ইসলাম

পবিত্র মাহে রমজানে বাড়ুক দান

মাওলানা মাসউদুল কাদির

দান করার জন্য সবচেয়ে ভালো সময় রোজার মাস। পবিত্র মাহে রমজানে দানের বিষয়টি অতীব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দানে মানবতা জেগে ওঠে। আমরা স্বভাবতই দান করে থাকি। দানের জন্য একটি মোক্ষম সময়ও আমরা অনুসন্ধান করি। কেউ শবেমেরাজে, কেউ শবেবরাতে, কেউ ঈদের দিনে, জুমার দিনে অথবা অন্য কোনো সময়ে দান করতে পছন্দ করি। কিন্তু রমজানের পবিত্র আবহে দানের বিষয়টি সম্পূর্ণই আলাদা। এর তাৎপর্য নিঃসন্দেহে অনেক বেশি। কোরআনে ‘ইনফাক ফি সাবিলিল্লাহ’ অর্থাৎ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয়কে অতীব গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। ইচ্ছা-অনিচ্ছায় আমরা দান করে থাকি। এ দানের প্রথম শর্ত হলো পরিশুদ্ধ নিয়ত। নিয়ত পবিত্র হলে দানও পবিত্র হয়। এই দানে নিজেরও লাভও হয়। রমজানকে সহানুভূতির মাস হিসেবেও দেখা হয়। সে দিক থেকে রমজানে অন্যের প্রতি সহমর্মিতা ও সহানুভূতি প্রকাশের মনোভাবকে অবশ্যই স্বাগত জানানো উচিত।

রমজানে দানের ক্ষেত্রে হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন অনেক অগ্রগামী। দিলদরিয়া। মানবজাতিকে তার প্রতিটি কর্মের মাধ্যমে যে শিক্ষা তিনি দিয়েছেন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। নবীজী দান করতেন। এক হাতে আসত অন্য হাতে বিলাতেন। বিলানোটা নবীজীর স্বাভাবিক চরিত্র ছিল। এটা রমজানে আরো বহুগুণে বেড়ে যেত।

ইবনে আব্বাস (রা.) এক হাদিসে বলেন, ‘রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন মানুষের মধ্যে সর্বাধিক দানশীল। রমজানে তিনি সর্বাধিক দানশীল হতেন। জিবরাইল (আ.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎকালীন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতেন মুক্ত বায়ুর তুলনায় অধিক কল্যাণময় দানশীল। (সহিহ বোখারি)

আরও পড়ুন : বিনা কারণে রোজা পরিত্যাগের শাস্তি ভয়াবহ

নবীজী দানের হাতকে সুউচ্চ হাত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। নিজের হাতকে উত্তম বলেননি। দাতার হাতকে উত্তম বলা মানে দাতাকেই উত্তম বলা। তাই দানশীল ব্যক্তির হৃদয়ে রহম সৃষ্টি হয়।

স্বাভাবিক দান আর জাকাত আলাদা জিনিস। দান মানুষ সব সময় করবে। কিন্তু জাকাত সব সময় দেবে না। এক বছর পূর্ণ হলে পরেই জাকাত আদায় করবে।

অধিক পুণ্য লাভের আশাতেই জাকাতও অনেকে রমজানে দেন। এটা ভালো। তবে দানের ক্ষেত্রেও পুণ্যবান বান্দাকে অগ্রগামী থাকতে হয়। ক্ষুধার্তকে পানাহার করাতে হয়। সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসতে হয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমরা কি দেইনি তাকে দুটি চোখ এবং জিহবা ও দুটি ঠোঁট? আর আমরা তাকে দেখিয়েছি দুটি পথ। কিন্তু সে তো গিরিসংকটে প্রবেশ করেনি। তুমি কি জানো গিরিসংকট কী? তা হলো দাসমুক্তি। অথবা ক্ষুধার দিনে অন্নদান করা ইয়াতিম নিকটাত্মীয়কে। অথবা ভূলুণ্ঠিত অভাবগ্রস্তকে। (সুরা বালাদ : আয়াত ৮-১৬)

কৃতজ্ঞতা আদায় করা একজন মুমিনের শ্রেষ্ঠ আলামত। অকৃতজ্ঞকে আমাদের সমাজেও কেউ দেখতে পারে না। কৃতজ্ঞতা আদায়ে দুনিয়া ও আখিরাতে আমাদের সম্মান ও সম্পদ আরো বৃদ্ধি পায়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার করো, তাহলে আমি অবশ্যই তোমাদের বেশি বেশি করে দেব।’ (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৭)

কেননা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্ষুধার্তকে খাদ্য দান করতে কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘তোমরা ভিক্ষুক (ক্ষুধার্তকে) কিছু না কিছু দাও, আগুনে পোড়া একটা খুর হলেও।’ (নাসাই শরিফ)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পূর্ণ আনুগত্যকারী উম্মত হওয়ার জন্য ক্ষুধার্তকে খাদ্য দান করতে হবে। কেবল নিজে খেলে চলবে না। আল্লাহর রাসুল বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই সে ব্যক্তি পূর্ণ মোমিন নয়, যে নিজে পেট পুরে আহার করে কিন্তু তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত থাকে।’ (বায়হাকি)। মুসলিম মানে হলো আত্মসমর্পণকারী। পরের জন্য হবে আত্মোৎসর্গকারী। নিজের সঙ্গে সঙ্গে অন্যের, মানবতার ও মানুষের জন্যও ভাববে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে লোক তার কোনো মুসলিম ভাইয়ের অভাব পূরণের চেষ্টা করে, মহান আল্লাহ তার অভাব পূরণ করবেন। (মুসলিম শরিফ)

এই আশ্বাস অনেক বেশি ভালোবাসার। কল্যাণ আর মঙ্গল কামনায় নবীজীর বাণী একজন মানুষের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম। মানুষকে ভালোবেসে ইহজগৎ সুন্দর করতে পারলে পরকাল নিশ্চিত সুন্দর হবে তা হলফ করেই বলা যায়। আল্লাহ তায়ালা আমাদের তাওফিক দিন। আমিন।

এন এইচ, ১৯ এপ্রিল

Back to top button