পশ্চিমবঙ্গ

বিসর্জন ট্র্যাজেডির তিন মুসলিম ‘সুপার হিরো’

কলকাতা, ০৮ অক্টোবর – পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ির বাসিন্দা মোহাম্মদ মানিক প্রতিবছর বিসর্জন দেখতে তার ভাষায় ‘ঠাকুর ভাসান’ দেখতে স্থানীয় মাল নদীর ঘাটে যান। এবারও গিয়েছিলেন বন্ধু মহসিনকে নিয়ে। সম্পর্কে মামা-ভাগ্নে মোহাম্মদ তরিফুল এবং ফরিদুল ইসলামও এসেছিলেন ঠাকুর ডোবানো দেখতে।

সে সময় হঠাৎই খরস্রোতা নদীতে নামে হড়কা বান। আচমকা বানে ভেসে যেতে থাকে মানুষ। চোখের সামনে মানুষের এ বিপদ দেখে তীরে নিরাপদ অবস্থান ছেড়ে প্রচণ্ড স্রোতের পাহাড়ি নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েন ওই তিন যুবক। একে একে ১৯ জনের প্রাণ বাঁচান তারা। মানিক, তরিফুল ও ফরিদুল এখন এলাকায় তো বটেই, গোটা ভারতের ‘সুপার হিরো’।

প্রায় ১৫ ফুট উঁচু থেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে একাই অন্তত ১০ জনের জীবন বাঁচান মানিক। তরিফুল ও ফরিদুল বাঁচান ৯ জনের প্রাণ।

পেশায় লোহার গ্রিল মিস্ত্রি মানিক বলেন, ‘এলাকায় জন্ম থেকে বড় হয়েছি, বুঝতে পারি হড়কা বান নেমেছে। জলের তোড়ে চোখের সামনে দিয়ে প্রচুর লোক ভেসে যেতে দেখি। সময় নষ্ট না করে ঝাঁপিয়ে পড়ি নদীতে। জলের তোড়ে তখন নিজের ব্যালান্স রাখা যাচ্ছিল না। পাকা সাঁতারু না হলে নিজেকেই বাঁচানো সম্ভব হতো না। এরপর এক-একজন করে যে কজনকে পারি পাড়ে তুলে আনি। আরও অনেককে ভেসে যেতে দেখি। কিন্তু তাদের তোলার সময় পাইনি।’

উত্তাল নদীতে এ সময় পায়ে পাথরের আঘাত লাগে মানিক ও তরিফুলের। রাতেই হাসপাতালে নেওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাদের ছাড়া হয় হাসপাতাল থেকে। এ সাহসী কাজের জন্য রাতারাতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘সুপার হিরো’ হয়ে ওঠেন তারা। স্থানীয় পর্যায়ে এখন নানা সম্মানে ভূষিত হচ্ছেন। এ তরুণদের কাছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠানো হয়েছে। তিন যুবককে দুর্যোগ প্রতিরক্ষা বাহিনীতে চাকরি দেওয়ার বিষয়টিও বিবেচনা করা হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে।

গত বুধবার প্রতিমা বিসর্জনের সময় পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার মাল নদীতে বানে ভেসে মৃত্যু হয় আটজনের। এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৩ জন।

সূত্র: দেশ রূপান্তর
এম ইউ/০৮ অক্টোবর ২০২২

Back to top button