সম্পাদকের পাতা

সাংস্কৃতিক জগতের মানুষের কাছ থেকে খিস্তি খেঁউড় কেউ আশা করে না

নজরুল মিন্টো

আমাদের এ টরন্টো নগরীর সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড নিয়ে আমরা প্রায়ই গর্ব করি। রাজধানী ঢাকার পর টরন্টোই একমাত্র নগরী যেখানে শত ব্যস্ততা, বৈরি আবহাওয়ার মধ্যেও বাংলা সংস্কৃতির চর্চা দৃশ্যমান। সংগীত, নৃত্য, নাটক, সাহিত্য তথা শিল্প-কলার প্রত্যেকটি শাখায় রয়েছেন অনেক গুণী মানুষ- যাদের সৃষ্টি ও চর্চা আমাদের চেতনাকে শাণিত করছে দিনের পর দিন; উজ্জীবিত করে রেখেছে বছরের পর বছর। আমরা একই আদর্শে বলীয়ান। দেশের প্রশ্নে আমরা সবাই এক। আমরা একসাথে চলি, একে অন্যের সমালোচনা করি, অভিমান করি, তারপর আবার মিলে-মিশে হৈচৈ করি। কিন্তু আর বুঝি এ ধারা রক্ষা করা যাচ্ছে না!

লক্ষ্য করছি আজকাল আমাদের কমিউনিটিতে ‘মুই কি হনু’র সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। সবাই আমরা সবকিছু বুঝি, সবাই আমরা একেকজন দিকপাল। কারো প্রতি কারো শ্রদ্ধাবোধ বলতে কোন কিছু নেই, উপরোন্ত একে অন্যকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করতে ভালবাসি। কেউ কেউ আছেন যাদের মুখে কেবল অতীতের গল্প! তথা দেশে তিনি কি ছিলেন তার ফিরিস্তি। ৪০ বছর ধরে কানাডায় যিনি বসবাস করছেন, এ দেশে লেখাপড়া করেছেন, তার মূল্য তার কাছে শূণ্য; কেননা তার মতে, তিনি দেশেতো কিছু ছিলেন না। কিছু হতে গেলে দেশে নাম লিখিয়ে আসতে হবে এবং তা কেবল ঢাকা থেকে। বস্তুতঃপক্ষে অন্য জেলা সম্পর্কেও তার কোনো ধারণা নেই। যতটুকু ধারণা আছে তা মানচিত্র দেখে।

এমতাবস্থায় আমরা কেউ কাউকে সহ্য করতে পারছি না। প্রত্যেকে যেন প্রত্যেকের প্রতি সন্দিহান। যে কোন ব্যক্তিগত বিষয় নিয়েও আলোচনা আর সমালোচনার ঝড় উঠছে। সমালোচনা করার অধিকার সকলের আছে। তবে সমালোচনাটা ক্রিয়েটিভ হওয়া বাঞ্ছনীয়। কাজের সমালোচনা করা অন্যায় কিছু না; তবে কাউকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করা উচিত নয়। কেউ কেউ তার অপছন্দের ব্যক্তিটির ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে টানাটানি করে আনন্দ পান; যা একেবারে নোংরামির পর্যায়ে চলে যায়। এ ধরনের অপকর্মে উৎসাহ দেয়া ঠিক নয়; বরং নিবৃত্ত করতে সচেতন মহলের এগিয়ে আসা উচিত। একটা কথা বলা দরকার- সাংস্কৃতিক জগতের মানুষের আচার আচরণ, শৈল্পিক কথা-বার্তা, জীবন-যাত্রা নিয়ে সাধারণ মানুষের আগ্রহ এবং শ্রদ্ধার কথা স্মরণ রাখতে হবে। এ জগতের কারো কাছ থেকে খিস্তি খেঁউড় কেউ আশা করে না।

বলা আবশ্যক, কাজ করতে গেলে যৎ-সামান্য ভুল-ক্রুটি হবেই। অর্থাৎ বলতে চাচ্ছি যে কোন আয়োজন শতভাগ নির্ভূলভাবে সম্পন্ন হয় না। তাই বলে নিরাশ হওয়ার কিছু নেই। উৎসাহ দিতে হবে, সহযোগিতা করতে হবে।

সবশেষে বলবো, আমাদের ছোট্ট এই কমিউনিটিতে রাত পোহালে একে অন্যের সাথে দেখা হয়। কারো সাথে এমন ব্যবহার করা উচিত নয় যে একজন আরেকজনকে দেখলে মুখ ফিরিয়ে নিতে হবে। সবাই ভাল থাকুন।

Back to top button