অতি সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে অরুণ চৌধুরি পরিচালিত বহুল আলোচিত ছবি ‘মায়াবতী’। দর্শকরা আশা করেছিলেন হলে গিয়ে একটি মানসম্পন্ন ছবি দেখবেন; কিন্তু গুড়ে বালি। ‘মায়াবতী সিনেমাটি ২০১৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত হিন্দি ছবি ‘পিংক’ এর নকল। কেবল সামনের অংশে একটি বহুল প্রচলিত কাহিনী জুড়ে দেয়া হয়েছে।
অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরি পরিচালিত ‘পিংক’ ছবির মুখ্য অভিনেতা ছিলেন অমিতাভ বচ্চন। ঐ ছবিতে তিনি একজন আইনজীবীর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন আর মায়াবতীতে ছিলেন রাইসুল ইসলাম আসাদ- তিনিও একজন আইনজীবীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। পিংক ছবিতে অমিতাভ বচ্চনের অসুস্থ স্ত্রীর ভূমিকায় ছিলেন মমতা শঙ্কর আর রাইসুল ইসলাম আসাদের অসুস্থ স্ত্রীর ভূমিকায় ছিলেন আফরোজা বানু। পিংক ছবিতে ভিলেনকে আঘাত করে মদের বোতল দিয়ে, আর মায়াবতীতে ভিলেনকে আঘাত করে ফুলদানী দিয়ে। পিংক ছবিতে মামলাটি যেভাবে সাজানো হয়েছিল, মায়াবতীতেও একইভাবে সাজানো হয়। ‘না’ মানে ‘না’ এ ডায়লগটিও ওখান থেকে নেয়া। আদালতে উকিলদের পক্ষে-বিপক্ষে সওয়াল জবাব এবং পরিশেষে যে রায় দেয়া হয়েছে সবই হুবহু ; অর্থাৎ ছবির থিমটা পিংক ছবি থেকে নেয়া যে কেউ বলে দিতে পারে। নকল মানেইতো নকল। নকল করলেও বোম্বের ছবিটির মতো শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন পরিচালক অরুণ চৌধুরি। মনে হয়েছে তাড়াহুড়া করে আদালতের কার্যক্রম শেষ করে তিনি ছবিটিও শেষ করেছেন। মনে হতে পারে এটি একটি টিভি নাটক বা টেলিফিল্ম। বলতে গেলে দর্শকরা নূন্যতম শিল্পমূল্য খুঁজে পাবেন না মায়াবতীতে।
বাংলাদেশে যখন যেটা শুরু হয় তথা যতক্ষণ পর্যন্ত এটাকে পঁচানো না গেছে ততক্ষণ পর্যন্ত শান্তি নেই। যেমন ইদানিং শুরু হয়েছে ড্রোন এর ব্যবহার। মায়াবতী ছবিতে কারণে, অকারণে ড্রোনের ব্যবহার মাত্রাতিরিক্ত বলে মনে হয়েছে। এছাড়া অত্যাধিক খ্যাতিমান তারকাদের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গেলেও কিছু কিছু চরিত্রের আবশ্যকতা নিয়ে দর্শকদের মনে প্রশ্ন জেগেছে। অনেক তারকাদের কিছুই করার ছিল না। তারকা শিল্পীদের নিলেই যে ছবি হিট করবে তা ভুল প্রমাণ করলো মায়াবতী।
নতুন কোনো গান ছিল না মায়াবতীতে। পুরনো একটি আধ্যাত্মিক গান ও জনপ্রিয় একটি আঞ্চলিক গানকে পুঁজি করে পার করে দেয়া হয়েছে পুরো সময়। বোদ্ধা দর্শকরা মনে করেন এটা পরিচালকের ফাঁকিবাজি। এছাড়া গানের আসরের যে সেট দেখা গেছে তা অত্যন্ত বাজে লেগেছে। বাংলাদেশে এখন গানের আসর সামিয়ানা টাঙিয়ে যেভাবে জমজমাট হতে দেখা যায় এটাতে সেভাবে দেখাতে পারেননি পরিচালক। ছবির ডায়লগ, চিত্রনাট্য, চিত্রায়ন ছিল খুবই দুর্বল। এক কথায় মায়াবতীতে না ছিল কোনো বিনোদন, না দিতে পেরেছে কোনো বার্তা। যে বার্তা পিংক ছবি দিতে পেরেছে সঠিক উপস্থাপনার অভাবে মায়াবতী সেটা পারেনি।