সম্পাদকের পাতা

প্রতারকচক্রের কাছ থেকে সাবধান!

নজরুল মিন্টো

অতি সম্প্রতি একটি সংবাদের প্রতি কমিউনিটির বেশ কয়েকজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে। সংবাদটি প্রথমে ‘নতুন দেশ’ অনলাইনে ছাপা হয় এবং পরবর্তীতে ঐ সূত্র ধরে সাপ্তাহিক ‘বাংলা কাগজ’-এ ছাপা হয়েছে।

সংবাদের শিরোনাম: ”বাংলাদেশে কানাডীয় বিনিয়োগ বাড়াতে ভূমিকা রাখতে চান ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম”।

প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, সম্প্রতি স্থানীয় একটি রেষ্টুরেন্টে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন করেন জনৈক শরিফুল ইসলাম। এ সম্মেলনে বাংলাদেশকে ঘিরে তার স্বপ্ন এবং পরিকল্পনার কথা তিনি তুলে ধরেন। সাংবাদিকদের তিনি জানান, গত ৯ বছর ধরে সম্পূর্ণ নিজস্ব উদ্যোগ এবং অর্থায়নে বাংলাদেশের ব্যবসা বাণিজ্যের গতিবিধির উপর কাজ করছেন। তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাত কামনা করেন এবং তার পরিকল্পনাগুলো সম্পর্কে অবহিত হলে প্রধানমন্ত্রী সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন বলে তার বিশ্বাস।

তিনি নিজেকে ‘ইউনিয়ন বে লিমিটেড বাংলাদেশ’ নামে একটি কোম্পানীর চেয়ারম্যান হিসেবে তুলে ধরে জানান, এই প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে কানাডীয়ান বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ততা রয়েছে।

‘নতুন দেশ’-এ ‘মিট দ্য প্রেস’ এর তার একক একটি ছবি এবং বাংলা কাগজে তার সাথে একটি বুলেটপ্রুফ গাড়ির ছবি ছাপা হয়েছে।

(নতুন দেশ অনলাইনে প্রকাশিত সংবাদের স্ক্রিনশট)

কে এই শরিফুল ইসলাম? তিনি ছিলেন সাবেক কানাডা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক (সভাপতি তারেক)। সংগঠনটি বর্তমানে নিষ্ক্রিয়। তিনি মর্টগেজ ব্যবসার সাথও কিছুদিন জড়িত ছিলেন। তার ঘনিষ্ঠজন সূত্রে জানা যায়, প্রতারণার অভিযোগে তিনি এ ব্যবসায় স্থায়ীত্ব লাভ করতে পারেননি। এরপর দীর্ঘদিন তার কোন কর্মকান্ডের খবরাখবর কেউ কিছু জানেন না।

তার কথিত কোম্পানি ইউনিয়ন বে লিমিটেড (https://unionbayltd.com/) এর ওয়েব সাইটে গিয়ে দেখা যায় এটা বাংলাদেশে নিবন্ধিত একটি কোম্পানী। ওয়েবসাইটটিতে গুগল থেকে কিছু ইমেজ (যেমন গার্মেন্টস, কনস্ট্রাকশনস, এক্সপোর্ট-ইম্পোর্ট ইত্যাদি) আপলোড করা হয়েছে এবং ‘অটো শো’তে গিয়ে সেলস পার্সনদের সাথে গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে তোলা একটি ছবি। কোম্পানির কানাডা অফিসের যে ঠিকানা দেখানো হয়েছে এটা সরকারি একটি আবাসিক ভবনের ঠিকানা। ওয়েবসাইটে পার্টনার হিসেবে বেশ কিছু কোম্পানীর লোগো পোষ্ট করা হয়েছে যেগুলোর সাথে তার বা তার কোম্পানীর কোন এফিলিয়েশন নেই বলে জানিয়েছেন কোম্পানীর কর্মকর্তাবৃন্দ।

কোন উদ্দেশ্যে তাহলে এ আয়োজন? ধারণা করা হচ্ছে- কেবলমাত্র প্রতারণার উদ্দেশ্যে এ আয়োজন করা হয়েছে। অনেকে মনে করছেন শরিফুল ইসলামের পেছনে কোন শক্তিশালী প্রতারকচক্র রয়েছে যারা তাকে পৃষ্টপোষকতা করছে। এসব পৃষ্টপোষকেরা বাংলাদেশের সহজ সরল ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার একটি ফন্দি এঁটেছে। ‘মিট দ্য প্রেস’ ছিল সে ফন্দিরই একটি অংশ। তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ি যদি পত্র-পত্রিকায় নিউজটি ছাপা হয় তাহলে মিশন সাকসেসফুল করা সহজ হবে।

ঐদিনের কথিত মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে আরো অনেক সাংবাদিক/সম্পাদকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল কিন্তু সবাই তার ডাকে সাড়া দেননি। সাপ্তাহিক বাংলামেইল, সাপ্তাহিক সিবিএন উপস্থিত থাকলেও তারা ঐ নিউজ প্রকাশ থেকে বিরত থেকেছে। উক্ত অনুষ্ঠানে কানাডা-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট আরিফুর রহমান সকল সাংবাদিকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে শরিফুল ইসলামের ভূয়া বক্তব্য বিশ্বাস না করার আহবান জানিয়েছিলেন। কিন্তু তারপরও নিউজটি কোন তথ্যের ভিত্তিতে, কোন যুক্তিতে ঐ দুটি মিডিয়ায় ছাপা হয়েছে সেটা এক রহস্য!

অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, সংবাদটি প্রকাশের পূর্বে কিছু তথ্য যাচাই করে নেয়া উচিত ছিল। কমিউনিটির দু/চারজনকে জিজ্ঞেস করলেও তার সম্পর্কে জানা যেতো।

আমাদের শঙ্কা হচ্ছে- প্রকাশিত সংবাদটি দেখিয়ে প্রতারকচক্র মানুষের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জণ করার চেষ্টা করবে। সংবাদটি অনেক সহজ সরল মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

(সাপ্তাহিক বাংলা কাগজে প্রকাশিত সংবাদের ছবি: ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সংখ্যা)

শরীফুল ইসলাম সম্পর্কে কিছু মজার তথ্য:
অন্টারিও আওয়ামীলীগ সভাপতি ও ব্যবসায়ি মোহাম্মদ হাসান বলেন, কিছুদিন আগে শরিফ বলেছিলো যে, বাংলাদেশের কোথায় কোথায় স্বর্ণের খনি আছে তার কাছে সে ম্যাপ রয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করিয়ে দিলে সে নিজে তাঁর কাছে ঐ মূল্যবান ম্যাপটি হস্তান্তর করবে।

বিএনপি কানাডার নেতা, ব্যবসায়ি আবুল আজাদ বলেন, শরীফ বলেছিলো তার কাছে ১০টা বুলেট প্রুফ স্পিডবোট আছে সে সরকারকে সেগুলো দিতে চায় এবং আজাদ যদি লাইন করতে পারে তাহলে লাল রঙের বোটটি তাকে পুরষ্কার হিসেবে দেয়া হবে।

বিশিষ্ট ব্যবসায়ি কফিল উদ্দিন পারভেজ বলেন, বাংলাদেশ সরকারের সব মন্ত্রীকে শরীফ একটি করে অত্যাধুনিক বুলেট প্রুফ গাড়ি গিফট করতে চায়। প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করিয়ে দিলেই কোটি কোটি টাকার ঐ গাড়িগুলো সে জাহাজে তুলে দিবে।

কানাডা-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট আরিফ রহমান বলেন, শরীফ বলেছিল তাকে যদি চেম্বারের সভাপতি বানিয়ে দিতে পারি তাহলে সে আমাকে একটা পর্শ গাড়ি গিফট করবে। ‘এগলিংটন স্কোয়ারের ডিলারকে ফোন করলেই ওরা আমাকে একটা গাড়ি দিয়ে দিবে।’

Back to top button