জুন-জুলাই মাসে শেষ হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি আসছে। কিন্তু শুধুমাত্র মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত না হওয়ার কারণে আমাদের ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আমাদের এমন অবস্থা যেন তীরে এসেও তরী কূলে ভিড়ছে না।’

তানিয়া সুলতানা নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ডিপ্লোমা শেষ করে বিদেশে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে আমার ইচ্ছা ছিলো। এখন দেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে কবে ভর্তি হবো, লেখাপড়া শেষে কর্মজীবনে কবে প্রবেশ করবো তাই জানিনা।’

জানা যায়, পলিটেকনিকের ৮ম সেমিস্টারের শিক্ষার্থীরা বেশ কিছুদিন ধরেই পরীক্ষা নেয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন। সম্প্রতি এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা না হওয়া ও শতভাগ পাসের কারণে সে দাবি আরো জোরালো হয়েছে। এরই মধ্যে পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা শিক্ষামন্ত্রীকে খোলা চিঠি দিয়েছেন।

চিঠিতে তারা বলেছেন, চলতি বছর ২০২০-২১ সেশনে প্রতিটি পলিটেকনিক কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। অথচ স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমাদের চূড়ান্ত ভাইভা নেয়া হচ্ছেনা। ভর্তি কার্যক্রম চললে পরীক্ষা কার্যক্রম কেন চলবে না বলে জানতে চেয়েছেন তারা।

এ প্রসঙ্গে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের এক কর্মকর্তা জানান, এ বিষয়ে একাধিকবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্তে পৌছাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। তবে কারিগরী শিক্ষাবোর্ড এ বিষয়ে কাজ করছে।

এ বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্ত শিক্ষা বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি কারিগরী শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে রোববার জানাতে পারবো।’

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমরা ধারাবাহিকভাবে সকল সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি। যেহেতু অনেক শিক্ষার্থীর সমস্যা অবশ্যই বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।’

বাংলাদেশ কারিগরী শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মো. মোরাদ হোসেন মোল্ল্যা বলেন, ৮ম পর্বে এসমস্ত শিক্ষার্থীদের জন্য ইন্ড্রাসট্রিয়াল ট্রেনিং এর একটি পরীক্ষা রয়েছে। ডিপ্লোমা ইন চার বছর মেয়াদী ২৪৬৮ চূড়ান্ত পরীক্ষা নামে আরও একটি পরীক্ষা আছে। এছাড়াও প্রায় দুই লাখ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থীর রেফার্ড পরীক্ষা (বিভিন্ন বিষয়ে ফেল) রয়েছে। এছাড়াও করোনা পরিস্থিতির কারণে নানামূখী সংকট থাকায় পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হচ্ছেনা। মন্ত্রণালয়ে গত ৬ অক্টোবর এ সমস্যা সমাধানে আলোচনা করেছি। তবে শিগগিরই এ সমস্যা সমাধান হচ্ছেনা বলে জানান তিনি।

সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল
আডি/ ০৮ অক্টোবর

Back to top button