হইক্রস গেইল, ডি ভিলিয়ার্স, বীরেন্দ্র শেবাগ, অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, ডেভিড ওয়ার্নার। বিশ্বের সেরা আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যানের নাম বললে আপনি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এদেরই নাম উল্লেখ করবেন। ভুল করছেন আপনি। কারণ আপনি ভিভ রিচার্ডসের নাম বলেননি। জেনে রাখুন, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের যুগেও আক্রমণাত্মক ক্রিকেটের শেষ নাম বলা হয় কিং রিচার্ডসকে। লারা-শচীনরা যতই করুক না কেন কিংবা ভিলিয়ার্স-ওয়ার্নাররা যতই চার-ছয় মারুন না কেন মহিমা ও হিংস্রতায় স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডকে ছাড়িয়ে যেতে পারেননি কেউই।
১২১ টেস্ট ৮৫১০ রান। টেনেটুনে পড়াটা পঞ্চাশের ওপরে। ১৮৭ ওয়ানডেতে ৬৭২১ রান। গড় ৪৭। ভাবছেন এ আর আহামরি কি। আজকের দিনের ক্রিকেটে এমন গড় তো অনেকেরই আছে। তাহলে আপনি রিচার্ডসে ব্যাটিং করতে দেখেননি। ২০১৫ সালে ভিভ রিচার্ডসকে সর্বকালের সেরা একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার হিসেবে ঘোষণা করেছে ৫০ জনের এক জুরি বোর্ড। সেই বোর্ডের সবাই আবার একেকজন বিখ্যাত ক্রিকেটার, সঙ্গে রয়েছে ধারাভাষ্যকার ও ক্রিকেট লেখক। এই ৫০ জন বিচারকের মধ্যে ২৯ জনই মানছেন মারকাটারি ক্রিকেটের ক্যারিবীয় এই কিংবদন্তির আশে পাশে নেই কেউই। দ্বিতীয় হলেও ভোট সংখ্যায় ওয়ানডেতে প্রায় ১৯ হাজার করা করা শচীন টেন্ডুলকারও নেই ভিভের আশপাশে। ক্লাইভ লয়েড, রাহুল দ্রাবিড়, রিকি পন্টিং ও গ্রায়েম স্মিথ, টনি কোজিয়ার, মার্ক নিকোলাস, মাইক হেইজম্যান ও সঞ্জয় মাঞ্জেরকারের মতো ক্রিকেটার ও সমালোচকরা ছিলেন সেউ জুরি বোর্ডে।
গর্ডন গ্রিনিজ বা ডেসমন্ড হেইন্স আউট হলেই মাঠে নামতেন রিচার্ডস। গ্রিনিজ বা হেইন্সরা ফিরে গেলে খুশিই হতেন দর্শকরা। কারণ মাঠে নেমেই শটের পশরা সাজিয়ে বসতেন ভিভ। নাদুস নুদুস শরীর নিয়ে অনেকটা ধীরে, আরামে, কোমর দুলিয়ে মাঠে ঢুকতেন রিচার্ডস। যেন কোনো রাজা তাঁর রাজত্বে প্রবেশ করছেন।
উইকেটে আসতেই বদলে যেতেন কিং রিচর্ডার্স। যত বড় বোলারই হোন না কেন তাঁর বিপক্ষে বল করার আগে বুক দুরুদুরু করত না এমন বোলার পাওয়া মুশকিল ছিল।
একেকটা শট যেন শিল্পীর আকা ছবি। বিশেষণ করে অন সাইডে ফ্লিকের জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন ভিভ। ওয়াসিম আকরাম, রবিশাস্ত্রী, ব্যারি রিচার্ডস ও নীল ফেয়ারব্রাদার, ইমরান খানের মতো তারকা বোলাররা বলেছেন, ‘তাদের দেখা সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাটসম্যান ছিলেন ভিভ রিচার্ডস। তাদের মতে রিচাডর্সই ফাস্ট বোলিংয়ের বিপক্ষে শেষ কথা। টানা ১৭ বছর পুরো ক্যারিয়ারে কখনই হেলমেট ব্যবহার করেননি তিনি। ডেনিশ লিলি, বব উইলিস, কপিল দেব, রিচার্ড হ্যাডলি, ইয়াম বোথাম বোথাম, ইমরান খানের মতো বোলাররাও বাদ পড়েননি তাঁর অত্যাচার থেকে।
১৪ বছরের ক্যারিয়ারে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দুটি বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন ভিভ রিচার্ডস। ১৯৮৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তাঁর বলে ৫৬ সেঞ্চুরির রেকর্ডটি ২০১৬ সালে ভাঙেন ব্রেন্ডন ম্যাককালাম।
গেইল-ডি ভিলিয়ার্সদের এখন ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বিনোদনদাতা বলা হয়। তবে টুকটুক করে খেলা টেস্টের দিনে ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় পোস্টার ছিলেন ভিভ রিচার্ডস। সেই যুগে ভিভের স্ট্রাইক রেট ছিল ৯০! একবার ভাবুন তো আজকের যুগে খেললে তাঁর স্ট্রাইক রেট কত হতো?
এফ/১৬:৫৫/০৭মার্চ