ঝাপসা ছবি, তবে বুঝতে অসুবিধা হয় না, রক্তাক্ত বিধ্বস্ত মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে ক্রুদ্ধ সেনারা। গাদ্দাফির হত্যাকাণ্ডের পর খুব দ্রুতই মোবাইল ফোনে ধারণ করা এই ভিডিওচিত্র বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওচিত্রের প্রথম দিকে দেখা যায়, গাদ্দাফি জীবিত। তাঁকে ট্রাকে ওঠানো হয়েছে। তিনি নড়াচড়া করছেন। খানিক পরেই তাঁকে ট্রাক থেকে নামায় সেনারা। এ সময় গাদ্দাফি হাত নেড়ে এক বিদ্রোহীকে কিছু একটা বলছিলেন। সম্ভবত তিনি বলছিলেন, 'আমি তোমার কী ক্ষতি করেছি?' এর কিছুক্ষণ পরই দেখা যায়, তাঁর দেহ নিথর, সেনারা লাশ টেনে নিয়ে যাচ্ছে।
জীবনের শেষ সময়ে পরাক্রান্ত এক নায়ককে ভোগ করতে হয়েছে সীমাহীন লাঞ্ছনা। তাঁকে অনেকটা গণধোলাই দিয়েছে বিদ্রোহীরা। কাঁপা কাঁপা ছবিতে দেখা যায়, কেউ তাঁর চুল টানছে, কেউ মুখে মারছে ঘুষি। বেপরোয়াভাবে অনেকে লাথি মারছে তাঁর বুকে, মাথায়। আর মৃতপ্রায় গাদ্দাফির মুখ ভেসে যাচ্ছিল রক্তে।
মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে হত্যা করা হয়েছে_এ নিয়ে সংশয় নেই। তবে কিভাবে নিহত হয়েছেন, তা নিয়ে
পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের তথ্য। কিন্তু প্রায় সব সূত্রের বক্তব্যে একটি জায়গায় মিল রয়েছে_গাদ্দাফিকে আটক করার পর বেদম মারধর করা হয়েছে এবং পরে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তবে কে তাঁকে গুলি করেছে সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিতভাবে কিছু জানা যায়নি।
ভিডিওচিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গাদ্দাফি যখন সার্তের কাছে ধরা পড়েন, তখন তিনি জীবিতই ছিলেন। এ সময় কাউকে কাউকে চিৎকার করে বলতে শোনা যায়, 'তাঁকে বাঁচিয়ে রাখো, আমরা তাঁকে জীবিত চাই।' এ সময় গাদ্দাফি আরবিতে যা বলেন তার বাংলা এ রকম, 'তোমরা যা করছ তা ইসলামী আইনসিদ্ধ নয়।' তিনি আবার বলেন, 'তোমরা যা করছ ইসলামে তা নিষেধ। তোমরা কি জান কোনটা ঠিক, আর কোনটা বেঠিক?'
গাদ্দাফির কথা শুনে এক বিদ্রোহী চেঁচিয়ে ওঠেন, 'চুপ কর কুত্তা।'
এরপর কিছুক্ষণ ভিডিওচিত্রে গাদ্দাফিকে দেখা যায় না। তবে গুলির শব্দ শোনা যায়। আর দেখতে পাওয়া যায় গাদ্দাফির লাশ।
লিবিয়ার বিদ্রোহীদের ন্যাশনাল ট্রানজিশনাল কাউন্সিলের (এনটিসি) ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী মাহমুদ জিবরিল আনুষ্ঠানিকভাবে বলেছেন, এনটিসির সেনাদের সঙ্গে যুদ্ধের সময় ক্রসফায়ারে গাদ্দাফি নিহত হয়েছেন। তাঁর মাথায় গুলি লেগেছে।
এনটিসির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দাবি করেন, তাঁদের পক্ষ থেকে গাদ্দাফিকে হত্যার কোনো নির্দেশ দেওয়া হয়নি। তাঁদের সেনারা গাদ্দাফিকে জীবিত অবস্থাতেই ধরেছিল। ধরার পর তাঁকে যখন নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন এনটিসির সেনারা তাঁকে বেদম মারধর করে এবং পরে হত্যা করে।
নাম প্রকাশ না করে এনটিসির আরেক কর্মকর্তা বলেন, 'বিদ্রোহী সেনারা গাদ্দাফিকে নির্মমভাবে মারধর করে হত্যা করেছে। এটাই যুদ্ধ।'
সালেম বকর নামে এনটিসির এক যোদ্ধা বলেন, "আমরা কালভার্টের সুড়ঙ্গে (টানেল) ঢুকে গাদ্দাফিকে বের করে আনি। এ সময় তিনি বলছিলেন, 'আমার অপরাধ কী, আমার অপরাধ কী? এসব কী হচ্ছে?' এরপর আমরা তাঁকে একটি গাড়িতে তুলি। গাদ্দাফি গাড়িতেই রক্তক্ষরণে মারা যান।"
ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা এক বিদ্রোহী সেনার দাবি, গর্ত থেকে বেরিয়েও নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছিলেন গুরুতর আহত গাদ্দাফি। বিদ্রোহীরা তাঁকে বেধড়ক মারধর শুরু করে।
এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, এনটিসির কেউ একজন নাইন এমএম পিস্তল দিয়ে গাদ্দাফির পেটে গুলি করে। এরপর তিনি মারা যান। তবে ওমরান জোউমা শাওন নামের এক ব্যক্তির দাবি, 'গাদ্দাফির এক দেহরক্ষী তাঁর বুকে গুলি করে।'