জাতীয়

আওয়ামী লীগের উপকমিটি ৩৫ সদস্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না

এমরান হোসাইন শেখ

ঢাকা, ০৬ ডিসেম্বর – বেঁধে দেওয়া সংখ্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না আওয়ামী লীগের উপকমিটিগুলোর সদস্য। প্রতিটি উপকমিটিতে সদস্য ৩৫ জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার নির্দেশনা থাকলেও এই সংখ্যা আরও বাড়ছে। কোনও কোনও উপকমিটির সংখ্যা নির্ধারিত আকারের চেয়ে বেড়ে দ্বিগুণে গিয়ে দাঁড়াচ্ছে। দল ও সহযোগী সংগঠনে পদপদবি বঞ্চিতদের জায়গা করে দিতে এমনটি করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, প্রায় সবগুলো উপকিমিটির সদস্যদের নাম প্রস্তাব করে তালিকা হাইকমান্ডে জমা পড়েছে। এসব কমিটির অধিকাংশের সদস্য হিসেবে ৬০ থেকে ৮০ জনের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রথমদিকে জমা পড়া উপকমিটির সদস্য ৩০ থেকে ৩৫জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে নাম প্রস্তাব করে জমা দেওয়া হয়। তবে পরে সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে নতুন করে জমা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে আওয়ামী লীগের পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি একই সময়ে ঘোষণার কথা থাকলেও উপকমিটিগুলোর নাম ঘোষণায় কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। সদস্য সংখ্যা বাড়ানো ও ‘রিজেন্ট সাহেদের’ মতো বিতর্কিতদের অনুপ্রবেশ যাতে না ঘটে তার জন্য উপকমিটির সদস্য হিসেবে প্রস্তাবিতদের সব তথ্য যাচাই করা হচ্ছে। তবে উপকমিটি এখন প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলেও জানা গেছে। শিগগিরই তা ঘোষণা হতে পারে।

আরও পড়ুন : প্রধানমন্ত্রী-মন্ত্রিপরিষদ বিভাগসহ ৬২টি গুরুত্বপূর্ণ ওয়েবসাইট বন্ধ!

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় উপকমিটির নাম ঘোষণা নিয়ে আলোচনা হয়। ওই সময় প্রস্তাবিত কমিটির সদস্য সংখ্যা নিয়েও কথা হয়। দলীয় সভাপতি উপকমিটির সদস্য বেশি হয়েছে বলে মন্তব্য করলেও তা কমানোর কোনও অনুশাসন দেননি।

অবশ্য সদস্যসংখ্যা ৩৫ জনের মধ্যে রাখা নিয়েও আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। সদস্যসংখ্যা কম রাখার পক্ষধারীদের যুক্তি হলো, বেশিসংখ্যক সদস্য রাখতে গিয়ে অনেক বিতর্কিত নেতারা কমিটিতে ঢুকে পড়েন। ফলে দলকে বদনামের ভাগীদার হতে হয়। আর কমিটিতে ৩৫-এর বেশি সদস্য রাখার পক্ষের নেতারা বলছেন, সদস্য সংখ্যা বেশি হলে ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের যারা পদ বঞ্চিত হয়েছেন তাদের জন্যে একটি জায়গা তৈরি হবে। এতের দলের জন্য নতুন নেতৃত্ব তৈরি হবে।
এছাড়া সরকারের মেয়াদ দুই বছর পার হতে চলেছে। কিছুদিন পরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ডামাডোল বাজতে শুরু করবে। ফলে পদপদবি দেওয়ার মাধ্যমে তাদের দলীয় কার্যক্রমে সক্রিয় রাখতে পদ বাড়ানোর চিন্তা এসেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী বলেন, ‘আমাদের উপকমিটিগুলোর কাজের পরিধি অনেক। স্বল্প সংখ্যক সদস্য দিয়ে সব কাজ ভালোভাবে করা সম্ভব নয়। যার কারণে ৩৫ জনের চেয়ে বেশি নাম আমরা প্রস্তাব করেছি।’

এই সংখ্যা কত হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা ৭০ থেকে ৭৫ জনের নাম প্রস্তাব করেছি। তবে কতজনের অনুমোদন হবে সেটা সুপ্রিম অথরিটির বিষয়। তিনি যেটা করবেন সেটাই হবে।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার জানা মতে উপকমিটি প্রায় চূড়ান্ত হয়ে আছে। যে কোনও সময়েই নাম ঘোষণা হতে পারে।’

আরও পড়ুন : ‘ভাস্কর্য বিরোধীদের প্রতিহত করতে নারীদের গর্জে ওঠার আহ্বান’

সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি নিশ্চিত করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য আবদুর রহমান বলেন, ‘কয়েকজন সম্পাদক অনুরোধ করেছিলেন সদস্য বাড়ানোর। এই বিষয়টি বিবেচনা করে সদস্য সংখ্য কিছুটা বাড়ানো হচ্ছে। এতে দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রীরও সম্মতি দিয়েছেন।’

প্রসঙ্গত, করোনা সংক্রমণ কিছুটা কমে যাওয়ায় সেপ্টেম্বরের শুরুতে সীমিত পরিসরে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরুর সিদ্ধান্ত নেয় আওয়ামী লীগ। সেপ্টেম্বরের শুরুতে আওয়ামী লীগের সম্পাদক মণ্ডলির এক সভায় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ১৫ সেপ্টেৃম্বরের মধ্যে উপ-কমিটির সদস্যদের নামের প্রস্তাব করার নির্দেশনা দেন। একই সঙ্গে তিনি উপকিমিটির সদস্য ৩৫ জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার নির্দেশও দেন।

আওয়ামী লীগের গঠতন্ত্রের ২৫ এর ৬ উপধারায় সম্পাদকীয় বিভাগের কার্যক্রম অধিকতর গতিশীল করতে প্রতিটি সম্পাদকীয় বিভাগে একটি করে উপ-কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিষয়ভিত্তিক সম্পাদকদের সদস্য সচিব এবং দলের একজন উপদেষ্টাকে চেয়ারম্যান করে এই উপকমিটি গঠন করা হয়। সংশ্লিষ্ট সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্যরা পদাধিকার বলে উপমিটির সদস্য হবেন। উপকমিটির সদস্য সংখ্যা কত হবে তা গঠনতন্ত্রে উল্লেখ নেই। যার কারণে বিগত সময়ে উপকমিটির সদস্য ৭০ থেকে ১০০ জনের মধ্যেও রাখতে দেখা গেছে।

সুত্র : বাংলা ট্রিবিউন
এন এ/ ০৬ ডিসেম্বর

Back to top button