ফিলিস্তিন-ইসরাইলের ঐতিহাসিক বন্দি বিনিময় চুক্তি অনুযায়ী মুক্তি পাওয়া ৪৭৭ ফিলিস্তিনের মধ্যে ৪০ জনকে নির্বাসনে থাকতে হচ্ছে। তারা আপাতত তুরস্ক, কাতার, জর্ডান ও সিরিয়ায় বসবাস করবেন। মুক্তিপ্রাপ্ত সব বন্দির চোখে মুখেই ছিল আনন্দ আর উচ্ছ্বাসের ছাপ। ইসরাইলি কারাগার থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত ওই ৪০ জন গতকাল বুধবার মিসর থেকে সিরিয়া, তুরস্ক, কাতার ও জর্ডানে পেঁৗছেছেন। তারা ফিলিস্তিনে ফিরে গেলে ইসরাইলের জন্য মারাত্মক বিপদ সৃষ্টি করতে পারেন, তেল আবিবের শর্তে তাদের নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে। ৪০ জনের মধ্যে ১৫ জন সিরিয়ায়, ১১ জনকে তুরস্কে, ১৩ জনকে কাতারে এবং একজনকে জর্ডানে পাঠানো হয়েছে। সূত্র : এএফপি, আইআরআইবি, রয়টার্স, প্রেস টিভি, আল-জাজিরা
মুক্তিপ্রাপ্ত মোহাম্মদ ওয়ায়েল কাতারের রাজধানী দোহায় পেঁৗছে বলেছেন, 'এটি একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। নিজ বাড়িতে যেতে না পারার দুঃখ আছে। তবে আমরা আরব দেশগুলোকে নিজেদের দ্বিতীয় বাড়ি বলেই মনে করি।' উল্লেখ্য, ইসরাইলে হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে মোহাম্মদ ওয়ায়েলকে তেল আবিবের একটি আদালত ১ হাজার ৬০০ বছরের বেশি কারাদ- দিয়েছিল।
মিসরের সমঝোতায় ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের বন্দি বিনিময় চুক্তির অংশ হিসেবে ইসরাইলি সেনা কর্মকর্তা গিলাত শালিতের বিনিময়ে ওই ৪৭৭ জন ফিলিস্তিনি মুক্তি পান। আগামী মাসে আরো ৫৫০ জন ফিলিস্তিনি এ চুক্তির আওতায় মুক্তি পাবেন। উল্লেখ্য, ২০০৬ সালে গিলাত শালিত ট্যাঙ্ক নিয়ে অবৈধভাবে গাজা উপত্যকায় ঢোকার পর হামাস যোদ্ধারা তাকে আটক করেছিলেন।
এদিকে মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনি বন্দিদের স্বাগত জানাতে মঙ্গলবার গাজায় জড়ো হয়েছিল দুই লাখের মতো মানুষ। সদ্য মুক্তি পাওয়া এসব বন্দি উৎসবমুখর পরিবেশে নিজেদের দেশের মাটিতে পেঁৗছান। সাবেক এ বন্দিদের আত্মীয়-স্বজন আর হামাস প্রধানমন্ত্রী ইসমাইল হানিয়া তাদের স্বাগত জানান। সেখানে ইসমাইল হানিয়া এক বক্তৃতায় বলেন, 'ইসরাইলি সেনা গিলাত শালিতকে আটক করে কোনো লাভ হয়নি বলে অনেকে মন্তব্য করেছিলেন, কিন্তু আজ প্রমাণ হয়েছে, তাদের ধারণা ছিল ভুল। পশ্চিমতীরেও একই ধরনের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ফিলিস্তিনের স্বশাসন কর্তৃপক্ষের প্রধান মাহমুদ আব্বাস মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দিদের স্বাগত জানিয়েছেন। জাতীয় ঐক্যের নিদর্শন হিসেবে পশ্চিম তীরে মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে হামাসের তিন নেতাও মঞ্চে হাজির হয়েছিলেন। চারজনই একসঙ্গে হাত উঁচু করে ঐক্যের বিষয়টি জানিয়ে দেন।
বিটুনিয়ার একটি চেক পয়েন্টে হানান আল-বারঘুটি নামে এক বোন মুক্তি পাওয়া এক ভাইয়ের জন্যে অপেক্ষা করছিলেন। তিনি বললেন, 'আমি খুব খুশি। অনেক অনেক শুকরিয়া। প্রতিরোধকারীদের আল্লাহ বিজয়ী করুন। এ বন্দিদের মুক্তির মধ্য দিয়ে আমাদের বিজয় হয়েছে। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া।' হানান বলেন, 'এ আনন্দ কতখানি তার ব্যখ্যা দেয়া যাবে না। আমাদের এ অশ্রু আনন্দের। ৩২ বছর ধরে আমি কাঁদছি। আর আজ প্রথমবারের মতো কাঁদছি আনন্দে। আমি আমার ভাইকে বুকে জড়িয়ে ধরবো। আল্লাহ তাদের বিজয়ী করুক।' মুক্তি পাওয়ার পর ফিলিস্তিনি বন্দিদের অনেকেই মিসরের জনগণ ও হামাসের সামরিক শাখা কাসাম ব্রিগেডের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
অন্যদিকে এক হাজারের বেশি বন্দির মুক্তির বিষয়ে ইসরাইলের ভেতরে অনেকে আপত্তি জানিয়েছিল। এ আপত্তি গড়িয়েছিল আদালত পর্যন্তও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা ধোপে টেকেনি। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলছেন, 'বিরোধিতাকারীদের ক্ষোভ ও ভীতির কারণ আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু ইসরাইলি সেনাকে (শালিত) মুক্ত করার বিরল সুযোগ আমি হাতছাড়া করতে চাইনি।' তিনি বলেন, 'সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের পরিবার ও স্বজনদের কষ্ট আমি ভালো করেই বুঝতে পারছি। এটা বর্ণনা করার মতো নয়। তাদের জন্য এটা খুব কঠিন যে, যারা তাদের প্রিয়জনকে হত্যা করেছে, পুরো শাস্তি ভোগ করার আগেই তারা ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে।'
এদিকে ইসরাইলি সেনা কর্মকর্তা গিলাত শালিতের মুক্তির ব্যাপারে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেও ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তির ব্যাপারে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে আমেরিকা। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মার্ক টোনার মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, 'আমরা বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।' তিনি বলেন, 'আমরা এমন কয়েকজন ফিলিস্তিনির মুক্তির ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছিলাম, যারা আমেরিকার জন্যও হুমকি। আর গিলাত শালিতের মুক্তিতে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন বলেছেন, 'তার (শালিত) খুব বেশি দিন বন্দি থাকা হয়ে গেছে।'