পশ্চিমবঙ্গ

শুভেন্দু-ছোঁয়ায় অপবিত্র শহীদ বেদী গঙ্গাজলে ‘শুদ্ধ’ করে পার্থ-মদনের শ্রদ্ধা

স্বপ্নীল মজুমদার

ঝাড়গ্রাম, ০৭ জানুয়ারি – বৃহস্পতিবার সাত সকালে নেতাই গ্রামের শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধা জানালেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। বেদী ছুঁয়েছেন শুভেন্দু। তাই অপবিত্র হয়েছে শহীদ বেদী। দুপুরে সেই বেদী গঙ্গাজল ছিটিয়ে শুদ্ধ করলেন ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের কো-অর্ডিনেটর অজিত মাহাতো ও বিনপুর-১ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি শ্যামল মাহাতো। তারপর দুপুরে নেতাই গ্রামে এসে শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধা জানালেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় সহ তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা। দু’টি কর্মসূচিতেই হাজির ছিলেন নেতাই-কাণ্ডে নিহত পরিবারের সদস্য ও আহতরা। ছিলেন নেতাই শহীদ স্মৃতিরক্ষা কমিটির সভাপতি দ্বারকানাথ পণ্ডা। নেতাই নিয়ে টানাপোড়েন চলছে শুভেন্দু ও তৃণমূলের মধ্যে।

শুভেন্দু বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর থেকে ‘ভাইপো’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণের নিশানা করেছেন। নেতাইয়ের সঙ্গে দশ বছরের সম্পর্কের প্রসঙ্গ টেনে তৃণমূলের শীর্ষ নেতা-নেত্রীদের বিরুদ্ধে তোপ দাগছেন। এমন পরিস্থিতিতে দো-টানায় পড়েছেন শহীদ পরিবারগুলি ও আহতরা। তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক ছত্রধর মাহাতো হুঙ্কার দিয়েছিলেন, শুভেন্দুকে নেতাই গ্রামে ঢুকতে দেওয়া হবে না। কারণ নেতাই তৃণমূলের উত্তরাধিকার।

তবে এদিন সকাল সাড়ে আটটায় অনুগামীরা দু’শো বাইকের র‍্যালি করে শুভেন্দুকে নেতাইয়ে নিয়ে আসেন। সঙ্গে ছিলেন জেলা বিজেপির সভাপতি সুখময় শতপথী সহ জেলা বিজেপির নেতৃত্ব। শহীদ বেদীতে মালা দিয়ে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দেন শুভেন্দু। তারপর জানিয়ে দেন, “২০১১ সালে এখানে এসে লাশ কুড়িয়েছিলাম। আহতদের হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম। গত বছরও এসেছিলাম। আগামী বছর বেঁচে থাকলে আবার আসব। যাঁরা দশ বছরে কোনদিন আসেননি, তাঁরা এখন অনেক কথা বলছেন। আমি কোনদিন পার্টির ঝান্ডা নিয়ে এখানে আসিনি।” নেতাই গ্রামে যাওয়ার রাস্তায় তৃণমূলের সার সার পতাকা দেওয়ার প্রসঙ্গে শুভেন্দু জানান, বিষয়টা তাঁর খুব খারাপ লেগেছে।

আরও পড়ুন : সামান্য দুর্নীতিরও প্রমাণ দিতে পারলে স্বেচ্ছায় ফাঁসির দড়িতে ঝুলব: অভিষেক

তিনি কখনও এমন কাজ করেননি। শুভেন্দু বলেন, “আমরা এখানে কোনদিন রাজনীতি করিনি। আজ যেহেতু কুর্মি সমাজের একটা অংশ বনধ ডেকেছে, আমরা সীমিত ভাবে অনুষ্ঠানটা করেছি। ভবিষ্যতে নেতাইবাসীর পাশে থাকব। এখানে প্রচুর মানুষের ক্ষোভ ছিল। গত বছর মানুষের সঙ্গে এসে কথা বলেছি। মানুষের সঙ্গে কথা বলে আমি যা যা কথা দিয়েছিলাম, তা পালন করেছি।” নেতাইবাসীর সঙ্গে তাঁর আত্মিক সম্পর্কের প্রসঙ্গ টেনে শুভেন্দু নাম না করে একহাত নেন তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক ছত্রধর মাহাতোকে। শুভেন্দুর কথায়, “দশ বছর জেলে কাটিয়ে এই সম্পর্কটা কেউ যদি ছেঁড়ার চেষ্টা করেন, সেটা এত সহজে হবে না। করণ, ওই লোকের জন্য মানুষগুলো মারা গিয়েছিল। বিগত দিনে জনসাধারণের কমিটির নামে গোটা এলাকাটিকে যারা বিশৃঙ্খল করেছিল, তাঁরা এসে গণতন্ত্রের কথা বলবেন? তাঁরা বলবে শুভেন্দু অধিকারীকে লালগড়ে আটকে দেব? ক্ষমতা থাকলে আটকে দেখাক তো? আমি ভয় করি না।”

দুপুরে নেতাই গ্রামে এসে শুভেন্দু প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “উনি এখন অন্য দলে গিয়েছেন, কিন্তু ইতিহাস নিয়ে তো যেতে পারবেন না। ব্যক্তি যায়, কিন্তু ইতিহাস তৈরি করে সংগঠন, ইতিহাস তৈরি করে মানুষ।”
পার্থের দাবি, যে যেখানে যাক, মমতার সঙ্গে জনতা আছেন, নেতাই এর গ্রাম আছে।

নেতাই নিয়ে শুভেন্দুর কৃতিত্ব দাবি প্রসঙ্গে পার্থের প্রতিক্রিয়া, “উনি অন্য দলের পতাকা ধরে ইতিহাসকে বিকৃত করতে চাইছেন। যে ইতিহাস লেখা হয়েছে সেই ইতিহাস থাকবে। যে ব্যক্তি চলে গিয়েছেন, তিনি ইতিহাস থেকে ঝরে পড়বেন।”

নেতাইয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখান থেকে কিলোমিটার তিনেক দূরে লালগড়ের হাটচালায় তৃণমূলের ব্লক কমিটির উদ্যোগে নেতাই শহীদ স্মরণে সভা হয়। সেখানে পার্থ ছাড়াও শুভেন্দুর বিরুদ্ধে সরব হন মদন মিত্র, সৌমেন মহাপাত্র, ছত্রধর মাহাতোরা। ছত্রধর হুঁশিয়ারি দেন, শুভেন্দু জঙ্গলমহলের যেখানেই যাবেন, সেখানেই বিক্ষোভ দেখানো হবে।

এন এ/ ০৭ জানুয়ারি

Back to top button