পশ্চিমবঙ্গ

শরদ পওয়ারের সঙ্গে বৈঠক না করেই কি কলকাতা ফেরার বিমান ধরছেন মমতা

কলকাতা, ৩০ জুলাই – একুশের মঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, দিল্লি এসে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী, এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ার-সহ অন্য নেতাদের সঙ্গে দেখা করবেন তিনি। কিন্তু দিল্লিতে এখনও পর্যন্ত শরদ পওয়ারের সঙ্গে কোনও বৈঠক তাঁর কর্মসূচিতে নেই। কাল বিকেলে কলকাতা ফেরার বিমান ধরার কথা মমতার। যদি সকালবেলায় কোনও সাক্ষাৎ না ঘটে, তা হলে এই যাত্রায় পওয়ারের সঙ্গে দেখা না করেই দিল্লি ছাড়তে দেখা যাবে তাঁকে।

এর আগে, তৃণমূল সূত্রের খবর ছিল, কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গাঁধী এবং শরদ— এই দুই বর্ষীয়ান নেতার বাড়িতে নিজেই যাবেন মমতা। বাকি বৈঠকগুলি হবে সাউথ অ্যাভিনিউতে তাঁর বাসভবনে। গত এক মাসে ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরও একাধিক বৈঠক করেছেন শরদের সঙ্গে। একুশে জুলাই দিল্লির কনস্টিটিউশন ক্লাবে শহিদ দিবসের অনুষ্ঠানে শরদ এসেওছিলেন, কন্যা সুপ্রিয়া সুলেকে সঙ্গে নিয়ে। কিন্তু চলতি দিল্লি সফরে মমতার সঙ্গে শরদের এখনও দেখা হল না।

অথচ মমতা সনিয়ার বাড়ি গিয়েছেন। অন্য বিরোধী নেতাদের মধ্যে তাঁর সঙ্গে এসে দেখা করেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল, ডিএমকে নেত্রী কানিমোজি। আজ মমতাকে ফোন করেছিলেন অসমের প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ কিরিপ চালিহা। আগামিকাল সকালে মমতার সঙ্গে দেখা করতে আসবেন তিনি। সূত্রের খবর, তাঁর সম্ভাবনা রয়েছে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার। এনসিপি সূত্রে কিন্তু জানানো হয়েছে, মমতার কাছ থেকে সময় চেয়ে তাঁদের কাছে কোনও অনুরোধ আসেনি।

রাজনৈতিক শিবিরে এখন জোর জল্পনা, কেন শরদের সঙ্গে এখনও দেখা করলেন না মমতা? বিষয়টি কি দিল্লিতে বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরকে কোনও বার্তা দেওয়ার জন্য?

এনসিপি শিবিরের বক্তব্য, বর্ষীয়ান শরদ তো নিজে মমতার সময় চাইতে পারেন না। তা হলে তাঁকে গিয়ে হাজির হতে হবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি! সূত্রের বক্তব্য, সম্প্রতি পওয়ার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করার পর বিভিন্ন শিবিরে গুঞ্জন তৈরি হয়েছিল। প্রশ্ন উঠেছিল, তিনি কি তা হলে রাষ্ট্রপতি হওয়ার লক্ষ্যে মোদীর ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছেন? সে কারণেই কি মমতা দিল্লি এসে তাঁর সঙ্গে না-দেখা করে বার্তা দিতে চাইলেন? এনসিপি সূত্র অবশ্য বলছে, শরদ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন নতুন তৈরি হওয়া কেন্দ্রীয় সমবায় মন্ত্রক নিয়ে তাঁর উদ্বেগ জানাতে। ওই সাক্ষাতের মধ্যে অন্য কিছু খোঁজা অনর্থক।

রাজনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, বিজেপিকে বিপুল ভাবে হারিয়ে তৃতীয় বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর বিরোধী রাজনীতিতে একটি নির্বিকল্প অবস্থানে পৌঁছনোই লক্ষ্য মমতা এবং তাঁর দলের। এর আগেই তৃণমূল নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির সঙ্গে লড়াই করে আজ যে উচ্চতায় পৌঁছেছেন, এর পর সেই উচ্চতা খাটো হয়, এমন কিছুর সঙ্গে আমরা সমঝোতা করব না। কোনও দলের সঙ্গেই নয়।’’

শরদকে গত এক মাসে দেখা গিয়েছে বিভিন্ন ভাবে বিরোধী জোটতৈরির মহড়ায় সক্রিয় হতে। তাঁরই বাড়িতে রাষ্ট্রমঞ্চ ৮টি রাজনৈতিক দলের নেতাকে নিয়ে বৈঠক করে। বারবার তাঁর সঙ্গে দেখা করেন প্রশান্ত কিশোর। পি কে-র ওই সাক্ষাৎকে মমতা তাঁর ব্যক্তিগত বিষয় হিসাবে দাবি করেছেন। অনেকেই মনে করছেন, দিল্লিতে এসে শরদের সঙ্গে দেখা না করে মমতা এই বার্তাই দিতে চাইলেন যে বিভিন্ন দলের মধ্যে সংযোগসাধক এই মুহূর্তে তিনিই। অন্য কেউ নন।

সূত্র : আনন্দবাজার
এম এউ, ৩০ জুলাই

Back to top button