এশিয়া

মিয়ানমারে অভ্যুত্থান বিরোধী বিক্ষোভে গুলি, নিহত ২

নেপিডো, ২০ ফেব্রুয়ারি – মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ে সামরিক জান্তাবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশের ছোড়া গুলিতে অন্তত দু’জন নিহত ও আরও ২০ জন আহত হয়েছেন। শনিবার মান্দালয়ের স্বেচ্ছাসেবী জরুরি সেবাবিষয়ক সংস্থা পারাহিতা দারহির বরাত দিয়ে ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে।

পারাহিতা দারহির নেতা কো অং বলেছেন, ‘পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে দু’জন নিহত ও ২০ জন আহত হয়েছেন।’

গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলে নেওয়ার পর থেকে দেশটির লাখ লাখ মানুষ সেনাশাসনের অবসানের দাবিতে বিক্ষোভ করে আসছেন।

দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলমান এই বিক্ষোভে শনিবার দেশটির জাতিগত সংখ্যালঘু, লেখক-কবি এবং পরিবহন শ্রমিকরাও যোগ দিয়েছেন। তারা সেনাশাসনের অবসান ঘটিয়ে দেশটির নির্বাচিত নেত্রী অং সান সু চি এবং অন্যান্যদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি তুলেছেন।

রয়টার্স বলছে, শনিবার মান্দালয়ে অভ্যুত্থানবিরোধীরা বিক্ষোভ শুরু করলে পুলিশ টিয়ার গ্যাস এবং গুলি বর্ষণ করে। এ সময় কিছু বিক্ষোভকারী পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলতি ছোড়েন। তবে পুলিশ এ ঘটনায় রাবার বুলেট অথবা তাজা গুলি ব্যবহার করেছে কিনা প্রাথমিকভাবে তা পরিষ্কার নয়।

মিয়ানমারের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব মিয়ানমারের সহযোগী সম্পাদক লিন খাইং ও মান্দালয়ের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরা বলেছেন, একজন মাথায় আঘাত পেয়ে মারা গেছেন।

আরও পড়ুন : কাবুলে বোমা হামলায় কারা চিকিৎসকসহ ৫ জন নিহত

তিনি বলেছেন, একজন মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন। বুকে গুলিবিদ্ধ অন্য একজন আহত অবস্থায় পরে মারা যান। তবে এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশের মন্তব্য জানা যায়নি।

মিয়ানমারের প্রবীণ গণতন্ত্রকামী নেত্রী অং সান সু চির সরকারকে সেনাবাহিনী উৎখাতের পর থেকে অভ্যুত্থানের বিরোধিতায় যে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে; তা প্রশমনের কোনও লক্ষণ নেই। দেশটির সেনাবাহিনী নির্বাচনের মাধ্যমে বিজয়ীর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের অঙ্গীকার করলেও তা নিয়ে বিক্ষোভকারীদের সন্দেহ রয়েছে।

গত সপ্তাহে দেশটির রাজধানী নেইপিদোতে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ গুলি ছুড়লে তা মিওয়ে থেওয়ে থেওয়ে খাইংয়ে নামের এক তরুণীর মাথায় আঘাত হানে। পরে শুক্রবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি; দেশটিতে এবারের সামরিক অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে এটিই ছিল প্রথম মৃত্যু।

বিক্ষোভে শামিল সংখ্যালঘুরাও
শনিবার সকালে মিয়ানমারের প্রধান শহর ইয়াঙ্গুনে দেশটির জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি, লেখক ও কবি এবং পরিবহন শ্রমিকদের একটি মিছিল শহরের কয়েকটি সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে মিওয়ে থেওয়ে থেওয়ে খাইংয়ের স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করেন।

মিছিলের অন্যতম সংগঠক এবং মিয়ানমারের অন্যতম সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী নাগা কমিউনিটির যুব নেতা কে জুং বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেন, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, অং সান সু চির মুক্তি ও সংবিধান সংশোধনের পাশাপাশি তাদের অন্যতম দাবি হল— মিয়ানমারে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা।

মিওয়ে থেওয়ে থেওয়ে খাইংয়ের মৃত্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে শোক প্রকাশ করেছে বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা। গত বছরের জাতীয় নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে ১ ফেব্রুয়ারি ভোরবেলায় রক্তপাতহীন এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশের রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী।

দেশটির সেনাপ্রধান মিং অং হ্লেইং এর নেতৃত্বে সংঘটিত ওই অভুত্থানে বন্দি হন মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী সু চি এবং তার দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) বেশ কয়েকজন সদস্য। তাদের মধ্যে সু চির মন্ত্রিসভার কয়েকজন মন্ত্রী, প্রাদেশিক মুখ্যমন্ত্রী ও পার্লামেন্ট সদস্যরাও রয়েছেন।

সেনাবাহিনীর অভুত্থানের পরপরই ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন মিয়ানমারের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। ২ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশটির রাজধানী নেইপিদো, প্রধান শহর ইয়াঙ্গুনসহ বিভিন্ন শহরে শুরু হয় অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ।

ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, কানাডা ও নিউজিল্যান্ড অভুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া সামরিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সীমিত আকারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তাদের সঙ্গে ঐকমত্য জানিয়ে মিয়ানমারে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছে জাপান এবং ভারতও।

সূত্র: ঢাকাপোস্ট
এন এ/ ২০ ফেব্রুয়ারি

Back to top button