পশ্চিমবঙ্গ

সুকান্তকে থামিয়ে বাংলার সংগঠনের প্রশংসা মোদীর, পঞ্চায়েত ভোটের আগে দলকে চাঙ্গা করার চেষ্টা

কলকাতা, ১৭ জানুয়ারি – বিধানসভা নির্বাচনে হতাশাজনক ফল এবং তার পরে শাসক দল ‘তৃণমূল কংগ্রেসের সন্ত্রাস’-এর পরেও পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি লড়াইয়ে ফেরায় সাধুবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সূত্রের খবর, সোমবার দিল্লিতে জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে রাজ্যের সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সংগঠনের কাজকর্ম সম্পর্কে বলা শুরু করা মাত্র মোদী তাঁকে থামিয়ে কিছু কথা বলতে চান। তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন পরবর্তী সন্ত্রাস যে আকার নিয়েছিল, তার পরেও ওই রাজ্যের সংগঠন যে লড়াইয়ের ময়দানে থেকে তা যুঝেছে এবং আগের পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে, তার প্রশংসা করতেই হবে। এর পরে মোদী সুকান্তকে বক্তব্য শুরু করতে বলেন। তবে মোদী এই মন্তব্য করে পঞ্চায়েত ভোটের আগে বাংলায় দলকে চাঙ্গা করার চেষ্টা করলেও সংগঠনের প্রকৃত চিত্রটা যে ভাল নয়, জনান্তিকে স্বীকার করছেন রাজ্যের প্রতিনিধিরা। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তাতে ভোটে কতটা লড়াই দেওয়া যাবে, তা নিয়েই তাঁরা শঙ্কিত।

চলতি বছরে নয় রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরে নির্বাচন হলে সংখ্যাটি গিয়ে দাঁড়াবে দশে। লোকসভায় ভাল ফলের জন্য এ বছর সব রাজ্যেই জয়ের লক্ষ্য নিয়ে ঝাঁপানোর পরিকল্পনা নিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। ভোটমুখী রাজ্যগুলির দলীয় পরিস্থিতি ও জেতার রণকৌশল ঠিক করতে আজ থেকে দিল্লিতে শুরু হয়েছে বিজেপির দু’দিনের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক। বৈঠকের প্রথম পর্বে হিমাচল প্রদেশে এক শতাংশের কম ভোটে হার থেকে শিক্ষা নিয়ে আসন্ন নয় রাজ্যের ভোট ও লোকসভা নির্বাচনে ঝাঁপানোর নির্দেশ দিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নড্ডা। নড্ডা বলেন, ওই রাজ্যে মাত্র ০.৯ শতাংশ ভোটে পরাজিত হয়েছে দল। এক শতাংশের কম ভোটের পার্থক্য জয়-পরাজয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা শিক্ষণীয়। বৈঠকে বলা হয়, হিমাচল প্রদেশে দলের হারের প্রধান কারণ ছিল, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ও বিক্ষুব্ধ নেতাদের ভোটের ময়দানে নেমে দলীয় প্রার্থীদের ভোট কেটে নেওয়া। হিমাচল প্রদেশের ওই হার থেকে ভোটমুখী রাজ্যের নেতাদের শিক্ষা নিয়ে এগোনোর উপরে জোর দেন নড্ডা। এখন থেকেই ভোটমুখী রাজ্যগুলিতে গোষ্ঠী কলহের সমাধান করে সর্বসম্মত প্রার্থী দেওয়ার উপরে জোর দেওয়া হয় বৈঠকে। হিমাচল প্রসঙ্গে বিজেপি নেত্রী নির্মলা সীতারামন বলেন, “ওই রাজ্যে পাঁচ বছর অন্তর সরকার পরিবর্তন হয়। মাত্র এক শতাংশের কম ভোটে ওই রাজ্যে সেই প্রবণতা পাল্টাতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি।”

হিমাচলের ব্যর্থতার পাশাপাশি গুজরাত বিধানসভা নির্বাচনের সাফল্যকে তুলে ধরেছেন নড্ডা। বিজেপি নেতৃত্বের মতে, গুজরাতে সাফল্যের মূল কারণ হল বুথভিত্তিক কমিটি। একেবারে তৃণমূল স্তরে সক্রিয় ওই কমিটি সফল ভাবে নেতৃত্বের নির্দেশ পালন করাতেই আশাতীত ওই ফল এসেছে বলে দাবি করেন নড্ডা। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনগুলিতে তাই ভোটমুখী রাজ্যের নেতৃত্বকে গুজরাতের মডেল মেনে এগোনোর উপরে নির্দেশ দেন তিনি।

বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, তাঁরা গত এক বছর ধরে ৭২ হাজার বুথকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে নিয়ে এগোচ্ছিলেন। ইতমধ্যেই ১.৩০ লক্ষ বুথকে শক্তিশালী করতে সক্ষম হয়েছে দল। সূত্রের মতে, আগামী ছয় মাসে আরও প্রায় ৪০-৫০ হাজার বুথকে শক্তিশালী করার লক্ষ্য হাতে নিতে চাইছে দল। আজকের কর্মসমিতির বৈঠকে ভোটমুখী রাজ্যগুলির মধ্যে কর্নাটক, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড, মেঘালয়ের রাজ্য নেতৃত্ব দলের সাংগঠনিক পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে বিশদে রিপোর্ট জমা দেন। কাল অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনে রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা রয়েছে রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়, মধ্যপ্রদেশ, তেলঙ্গানা ও মিজোরামের।

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন
আইএ/ ১৭ জানুয়ারি ২০২৩

Back to top button