প্রবন্ধ

ইতিহাসের বঙ্গদেশ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ

সেলিনা হোসেন

বাঙালি, বাঙালিত্বের নির্যাসে যুক্ত হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অমোঘ উচ্চারণ ‘ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার সময় আমি বলব, আমি বাঙালি, বাংলা আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা। জয় বাংলা।’ এই উচ্চারণের সঙ্গে তিনি বলিষ্ঠ নেতৃত্বে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠায় বাঙালিকে উজ্জীবিত করে বাঙালিত্বের গৌরবকে আন্তর্জাতিক বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এই সময়ে তার মৃত্যু বিশ্বজোড়া বাঙালির সামনে শুধু শোকের দিন নয়। গৌরব এবং মর্যাদার জায়গা থেকে তিনি বাঙালির সামনে মৃত্যুহীন মানুষ।

হাজার বছরের বেশি সময় ধরে এই ভূখণ্ড নানা নামে পরিচিত হয়েছিল। এক সময় বলা হতো গঙ্গাঋদ্ধি, বলা হতো গৌড়। প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ নীহাররঞ্জন রায় তার ‘বাঙালির ইতিহাস : আদি পর্ব’ গ্রন্থে বলেছেন : ‘গৌড় নাম লইয়া বাংলার সমস্ত জনপদগুলিকে ঐক্যবদ্ধ করিবার যে চেষ্টা শশাঙ্ক, পাল ও সেন রাজারা করিয়াছিলেন সে চেষ্টা সার্থক হয় নাই। সেই সৌভাগ্যলাভ ঘটিল বঙ্গ নামের, যে বঙ্গ ছিল আর্য সভ্যতা ও সংস্কৃতির দিক হইতে ঘৃণিত ও অবজ্ঞাত এবং যে বঙ্গ-নাম ছিল পাল ও সেন রাজাদের কাছে কম গৌরব ও আদরের। কিন্তু সমগ্র বাংলাদেশের বঙ্গ নাম লইয়া ঐক্যবদ্ধ হওয়া হিন্দু আমলে ঘটে নাই; তাহা ঘটিল তথাকথিত পাঠান আমলে এবং পূর্ণ পরিণতি পাইল আকবরের আমলে, যখন সমস্ত বাংলাদেশ সুবা বাংলা নামে পরিচিত হইল। ইংরাজ আমলে বাংলা নাম পূর্ণতর পরিচয় ও প্রতিষ্ঠা লাভ করিয়াছে, যদিও আজিকার বাংলাদেশ আকবরী সুবা বাংলা অপেক্ষা খর্বীকৃত।’

বিশ্বজুড়ে বাংলার যে পরিচিতি সেই অর্থে এই ভূখণ্ডকে খর্বীকৃত বলার সুযোগ নেই। ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে দীর্ঘ সময় ধরে বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের অপেক্ষায় সময়ের পরিসর অতিক্রম করেছে। তিনিই উপমহাদেশের একমাত্র নেতা যিনি উপমহাদেশের মানচিত্রে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের সংযোজন ঘটিয়েছেন। সাড়ে সাত কোটি বাঙালি এই অর্জনে নিজেদের নিবেদন করেছেন বীরদর্পে। মানুষের ভালোবাসার অবিস্মরণীয় চেতনাবোধে সিক্ত হয়েছে তার নেতৃত্বের দৃঢ়তা। তার মৃত্যুদিবস মৃত্যুর ঊর্ধ্বে জীবনসত্যের বড় পরিচয়। বিশ্বের অনেক নেতা যেভাবে ইতিহাসের পৃষ্ঠায় আছেন অজেয় প্রেরণায় তেমনি বঙ্গবন্ধু আছেন। কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রো বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে আলজিয়ার্সে অনুষ্ঠিত জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে পরিচিত হন। তিনি পরিচয়ের মুগ্ধতা নিয়ে বলেন, ‘আমার হিমালয় দেখা হয়নি, কিন্তু আমি শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তিত্বে এই মানুষটিই হিমালয়সম। এতেই আমার হিমালয় দেখা হলো।’ এভাবে বাংলাদেশ নামের ছোট ভূখণ্ড বিশ্বের সামনে বিশাল হয়ে উঠেছিল। শুধু ভৌগোলিক আকারের খর্বতা কাটিয়ে উচ্চতার শীর্ষে ওঠার যে দিকনির্দেশনা বঙ্গবন্ধু সেই অসাধ্য কাজটি পূর্ণ করেছিলেন। বিশ্বের অন্য অনেক নেতার মতো তিনি দেশের পরিচিতি বিস্তৃত করেছিলেন। নেলসন ম্যান্ডেলার নামের সঙ্গে যুক্ত হয় দক্ষিণ আফ্রিকা, হো চি মিনের নামের সঙ্গে ভিয়েতনাম, সুকর্নের নামের সঙ্গে ইন্দোনেশিয়া, মিসরের সঙ্গে কর্নেল নাসের, প্যালেস্টাইনের সঙ্গে ইয়াসির আরাফাত এমন আরও অনেকে। তেমনি বাংলাদেশের সঙ্গে শেখ মুজিবুর রহমান। তার নাম উচ্চারণ না করে বাঙালির আত্মপরিচয় কখনো পূর্ণ হবে না।

তিনি বাঙালির ত্রাণকর্তা। বাঙালির সভ্যতা-সংস্কৃতির আবহমান স্রোতে তিনি নতুন অভ্যুদয় ঘটিয়েছেন। বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিার মাধ্যমে পূর্ণ রূপ লাভ করেছে।

১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর নতুন রাষ্ট্র পাকিস্তানের অংশ হয় ইতিহাসের বঙ্গের পূর্বাঞ্চল পূর্ব পাকিস্তান। বঙ্গবন্ধু তার জাতিসত্তার দর্শনের জায়গা থেকে পাকিস্তান গণপরিষদে পূর্ব পাকিস্তানকে পূর্ববাংলা বলার পক্ষে সোচ্চার ছিলেন। ১৯৫৫ সালের ২৫ আগস্ট তিনি গণপরিষদে বলেন, ‘স্পিকার মহোদয়, সরকার পূর্ববাংলার নাম বদল করেছে পূর্ব পাকিস্তান। ‘বাংলা’ নাম ব্যবহার করার জন্য আমরা দাবি জানাই। বাংলা নামের ইতিহাস আছে, তার ঐতিহ্য আছে। এই নাম পরিবর্তন করতে হলে বাংলার মানুষকে জিজ্ঞেস করতে হবে। নাম বদল করার জন্য তারা রাজি আছে কিনা তা তাদের কাছ থেকে জেনে নিতে হবে।’ নিজ আইডেনটিটির পরিচয় হিসেবে বাংলা শুধু শব্দমাত্র ছিল না, ছিল জীবনদর্শনসহ জাতিসত্তার পরিচয়। মানুষ হিসেবে পরিচয়ের পরে প্রতিটি মানুষকে জাতিসত্তা নিয়ে বেঁচে থাকার সত্য ধারণ করতে হয়। তিনি এই বিশ্বাস প্রত্যেক বাঙালির রন্ধ্রে ঢুকিয়েছেন।

ভাষা জাতিসত্তার আইডেনটিটির একটি অন্যতম উপাদান। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান গণপরিষদের বিভিন্ন অধিবেশনে বাংলা ভাষার মর্যাদার প্রশ্নেও বক্তব্য রেখেছেন। ১৯৫৫ সালের ৯ নভেম্বর করাচিতে অনুষ্ঠিত গণপরিষদ অধিবেশনে বলেছিলেন : ‘শেখ মুজিবুর রহমান : মাননীয় ডেপুটি স্পিকার, মহোদয়, আমাকে বাংলায় কথা বলতে হবে। আমি অত্যন্ত দুঃখিত যে, এ ভাষা আপনার বোধগম্য হবে না, তবুও আমাকে বাংলাতেই বলতে হবে। (কথার মাঝে বাধাদান) শেখ মুজিবুর রহমান : মাননীয় ডেপুটি স্পিকার বাংলা বুঝতে পারেন না বলে আমি দুঃখিত। (মাননীয় স্পিকার, মহোদয়, আজ বাংলা ভাষায় আমাকে বক্তব্য দানের সুযোগ দেওয়ায় আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ জানাই)।’

১৯৫৬ সালের ১৭ জানুয়ারি গণপরিষদে আবার বাংলার পক্ষে বক্তব্য রাখেন : ‘শেখ মুজিবুর রহমান : মহোদয়, একটি বিশেষাধিকার প্রশ্নে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। মহোদয়, পাকিস্তান গণপরিষদের কার্যপ্রণালি বিধি ২৯-এর অধীনে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সংসদের সরকারি ভাষা হচ্ছে তিনটি : ইংরেজি, বাংলা ও উর্দু। কিন্তু মহোদয়, আপনি জানেন যে দিনের আলোচ্য কর্মসূচি কেবল ইংরেজি ও উর্দুতে বিতরণ করা হয়, বাংলায় করা হয় না। আমি জানি না বিষয়টি আপনি অবগত আছেন কি নাই, কিংবা এটি ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয়েছে কিনা।… শেখ মুজিবুর রহমান : কার্যবিবরণী নিশ্চয়ই বাংলায় লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, যেহেতু তিনটি ভাষাই সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃত সেহেতু তিনটি ভাষাকেই সমান মর্যাদা দিতে হবে। যদি দিনের আলোচ্য কর্মসূচি ইংরেজি ও উর্দুতে প্রকাশ করা হয় তা হলে তা অবশ্যই বাংলাতেও করতে হবে, কেননা দিনের আলোচ্য কর্মসূচি কার্যবিবরণীরই অংশবিশেষ।… যেহেতু দিনের আলোচ্য কর্মসূচি ইংরেজি ও উর্দুতে প্রকাশ করা হয়েছে সেহেতু তা বাংলাতেও করা উচিত ছিল।’

১৯৭০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে শহীদ স্মরণে বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে বলেছিলেন, ‘আজকের এই দিনে স্মরণ করি সেইসব শহীদের যারা নিজের জন্মভূমিকে ভালোবাসার অপরাধে অত্যাচারী শাসকের মরণযজ্ঞে অকালে আত্মাহুতি দিয়েছেন।… যতদিন বাংলার আকাশ থাকবে, যতদিন বাংলার বাতাস থাকবে, যতদিন এ দেশে মাটি থাকবে, যতদিন বাঙালির সত্তা থাকবে, ততদিন শহীদদের আমরা ভুলতে পারব না। আমরা কোনোক্রমেই শহীদদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না। এই বিজয় সাত কোটি বাঙালির বিজয়, দরিদ্র জনসাধারণের বিজয়।’

এমন প্রাজ্ঞ দার্শনিক ভাবনা বাংলার মাটি ও মানুষের সঙ্গে তার মাতৃভাষার মর্যাদায়। বাঙালির বিত্তবৈভবকে তিনি লালন করেছেন নিজের আত্মপরিচয়ের সবটুকু জায়গাজুড়ে। বাঙালির এই পথপরিক্রমাকে প্রখ্যাত সাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক মূল্যায়ন করেছেন সৃজনশীল মাত্রায় “পরাধীন বাংলায় তিনি রাজনৈতিক আন্দালনের কর্মী থেকে ক্রমান্বয়ে হয়ে ওঠেন সকলের প্রিয় ‘মুজিব ভাই’, জনগণের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধু ঘোষিত হয়ে তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিলেন। রক্তের বিনিময়ে বাঙালি জাতি অর্জন করল তার শ্রেষ্ঠ অর্জন স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধু প্রতিষ্ঠা করলেন ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা যার মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষার চিরকালীন বিকাশের অর্গল খুলে গেল, বাঙালি জাতিসত্তা একটি রাষ্ট্র ভাবনায় পরিণত হলো। খুব কাছ থেকে তাকে যারা দেখেছেন তারা বলতে পারবেন, এই মানুষটির বিরাটত্ব কোথায় লুকিয়ে ছিল। সাধারণ মানুষের হৃদয় স্পর্শ করে তাদের সঙ্গে মিশে যেতে পারতেন তাদের দুঃখ-সুখের সাথী হয়ে। বিচক্ষণতার সঙ্গে লক্ষ করলে বোঝা যে, ‘বাঙালিত্ব’ বিষয়টি মূর্তিমান হয়ে রয়েছে তার ব্যবহারে, খাদ্যাভাসে, পোশাকে। সবচেয়ে বেশি করে তার মননে, চিন্তনে, আবেগ-অনুভূতির অনুরণনে। সেজন্যই ছাত্রসমাজ তাকে গ্রহণ করল ‘বঙ্গবন্ধু’ নামে, এই নামেই শেষ পর্যন্ত পরিণত হলো সমগ্র জাতির সঙ্গে তার পরিচয়ের সেতুবন্ধ।”

এই সূত্র ধরে উল্লেখ করতে হয় বাংলা সাহিত্য বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর মননশীল চিন্তা। ১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমি ঢাকায় একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করেছিল। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের দিক থেকে আমরা দরিদ্র নই। আমাদের ভাষার দু’হাজার বছরের একটি গৌরবময় ইতিহাস আছে। আমাদের সাহিত্যের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ। আমাদের সংস্কৃতির ঐতিহ্য নিজম্ব বৈশিষ্ট্যে ভাস্বর। আজকে স্বাধীন জাতি হিসাবে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হলে আমাদের ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের মর্যাদাকে দেশে ও বিদেশে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।’ এই প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেছিলেন : ‘আমি সাহিত্যিক নই, শিল্পী নই, কিন্তু আমি বিশ্বাস করি যে, জনগণই সব সাহিত্য ও শিল্পের উৎস। জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কোনোভাবে কোনো মহৎ সাহিত্য বা উন্নত শিল্পকর্ম সৃষ্টি হতে পারে না। আমি সারা জীবন জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সংগ্রাম করেছি, এখনো করছি, ভবিষ্যতে যা কিছু করব জনগণকে নিয়েই করব। সুধী বন্ধুরা, আপনাদের কাছে আমার আবেদন আমাদের সাহিত্য, সংস্কৃতি যেন শুধু শহরের পাকা দালানেই আবদ্ধ হয়ে না থাকে। বাংলাদেশের গ্রাম-গ্রামান্তরের কোটি কোটি মানুষের প্রাণের স্পন্দনও তাতে প্রতিফলিত হয়। আজকের সাহিত্য সম্মেলনে যদি এসবের সঠিক মূল্যায়ন হয় তবে আমি সবচেয়ে বেশি আনন্দিত হব।’

এভাবে গণমানুষের মর্যাদাকে সমুন্নত করার কথা বলেছেন। জাতির সাংস্কৃতিক বোধে মনুষ্যত্বের বোধকে প্রতিষ্ঠিত করার চিন্তাও উচ্চারণ করেছেন তিনি। বিশ্বজোড়া মানুষের শান্তিতে থাকার স্বপ্নও ছিল তার মধ্যে। ১৯৭৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর তিনি জাতিসংঘে বাংলা ভাষায় বক্তৃতা করেছিলেন। নিজের মাতৃভাষায় বক্তৃতা দিয়ে তিনি বাঙালি জাতিসত্তার দিগন্ত প্রসারিত করেছিলেন। অন্যদিকে বিশ্বের মানুষের জন্য শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার কথা বলেছিলেন। উদ্ধৃতি : ‘জনাব সভাপতি, আজ এই মহামহিমান্বিত সবাবেশে দাঁড়াইয়া আপনাদের সাথে আমি এইজন্য পরিপূর্ণ সন্তুষ্টির ভাগীদার যে, বাংলাদেশের সাড়ে ৭ কোটি মানুষ আজ এই পরিষদের প্রতিনিধিত্ব করিতেছেন। আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের পূর্ণতা চিহ্নিত করিয়া বাঙালি জাতির জন্য ইহা একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার অর্জনের জন্য এবং একটি স্বাধীন দেশে মুক্ত নাগরিকের মর্যাদা নিয়ে বাঁচার জন্য বাঙালি জনগণ শতাব্দীর পর শতাব্দীব্যাপী সংগ্রাম করিয়াছেন, তাহারা বিশে^র সকল জাতির সাথে শান্তি ও সৌহার্দ্য নিয়া বাস করিবার জন্য আকাক্সিক্ষত ছিলেন। যে মহান আদর্শ জাতিসংঘ সনদে রক্ষিত আছে, আমাদের লক্ষ লক্ষ মানুষ সেই আদর্শের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করিয়াছেন। আমি জানি, শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য সকল মানুষের আশা-আকাক্ষা বাস্তবায়নের উপযোগী একটি বিশ্ব গড়িয়া তোলার জন্য বাঙালি জাতি পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

তাকে বাংলাদেশের সাহিত্যে অনবরত স্মরণ করেছেন দেশের লেখকরা। কবি রোকনুজ্জামান খানের একটি কবিতার নাম ‘মুজিব’। উদ্ধৃতি :

সবুজ শ্যামল বনভূমি মাঠ নদীতীর বালুচর/সবখানে আছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ঘর।/সোনার দেশের মাঠে মাঠে ফলে সোনাধান রাশি রাশি/ফসলের হাসি দেখে মনে হয় শেখ মুজিবের হাসি।/শিশুর মধুর হাসিতে যখন ভরে বাঙালির ঘর,/ মনে হয় যেন শিশু হয়ে হাসে চিরশিশু মুজিবর।/আমরা বাঙালি যতদিন বেঁচে রইব এ বাংলায়/স্বাধীন বাংলা ডাকবে : মুজিব আয় ঘরে ফিরে আয়।

মনীষী আবুল ফজলের কথা এখন স্মরণযোগ্য। তিনি বলেছেন : ‘সারা বাংলাদেশে শেখ মুজিবের নাম এক জাদুমন্ত্র। শিক্ষিত-অশিক্ষিত, শিশু-বৃদ্ধ, অন্তঃপরিকা বধূ সকলের মনে এ নাম বয়ে আনে এক অপূর্ব শিহরণ। এ নাম যেন তাদের সামনে অন্ধকারে এক উজ্জ্বল প্রদীপশিখা। শেখ মুজিব বাঙালি-মনে অনেক সূর্যের আশা। শেখ মুজিবের বিশেষ অবদান তিনি বাঙালিকে আত্মসচেতন করে তুলেছেন, বাঙালি জাতীয়তাকে দিয়েছেন ভাষা। বাঙালির অভাব-অভিযোগ, দাবি-দাওয়া, আশা-আকাক্সক্ষাকে বাংলার নগরে-বন্দরে, শহরে-গ্রামে, ধনীর অট্টালিকা থেকে গরিবের পর্ণকুটির পর্যন্ত সর্বত্র পৌঁছে দিয়েছেন তিনি। তার ‘জয় বাংলা’ স্লোগান বাংলা ও বাঙালির আত্মসন্ধান আর আত্ম-আবিষ্কারেরই যেন এক অমোঘ মন্ত্র।’

তিনি বাঙালির জীবনে হিরন্ময় জ্যোতি। ইতিহাসের পাতায় তার অবস্থান বঙ্গ থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের বাস্তবতা।

আইএ, ২১ আগস্ট

Back to top button