ঢাকা, ২১ এপ্রিল – ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রচারিত যেকোনও অনুষ্ঠান বা কোনও ঘটনার প্রতি সাধারণ জনগণের রয়েছে আগ্রহ। আবার এ ধরনের ভিডিও’র প্রতি অনেকের রয়েছে অন্ধ বিশ্বাস। এই সুযোগ কাজে লাগাতে বেশ কয়েকটি চক্র পুরনো কোনও ঘটনার ছবি কিংবা ভিডিও (সংঘর্ষ, আন্দোলন বা কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা) বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রচার করতে তৎপর রয়েছে। আগের কোনও ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ব্যবহার করে বিভিন্ন আইডি থেকে বিশেষ অ্যাপের মাধ্যমে তারা সরাসরি সম্প্রচার করছে। এতে সৃষ্টি হচ্ছে নানা ধরনের বিভ্রান্তি আর বিশৃঙ্খলা। এই ভিডিও’র কারণে অনেকের মাঝে উত্তেজনা ও ক্ষোভ সৃষ্টি হচ্ছে। উত্তেজনার বশবর্তী হয়ে কেউ কেউ বিভিন্ন ধরনের অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়ে পড়ছে। দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে চক্রগুলো। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। এরইমধ্যে অর্ধশতাধিক আইডি ও পেজের ওপর নজর রাখছে তারা।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাইবার ইউনিট বিভাগগুলো এরইমধ্যে অনলাইনভিত্তিক বিভিন্ন বিষয়ের তথ্যাদি পর্যালোচনা করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পুরনো ঘটনা নতুন করে বিশেষ অ্যাপের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছেন তারা। এর সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া অনেকেই নজরদারিতে আছেন।
গোয়েন্দা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বিভিন্ন তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সাম্প্রতিক হেফাজতের হরতালকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের পুরনো সংঘর্ষের ঘটনাকে বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে নতুন করে সম্প্রচার করা হয় বিভিন্ন আইডি থেকে। গত ২৬ মার্চ যাত্রাবাড়ীতে রাস্তা অবরোধ ও কয়েক ঘণ্টা বিক্ষোভ করে বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। রাত ৮টা পর্যন্ত বিক্ষোভ শেষে তারা যে যার মতো মাদ্রাসায় অবস্থান নেয়। কিন্তু সেদিন গভীর রাতে সেই ঘটনাকে আবারও বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে সম্প্রচার করে জনগণের কাছে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য তুলে ধরা হয়। সেদিনকার ঘটনার বিষয়ে যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে হেফাজতের নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেওয়া হয় রাত আটটার দিকে। এরপর রাতে সেখানে কারও অবস্থান ছিল না। কিন্তু পুরনো সেই ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়ে আবারও তারা অপতৎপরতায় জড়িত হন।’
এছাড়া ১৮ এপ্রিল হেফাজত নেতা মামুনুল হককে গ্রেফতারের পর বিকালে বায়তুল মোকাররম এলাকায় বিক্ষোভ চলছে—এমন একটি ভিডিও সরাসরি সম্প্রচার করা হয় বিভিন্ন আইডি থেকে। কিন্তু সেই সময় বায়তুল মোকাররম এলাকায় এ ধরনের কোনও বিক্ষোভ কিংবা মিছিল অনুষ্ঠিত হয়নি। পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু বক্কর সিদ্দিকী বলেন, ‘বায়তুল মোকাররম এলাকা রবিবার বিকালে ছিল শান্ত। সেখানে কোনও ধরনের বিক্ষোভ-সমাবেশ হয়নি।’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ পুরনো ভিডিও ছড়িয়ে দিতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আরও পড়ুন : লকডাউনের ১৫ দিনে এলো এক মাসের বেশি রেমিট্যান্স
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির লক্ষ্যে এ ধরনের অপতৎপরতা দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ব্যবহারের প্রবণতায়। এ ধরনের অসত্য তথ্য ও পুরনো ঘটনা জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। জনগণের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। তারা বলছেন, এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সক্রিয় রয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের কাজ চলছে।
প্রযুক্তিবিদ তানভির খান জোহা বলেন, ‘প্রযুক্তির এ ধরনের অপব্যবহার রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং বিটিআরসির কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। বাজারে বিভিন্ন ধরনের অ্যাপস রয়েছে, যেগুলো খুবই ক্ষতিকারক। এসব অ্যাপসের মাধ্যমে পুরনো যেকোনও ঘটনা লাইভে সম্প্রচার করা যায়। এতে যেকোনও সময় যেকোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থেকে যায়। এটি একটি দণ্ডনীয় অপরাধ। যেকোনও অ্যাপ দিয়ে লাইভ সম্প্রচারের বন্ধে বিটিআরসিকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।’
পুলিশ সদর দফতরের এআইজি সোহেল রানা বলেন, ‘পুরনো কোনও সংঘর্ষ কিংবা আন্দোলনের ঘটনা লাইভ সম্প্রচার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে—এমন বেশ কিছু অভিযোগ আমরা পেয়েছি। বিষয়গুলো আমরা খতিয়ে দেখছি। এ পর্যন্ত বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর সঙ্গে জড়িত যাদেরই পাওয়া যাবে, তাদের গ্রেফতার করা হবে।’
জানা গেছে, প্রযুক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে লাইভ করছে, এমন প্রায় অর্ধশতাধিক আইডি নজরদারিতে রেখেছে সাইবার পুলিশ। এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ-ডিএমপির সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘ফেক আইডি কিংবা অন্য কোনও আইডি থেকে যারা এগুলো প্রকাশ করছে, তাদের বিষয়ে আমাদের নজরদারি রয়েছে। ফেসবুকে নতুন আইডি খুললে তার সব তথ্যই আমাদের কাছে চলে আসবে। ফেক আইডি থেকেও কেউ বিভ্রান্তিমূলক ভিডিও ছড়ালে আমরা তাদের আইনের আওতায় আনছি।’
তিনি বলেন, ‘ফেক আইডি থেকে যারা বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়াচ্ছে, আমরা তাদের শনাক্ত করছি। এরইমধ্যে বেশ কয়েকজনকে এ ধরনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে।’ সোহেল রানা জানান, এ ধরনের ৬০টি ফেসবুক আইডি ও পেজ সাইবার টিমের মনিটরিংয়ে রয়েছে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যারা বিভিন্ন ধরনের অপতৎপরতার সঙ্গে জড়িত রয়েছে, তাদের বিষয়ে আমরা নজরদারি করছি। এরইমধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনার পেছনে কী উদ্দেশ্য রয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদে তা জানা সম্ভব হবে।’
সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন
অভি/ ২১ এপ্রিল