ত্রিপুরা

ত্রিপুরাতেও ভাঙনের মুখে পড়েছে বিজেপি

আগরতলা, ২৭ জুন – মুকুল রায় তৃণমূলে ফিরতেই বাংলার পাশাপাশি ত্রিপুরাতেও ভাঙনের মুখে পড়েছে বিজেপি। ভাঙনের ইঙ্গিত পেতেই তড়িঘড়ি মেরামতির ব্যবস্থাও নেয় বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কিন্তু গত দুদিন ধরে যে পথে এগোচ্ছে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, তাতে বিজেপির আড়াআড়ি বিভাজন স্পষ্ট হয়ে উঠতে শুরু করেছে বাংলার প্রতিবেশী রাজ্য ত্রিপুরায়।

সুদীপের নেতৃত্বে ত্রিপুরায় ফের তৃণমূলের সংগঠিত হওয়ার সম্ভাবনা
ত্রিপুরা বিজেপিতে প্রথমন থেকেই দ্বন্দ্ব ছিল দুই গোষ্ঠীর। একটি গোষ্ঠী মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের। অপর গোষ্ঠীটি কংগ্রেস ও তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া সুদীপ রায়বর্মনের। সুদীপ রায়বর্মন আবার মুকুল রায় ঘনিষ্ঠ। ফলে মুকুলের ঘরওয়াপসির পর সুদীপের নেতৃত্বে ত্রিপুরায় ফের তৃণমূলের সংগঠিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

সুদীপ রায়বর্মনকে তড়িঘড়ি বৈঠকে ডেকে মেরামতির চেষ্টা নাড্ডার
বিজেপি তা আঁচ করেই ত্রিপুরায় কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে পাঠিয়েছে। তারপর দিল্লিতে সুদীপ রায়বর্মনকে তলব করে বৈঠক করেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা। এতদিন সুদীপ রায়বর্মন দেখা করতে গিয়েও সময় পাননি নাড্ডার। এবার তড়িঘড়ি ডেকে বৈঠকে বসেছেন। সুদীপ এতদিন বিক্ষুব্ধ ছিলেন, তার বিক্ষোভ মেটানোর আশ্বাসও দিয়েছেন।

সুদীপ রায়বর্মনের অনুগামী ও আইপিএফটি বিধায়কদের উপর নির্ভর
শুধু সুদীপ রায়বর্মন বা তাঁর অনুগামী বিধায়করাই নন, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা বৈঠক করেন আইপিএফটি বিধায়কদের সঙ্গেও। মোট কথা সুদীপ রায়বর্মনের অনুগামী ও আইপিএফটি বিধায়কদের ধরে না রাখতে বিজেপির সরকার সমস্যায় পড়ে যাবে। সংখ্যালঘু হয়ে পড়বে। ফলে পতনের সম্ভাবনা তৈরি হবে মেয়াদ শেষ হওয়ার দু-বছর আগেই।

বিজেপির ৩৬ জন বিধায়কের মধ্যে অনুপস্থিত সুদীপ-ঘনিষ্ঠ ১০ জন
কিন্তু প্রশ্ন হল- ত্রিপুরা বিজেপিতে কি মেরামতি করতে সমর্থ হলেন জেপি নাড্ডা? নাড্ডার বৈঠকের পরও কিন্তু বিজেপিতে সংঘবদ্ধতা দেখা গেল না। মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের ডাকা বৈঠকে এলেন না সুদীপ রায়বর্মন ও তাঁর অনুগামী বিধায়করা। বিজেপির ৩৬ জন বিধায়কের মধ্যে অনুপস্থিত ১০ জন। এমনকী অনুপস্থিত উপমুখ্যমন্ত্রীও।

সুদীপ রায়বর্মনের অনুগামী বিধায়করা সরে গেলেই সংখ্যালঘু বিজেপি
এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠছে গেরুয়া শিবরে ভাঙন ঠেকানো কি সম্ভব হবে? রাজনৈতিক মহলে ঘুরপাক খাচ্ছে ত্রিপুরায় বিজেপি সরকার পড়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ। সুদীপ রায়বর্মনের অনুগামী বিধায়করা সরে গেলেই সংখ্যালঘু হয়ে পড়বে বিপ্লব দেবের সরকার। তারপর যদি আইপিএফটি-র বিধায়করা বেঁকে বসেন, তবে পতন অনিবার্য হবে।

মুকুল রায়ের চালে ওলট-পালট হতে পারে বিজেপি বিধায়করা
এমতাবস্থায় বিজেপি সরকারের মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণের উদ্যোগ খানিকটা প্রলেপ দিতে পারে। মন্ত্রী করা হতে পারে সুদীপ রায়বর্মন গোষ্ঠীর বিধায়ক বা আইপিএফটি-র বিধায়কদের মধ্য থেকে। কিন্তু মুকুল রায়ের চালে কতটা ওলট-পালট হতে পারে, তার উপরই নির্ভর করছে ত্রিপুরা বিজেপির ভাগ্য। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মুকুল রায়কে নিয়ে ত্রিপুরা বিজেপিকে কোনও ঝটকা দিতে পারেন কি না সেটাই দেখার।

সরকারের প্রতি কতজন বিধায়ক আস্থাশীল তা দেখার জন্য বৈঠক
বিপ্লব দেব আসলে বৈঠক ডেকেছিলেন, তাঁর সরকারের প্রতি কতজন বিধায়ক আস্থাশীল তা দেখার জন্য। সেখানে দেখা যাচ্ছে- বিপ্লব দেবের পক্ষে বৈঠকের সার সুখকর নয়। সুদীপ রায়বর্মন, রামপ্রসাদ পাল, পরিমল দেববর্মন, আশিস দাস, আশিসকুমার সাহা-রা প্রায় সবাই মুকুল রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেন। তাঁরাই গরহাজির থাকলেন বৈঠকে। ফলে জল্পনা বাড়ল আরও।

সুদীপ রায়বর্মন ও অনুগামীরা দল ছাড়লে বিপাকে পড়ে যাবে বিজেপ
সুদীপ রায়বর্মন ও তাঁর অনুগামীরা দল ছাড়লে বিপাকে পড়ে যাবে ত্রিপুরার বিজেপি সরকার। ফলে চিন্তায় রয়েছেন বিপ্লব দেব। সুদীপ রায়বর্মনরা দল ছাড়লে সংখ্যার বিচারে পিছিয়ে পড়বে বিজেপি। সংখ্যালঘু হয়ে পড়বেন ত্রিপুরার গেরুয়া সরকার। কেননা ৬০ আসন বিশিষ্ট ত্রিপুরা বিধানসভায় ম্যাজিক ফিগার ৩১। বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা নেমে যাবে তার নিচে। সুদীপ অনুগামী বিধায়কের সংখ্যা ত্রিপুরায় প্রায় ১৫ জন।

সূত্র : ওয়ানইন্ডিয়া
এন এইচ, ২৭ জুন

Back to top button