পেঁয়াজ রসুন আদা আলুর দামে বড় লাফ
ঢাকা, ০১ মে – ঈদুল ফিতরের দু-এক দিন আগেও পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ২৫ থেকে ৩৫ টাকা। অথচ এখন এক কেজি কিনতে গেলে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। এ ছাড়া আদা, রসুন ও আলুর দামও বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। গতকাল রোববার রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেট, হাতিরপুল কাঁচাবাজার ও কারওয়ান বাজারে দেখা গেছে এমন চিত্র।
ভোক্তাদের দাবি, রোজার আগেও ব্যবসায়ীরা কৌশলে কয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়েছেন। এখন ঈদুল আজহায় বেশি চাহিদা থাকে এমন পণ্যের দাম আগেভাগেই বাড়ানো হচ্ছে। রাজধানীর হাতিরপুল কাঁচাবাজারে পেঁয়াজের দাম নিয়ে কথা হয় আমিনুর রহমান নামে এক ক্রেতার সঙ্গে। তিনি বলেন, ঈদের ছুটি কাটিয়ে ঢাকায় এসেই দেখি পেঁয়াজের দাম চায় ১৬০ টাকা। আদা কিনলাম ৩৫০ টাকা দিয়ে। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, এবার নাকি পেঁয়াজের ফলন ভালো হয়েছে। তাহলে দাম তো কমার কথা। মাঝেমধ্যে হাঁকডাক করে অভিযান পরিচালনা করলেও বাজারে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন হয়েছে ২৩ লাখ ৩০ হাজার টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে উৎপাদন বেড়ে দাঁড়ায় ৩৬ লাখ ৪১ হাজার টন। সেই হিসাবে তিন বছরের ব্যবধানে উৎপাদন বেড়েছে ১৩ লাখ ১১ হাজার টন। অন্যদিকে কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৩০ লাখ টন। সে অনুযায়ী চাহিদার চেয়েও প্রায় ৬ লাখ টন বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। পাশাপাশি সারাবছরই ভারত ও মিয়ানমার থেকে কমবেশি পেঁয়াজ আমদানি হয়। এর পরও পণ্যটির দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। বাজারে এখন আমদানি করা পেঁয়াজ নেই, সবই দেশি। টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের এ সময়ের তুলনায় বর্তমানে পেঁয়াজের দাম ৭২ শতাংশ বেশি।
দাম বাড়ার পেছনে নানা যুক্তি দাঁড় করাচ্ছেন খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা। তাঁদের দাবি, গত ১৫ মার্চ থেকে আমদানি অনুমতিপত্র বা আইপি বন্ধ থাকায় ভারত থেকে পেঁয়াজ আসছে না। ফলে পুরো চাহিদা মিটছে দেশি পেঁয়াজ দিয়েই।
কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজ-রসুন ব্যবসায়ী কামরুল হাসান বলেন, ঈদের পর হঠাৎ করে পাইকারি বাজারে দাম বাড়া শুরু হয়েছে পেঁয়াজ-রসুনের। প্রতিদিনই দুই-তিন টাকা করে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। আমদানি বন্ধ থাকায় দাম বাড়ছে বলে মনে করেন তিনি। তবে রসুন ও আদার দাম বাড়ার কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, শ্যামবাজারে পাইকাররা হঠাৎ করে আদা-রসুনের দাম বাড়িয়েছেন। এ জন্য খুচরা বাজারেও দাম বাড়তি।
পেঁয়াজের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দাম বাড়ছে আদা ও রসুনের। সপ্তাহখানেক আগে দেশি রসুনের কেজি ১২০ ও আমদানি করা চীনের আদা ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দাম বেড়ে এখন দেশি রসুন ১৫০ থেকে ১৫৫ এবং চীনের রসুন ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে আদার দামও বেড়েছে ৫০ থেকে ১২০ টাকা। দেশি আদা এক সপ্তাহ আগে ১৫০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন গুনতে হবে ২০০ থেকে ২৩০ টাকা। আমদানি করা চীনের আদা বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে তা বিক্রি হতো ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়। টিসিবির তথ্য মতে, গত বছরের এ সময় রসুনের দাম ছিল ৫০ থেকে ১৩০ এবং আদার দাম ছিল ৭০ থেকে ১৪০ টাকা মধ্যে।
গত ৫ থেকে ৬ দিনে আলুর দাম বেড়েছে কেজিতে ৭ থেকে ১০ টাকা। ঈদের দুই-তিন দিন পরেও আলু বিক্রি হয়েছে ২৫ টাকায়। এখন বিক্রি হচ্ছে ৩২ থেকে ৩৫ টাকা দরে। জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়া, রাশিয়া, শ্রীলঙ্কাসহ কয়েকটি দেশে আলু রপ্তানি হচ্ছে।
জাপানেও রপ্তানির প্রক্রিয়া চলছে। রপ্তানি করার কারণে দাম বাড়তে পারে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। কারওয়ান বাজারের আলু ব্যবসায়ী সাইদুল ইসলাম বলেন, আলুর দাম সাধারণত সব সময় একই রকম থাকে। কিন্তু শুনছি আলু রপ্তানি হচ্ছে। এ কারণে হয়তো দাম বাড়ছে।
এদিকে মাছের বাজারেও চড়াভাব দেখা গেছে। বিশেষ করে চিংড়ি, ইলিশজাতীয় মাছের দাম বাড়ছে। আকারভেদে চিংড়ি ৭০০ থেকে ১ হাজার ১০০ এবং ইলিশ ৮০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। রুই ও কাতলা মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়।
ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা
বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ১৫ টাকা বাড়াতে চান মিল মালিকরা। আগামী বুধবার থেকেই তা কার্যকর করতে চান তাঁরা। তাঁদের যুক্তি, ভোজ্যতেলে মূল্য সংযোজন করের (মূসক) ক্ষেত্রে যে ছাড় দেওয়া হয়েছিল, এর মেয়াদ গতকাল রোববার শেষ হয়ে গেছে। এখন বেশি ভ্যাট দিয়ে পণ্য আমদানি ও উৎপাদন করতে হবে। তাই খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ানোর পক্ষে তাঁরা। সয়াবিন ও পাম অয়েলের দাম বাড়ানোর বিষয়ে নিজেদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে গতকাল বাণিজ্য সচিব এবং বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি দিয়েছে ভোজ্যতেল পরিশোধন কারখানাগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। চিঠিতে বলা হয়, গত ১৬ মার্চ সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সয়াবিন ও পাম অয়েলের ওপর আমদানি পর্যায়ে আরোপিত মূসক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। ৩০ এপ্রিল প্রজ্ঞাপনটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তাই ভোজ্যতেলের কাঁচামালের ওপর আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ মূসক প্রদান করতে হবে। পাশাপাশি উৎপাদন পর্যায়েও ১৫ শতাংশ মূসক দিয়ে সোমবার (আজ) থেকে বাজারে পণ্য সরবরাহ করতে হবে।
সূত্র: সমকাল
এম ইউ/০১ মে ২০২৩