গাজীপুর

নেশার টাকা না দেওয়ায় বৃদ্ধ মায়ের চুল ছিঁড়ে ফেলল ছেলে!

গাজীপুর, ১৭ জুলাই – নেশা ও জুয়ার টাকার জোগান না দেওয়ায় ষাটোর্ধ্ব মাকে ঘরে বন্দি করে প্রতি রাতেই নির্মম অত্যাচার চালায় ছেলে। এ ছাড়া ইউরোপ প্রবাসী ভাইয়ের কাছ থেকে স্বামীর চাহিদামতো টাকা না আনায় জীবনের শেষ সময়ে এসে স্বামীর অত্যাচার থেকেও রেহাই মিলেছে না তার। বেধড়ক মারধরের একপর্যায় মাথার চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলেছে অত্যাচারী ছেলে।

ছেলে-স্বামীর করা মিথ্যা মামলায় এক রাত কারাবাসও হয় এই বৃদ্ধার। এমন লোমহর্ষক অত্যাচারের বর্ণনা দিয়েছেন গাজীপুর সদর উপজেলার পিরোজ আলী গ্রামের ষাটোর্ধ্ব রোকেয়া বেগম।

তিনি জানান, প্রায় তিন মাস ধরে তিনি ঘরবন্দি অবস্থায় দিন পার করছেন। ঈদের দিনেও জোটেনি একটু মাংস বা সেমাই। ঘরের সব খাবার শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই। কোনো রকম পানি আর বোনের দেওয়া কিছু শুকনো খাবার খেয়ে বেঁচে আছেন তিনি।

রোকেয়া বেগম জানান, তার ছেলে রুবেল আহমেদকে পড়িয়েছেন রাজধানীর একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্নাতক পড়ার সময় নেশাখোর বন্ধুদের সঙ্গে জড়িয়ে যায় রুবেল। প্রতি মাসে পড়াশোনার খরচ আগের তুলনায় বেড়ে যায় কয়েকগুণ। বৃদ্ধার ইউরোপ প্রবাসী ভাই জাহিদুল ইসলামের কাছ থেকে টাকা এনে ছেলের চাহিদামতো লেখাপড়ার সব খরচ জুগিয়েছেন। শুধু ছেলের পড়াশোনার খরচ নয়, স্বামীর চাহিদামতো যৌতুকের টাকাও ভাইয়ের কাছ থেকে এনে দিয়েছেন।

কিন্তু তার পরও এখন জীবনের শেষ সময়ে এসেও প্রতি রাতে স্বামীর অত্যাচারের শিকার হতে হয়।

তিনি আরও জানান, নেশা ও জুয়ার টাকার জন্য ছেলে তাকে স্বামীর সামনেই মারধর করে। স্বামী কোনো প্রতিবাদ না করে বরং ছেলের চাহিদাকৃত টাকা ভাইয়ের কাছ থেকে এনে দেওয়ার জন্য মত দেয়। যখনই রাজি না হই, তখনই আবারও মারধর শুরু করে ছেলে। একপর্যায় মাথার চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলে তারই নাড়িছেঁড়া ধন। সেই ছেঁড়া চুল পলিথিনে নিয়ে চুল দেখে আর কান্নায় ভেঙে পড়েন এই বৃদ্ধা মা।

তিনি আরও জানান, স্বামী-সন্তানের অত্যাচারের বিচার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে চাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে ছেলে ও স্বামী আদালতে মিথ্যা একটি অভিযোগে মামলা করেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়, মাদক সেবন এবং অশ্লীল কর্মকাণ্ডের।

এসব অভিযোগে আদালতের মামলায় অতি উৎসাহিত পুলিশ এই ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা মাকে গ্রেফতার করে হাজতবাস করান। গ্রেফতারের পর আদালতে তোলা হলে বিচারক ঘটনার মিথ্যা আশ্রয় নেওয়া হয়েছে বুঝে তাকে স্থায়ী জামিনে মুক্তি দেন। এর পর থেকে ছেলে ও স্বামীর অত্যাচারের হাত থেকে রেহাই পেতে নিজের ঘরে তালাবদ্ধ করে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছেন তিনি।

প্রতিবেশীরা জানান, দীর্ঘ দিন ধরে বাবা-ছেলে মিলে বৃদ্ধাকে নির্মম অত্যাচার করছে। এখানে প্রতিবেশীরা এগিয়ে গেলে হামলা ও মামলার ভয় দেখায়। যার ফলে কোনো প্রতিবেশী ওই বৃদ্ধার পাশে গিয়ে দাঁড়াতে পারে না। প্রতিবেশী এক মহিলা ওই বৃদ্ধার পাশে দাঁড়ানোয় মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছেন। এ জন্য এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে কেউ সাহস পায় না। প্রতিবেশীরাও বাবা-ছেলের কঠিন শাস্তি দাবি করেছেন।

ইউরোপ প্রবাসী বৃদ্ধ মহিলার ভাই জাহিদুল ইসলাম জানান, বছরের পর বছর বোনের সুখের জন্য তিনি টাকা পাঠিয়েছেন বোনের কাছে। সেই টাকা নিয়ে বাড়িঘর করেছে বোন। যাতে স্বামী-সন্তান নিয়ে সুখে থাকে। ছেলেকেও পড়িয়েছেন। বিদেশ থেকে ল্যাপটপ ও দামি দামি ফোনও পাঠিয়েছেন ভাগ্নের জন্য। তার পরও বোনের এমন অত্যাচারের খবর তার প্রবাস জীবনকে করেছে বিষাক্ত।

তবে অভিযুক্ত ছেলে রুবেল আহমেদ জানান, তার মা প্রবাসী ভাইয়ের প্ররোচনায় তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা বলছেন। বিদেশ গিয়ে নাকি বিলাসবহুল জীবনযাপনের স্বপ্ন দেখে তার মা; এমন অভিযোগও তার।

সূত্র: যুগান্তর
এম ইউ/১৭ জুলাই ২০২৩

Back to top button