আজ রোজার সপ্তম দিন। রহমতের আভায় আল্লাহর প্রিয় বান্দার চেহারায় একটা লাবণ্য দেখা দেয়। সিয়াম সাধনার আলোয় ঝলমলে হয়ে ওঠে মোমিনের চেহারা। মূলত আল্লাহর ইবাদতেই বান্দার আসল স্বাদ, তৃপ্তি। মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মানুষ, তোমরা তোমাদের রবের ইবাদত করো। যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদের এবং তোমাদের আগের যারা ছিল তাদের। যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করো।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২১)
অন্য এক আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আমি প্রত্যেক জাতির মধ্যেই রাসুল পাঠিয়ে এই বার্তা দিয়েছি যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো এবং তাগুতকে (সীমা লঙ্ঘনকারী) বর্জন করো।’ (সুরা নাহল : আয়াত ৩৬)
হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানবজাতির রহমতস্বরূপ পৃথিবীতে আগমন করেছিলেন। মানুষকে আল্লাহর দিকে ফেরাতেই চেষ্টা করেছেন। দাওয়াতের মাধ্যমে প্রতিটি মানুষকে আল্লাহর দিকে ফেরানোর জন্য মেহনত করেছেন। কোভিডের কঠিন সময়ে রহমতের স্নিগ্ধ আবহ শেষের দিকে। চলমান সংকট মহামারি-অতিমারি কোভিড সংক্রমণের সময়েও মানুষকে আল্লাহর দিকেই ফিরতে হবে। এ ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই। আল্লাহভীতির প্রগাঢ় স্বরূপচিত্রই হলো তাকওয়া। আভিধানিক অর্থে তাকওয়া বলা হয়, আল্লাহভীতি, পরহেজগারি, দিনিয়াত, বিরত থাকা, আত্মার পরিশুদ্ধি ও যেকোনো অনিষ্ট থেকে নিজেকে রক্ষা করা প্রভৃতি। তাকওয়া অর্জন মোমিনের অনেক বড় স্বপ্ন। শরিয়তের পরিভাষায় সব ধরনের অন্যায় ও পাপাচার থেকে মহান আল্লাহর ভয়ে কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে নিজেকে পরিচালনা করাকেই তাকওয়া বলে। আর তাকওয়া অর্জন করতে পারলেই মোমিনের সবটুকু সফলতা লাভ হয়। তাকওয়া অর্জন হলে আর কিছু লাগে না। তাকওয়া মূলত আল্লাহর ভালোবাসা পেতে বান্দাকে অগ্রসর করে দেয়।
আরও পড়ুন : রোজা রাখার ১০ পুরস্কার!
মোমিন তাকওয়া অর্জনকে জীবনের সবচেয়ে বড় পাথেয় মনে করে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা তাকওয়ার কথা খুব গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। রোজার বৈধতা বা অবশ্য কর্তব্যের এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল। যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো। (সুরা বাকারা : আয়াত ১৯৮৩)
কোরআনের স্পষ্ট ভাষ্য হলো, ‘লাআল্লাকুম তাত্তাকুন’ অর্থাৎ যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো। বান্দার এই প্রশিক্ষণের সাফল্য এখানেই। রোজাদার সবকিছু থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রেখে অনন্তময়ের জান্নাত লাভের নেশায় বুঁদ হয়ে তাকওয়া অর্জনের পেছনেই সময় কাটাবে। আলোচ্য আয়াতে পূর্ববর্তীদের রোজার বিষয়টি এনে সমকালীন মানুষকে রোজার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন মহান আল্লাহতায়ালা।
তাকওয়া অর্জনের উপায় সম্পর্কে হজরত কাব আল আহবার (রা.)-কে হজরত উমর (রা.) প্রশ্ন করলে তিনি উল্টো জানতে চান, আপনি কি কখনো কণ্টকাকীর্ণ রাস্তা অতিক্রম করেছেন? জবাবে উমর বললেন, হ্যাঁ, কাব বলেন, কীভাবে? এরপর উমর বলেন, অতিসাবধানতার সঙ্গে দ্রুতবেগে এ রাস্তা অতিক্রম করেছিলাম। কাব বললেন, এটাই তাকওয়া।
মানুষের বাস্তব জীবনে তাকওয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। ব্যক্তি, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক পরিম-লের প্রতিটি ক্ষেত্রেই একজন তাকওয়াবান মানুষের অতি প্রয়োজন। আজকের সমাজ-সংসার সবখানে তাকওয়ার উপস্থিতি থাকলে উন্নয়ন, সম্পর্ক ও সমৃদ্ধির নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতো। অশান্তি ও অকল্যাণের পথ বিনষ্ট হয়ে সতত মঙ্গলাকাক্সক্ষী মানুষের সুন্দরম তৎপরতায় সজীব হয়ে উঠত এ ধরাধাম। তাই তাকওয়া অর্জনের সহজ-সুন্দর সময় হলো, রোজার মাস। এ মাসেই তাকওয়ার ছোঁয়ায় অনন্য সাফল্য চূড়ায় উন্নীত হতে পারে মোমিন। আল্লাহতায়ালা আমাদের তাওফিক দিন। আমিন
এন এইচ, ২০ এপ্রিল