জাতীয়

হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ছুটছে মানুষ

ঢাকা, ০১ এপ্রিল – জ্বর-সর্দি-কাশি-শ্বাসকষ্টের রোগীদের নিয়ে স্বজনরা হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ছুটছেন। কিন্তু কোথাও চিকিৎসা মিলছে না। যেই হাসপাতালে রোগী নিয়ে যান সেখান থেকেই ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে শেষতক অনেকে আসছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তবে এই হাসপাতালে করোনা উপসর্গ আছে এমন রোগী ভর্তির মতো সুযোগ কমে গেছে। সুস্থ হয়ে কোনো রোগী বাড়ি ফিরলে কেবল সেখানে নতুন রোগী ভর্তি করা হচ্ছে।

ওদিকে প্রতিদিনই লাফিয়ে বাড়ছে শনাক্ত ও মৃত্যু। রাজধানীর করোনা নির্ধারিত সব হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা মিলছে না। সাধারণ শয্যাও খালি নেই অনেক হাসপাতালে। ফলে রোগীর স্বজনদের একটি শয্যার জন্য হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ছুটতে হচ্ছে। প্রয়োজনে রোগীকে অক্সিজেন দিতে না পারায় দুই-তিনদিনের মধ্যে তাদের অবস্থা খারাপ হচ্ছে। শ্বাসকষ্টসহ তাদের কাউকে বাড়িতে ফেরত নেয়া হচ্ছে। সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় প্রতিদিন পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে বাড়ছে ভিড়। সকাল থেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও অনেকে পরীক্ষা করাতে পারছেন না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনা ডেডিকেটেড হিসাবে তালিকাভুক্ত এবং তালিকাভুক্ত নয়-এমন একাধিক বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, শয্যার অভাবে প্রতিদিন রোগীদের ফেরত দিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। দিনদিন করোনা পরিস্থিতি বেসামাল হয়ে পড়ছে। শয্যার অভাবে অনেক রোগী বাড়িতে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। অথচ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এসব রোগীর পরিপূর্ণ আইসোলেশন বাসায় সম্ভব নয়। এতে তাদের কারণে সংক্রমণ চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়বে। এ ছাড়া সঠিকভাবে কোয়ারেন্টিনও করা হচ্ছে না।

আরও পড়ুন : এবার কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত বন্ধ ঘোষণা

এদিকে গতকাল সকাল থেকেই সরজমিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও করোনা ওয়ার্ডে দেখা গেছে রোগীদের উপচে পড়া ভিড়। অনেকেই রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে সিট না পেয়ে ভিড় করছেন এখানে। কিন্তু এখানেও সিট খালি নেই। স্বজনরা এমন রোগীদের নিয়ে চিকিৎসকদের পেছনে হন্যে হয়ে ছুটছেন আর কাকুতি মিনতি করছেন। দুপুর সাড়ে ১২টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে এম্বুলেন্স চালক মো. কাউসার জানান, তার গাড়িতে করোনার একজন নারী রোগী মোহাম্মদপুর থেকে নিয়েছেন। প্রথমে তিনি কিডনি হাসপাতাল এবং পরে হৃদরোগ হাসপাতাল ঘুরে এখানে এসেছেন। ঢাকা মেডিকেলেও এই রোগী ভর্তির সিট মেলেনি। তারা মুগদায় যাওয়ার কথা বলছেন। তিনি বলেন, করোনার রোগী অনেক বেড়েছে। দিনের চেয়ে রাতের দৃশ্য আরো ভয়াবহ। পরে মুগদা হাসপাতালে ওই রোগীকে ভর্তি করা হয়। এই প্রসঙ্গে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বলেন, আমাদের এখানে কোভিড রোগীর জন্য যত পরিমাণ শয্যা ছিল তা রোগীতে পূর্ণ হয়ে গেছে। ইচ্ছা করলেও অতিরিক্ত রোগী নিতে পারছি না।

কারণ কোভিড রোগীদের অক্সিজেন দরকার হয়। প্রায় ৭০০ রোগী রয়েছেন এখানে। হাসপাতালে মেডিসিন বিল্ডিংয়ে ৫৮০ রোগীর জায়গায় প্রায় ৬০০ রোগী রয়েছেন। যেখানে সেন্ট্রাল অক্সিজেনের বাইরে সিলিন্ডার অক্সিজেন দিয়ে বাকিদের রাখা হয়েছে। আর সার্জারি বিল্ডিংয়ে ২০০ রোগীর ব্যবস্থা রয়েছে। যেখানে গাইনি ও সার্জারি রোগী থাকছেন। সেখানে মেডিসিনের ডাক্তাররা যান না। তিনি অনেকটা নিজের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরে বলেন, নতুন রোগী ভর্তি করার মতো আর কোনো শয্যা নেই ঢাকা মেডিকেলে। কোনো রোগী তুলনামূলকভাবে একটু সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেই কেবল নতুন রোগী ভর্তি হতে পারছেন। সেটাও গতকাল করা যায়নি। তিনি জানান, ৮০ থেকে ৯০ ভাগ রোগী বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে এখানে আসেন। এখানে ভর্তি হতে না পারলে তারা কোথায় যাবেন। আমরা এখন তাদের ভর্তি করতে পারছি না। রোগী ভর্তির জন্য অনেকে চেষ্টা করছেন। কিন্তু তাদের ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনার কথা উল্লেখ করে পরিচালক বলেন, করোনার রোগীদের জন্য ১০টি আইসিইউ সিট বাড়িয়ে ২০টি করা হচ্ছে।

এদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) করোনা ইউনিটে আইসিইউ’র সংখ্যা বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন নবনিযুক্ত ভিসি অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মিল্টন হলে ‘করোনা পরিস্থিতি: বর্তমান প্রেক্ষিত ও ভবিষ্যৎ করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বর্তমানে বিএসএমএমইউ’তে করোনা ইউনিটে আইসিইউ সংখ্যা রয়েছে ১৮টি। আরো ১০টি বাড়ানো হবে। আর করোনা ইউনিটের জন্য শয্যা রয়েছে ১৫০টি যা ১০০টি বাড়িয়ে করা হবে ২৫০টি। এ ছাড়াও তিনি আহ্বান জানান, করোনার সংক্রমণরোধে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, বিয়ে সাদি ও মানববন্ধন যাতে আপাতত বন্ধ রাখা হয়।‌

সূত্র : মানবজমিন
অভি/ ০১ এপ্রিল

Back to top button