পুরনোকে নতুনভাবে পেতে আমরা ভালবাসি সকলেই। তাই তো চশমা থেকে শুরু করে পোশাক বা হাতব্যাগ, পুরনোদিনের প্যাটার্নের সব কিছুই আমরা ফিরিয়ে আনছি নতুন করে। আগেকার দিনের যেসব পোশাকের অদলবদল হয়েছে তার মধ্যে জাম্পসুট অন্যতম। সামনেই পুজো । তাই পুরনোকে নতুন ডিজাইনেই পেতে চাইছেন আধুনিকারা। সাতের দশকে জাম্পসুটে বলিউড কাঁপিয়েছিলেন জিনত আমন।
১৯৭৩ সালে ‘ইয়াদো কি বারাত’ ছবিতে জিনত আমন জাম্পসুটে হয়ে উঠেছিলেন স্বপ্নের নায়িকা। তারপর বেশ কিছু বছর, মোটামুটি নয়ের দশকে জাম্পসুটের চলটা কমই ছিল। কিন্তু এখন আবার ফ্যাশনজগতে জাম্পসুট একদম প্রথম সারিতে চলে এসেছে। ছিপছিপে চেহারার মেয়েদের জাম্পসুটে বেশ ভাল লাগে।
যারা খুব রোগা তাঁরাও বেছে নিতে পারেন এই পোশাক। তবে ভারি চেহারা হলে জাম্পসুট না পরাই ভাল। বলিউডের বিভিন্ন ছবিতে জাম্পসুট সাধারণত এক রঙেই বেশি উঠে এসেছে। তবে তখনকার মত আর নেই এই পোশাক। ডিজাইন পাল্টেছে অনেকটাই। মূল বিষয়কে এক রেখে চোখের ক্লান্তি কাটাতে ও এখনকার মেয়েদের চাহিদার কথা খেয়াল রেখে নানান ডিজাইনে আনা হয়েছে এই পোশাককে। প্রিন্টে আনা হয়েছে বৈচিত্র। জিগজ্যাগ প্রিন্টের জাম্পসুটগুলি হালফ্যাশনের তো বটেই তার সঙ্গে আকর্ষণীয়ও। ওপর থেকে শুরু করে কোমর পর্যন্ত লম্বালম্বি জিগজ্যাগ আনা হয়েছে কোমর থেকে পায়ের নিচ পর্যন্ত আড়াআড়ি রয়েছে জিগজ্যাগ লাইন।
এরফলে জাম্পসুটের প্রিন্টে একঘেয়েমি আসছে না। হাইওয়েস্ট, স্লিভলেস জাম্পসুটের পা গোড়ালির খানিকটা ওপরেই শেষ হচ্ছে। বাচ্চা মেয়েদের জন্য আদর্শ এই ধরনের জাম্পসুট। কিছুটা পুরনো লুককে বজায় রেখে একরঙা জাম্পসুটও দেখতে পাওয়া যাচ্ছে এখন। ওপরের ভাগে কাঁধের কাছে অন্য রঙ দিয়ে ডিজাইন করা হচ্ছে। আবার কাঁধ থেকে জাম্পসুটের বাকি অংশে রাখা হচ্ছে একরকম রঙ। ওপরের অংশে শার্টের মতই বোতাম রাখা হচ্ছে সামনে। জাম্পসুটকে আরও ট্রেন্ডি করে তুলতে উজ্জ্বল রঙের সঙ্গে প্যান্টে রাখা হচ্ছে সাইড পকেট। পকেট খুব বড় নয় আবার খুব ছোটও নয়। জাম্পসুটের রকমফের চোখে পড়ে এর হারেম কাটিঙের প্যান্টে। কোমর পর্যন্ত ঢোলা স্লিভলেস নাইটির মত নেমে এসে হারেম প্যান্টের মত টানা নিচে নেমে গেছে। উজ্জ্বল গোলাপি রঙে সাদা রঙ দিয়ে জয়পুরের প্রিন্ট সাবেকি ঘরানার লুক এনেছে।
এছাড়াও নতুনধরনের হল্টার নেক জাম্পসুট নিয়ে এসেছেন ফ্যাশন ডিজাইনাররা। ওপরে একরঙের স্লিভলেস টপ, প্যান্ট আলাদা রঙের গোড়ালি পর্যন্ত ঝোলা। প্যান্টের কোমর থেকে উঠেছে হল্টার নেকের মত আরেকটি অংশ। টপের সঙে আটকানো রয়েছে। এই ধরনের জাম্পসুট এবারের পুজোয় বেশি চলবে মনে করছেন ডিজাইনাররা। বর্তমানে প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, শ্রদ্ধা কাপুর, অনুষ্কা শর্মা , সোনাক্ষি সিং–এর মত তাবড় হিরোইন নানান শোতে জাম্পসুট পরছেন। হারেম ছাড়াও, টাইট লোয়ার আবার কখনও বা ফ্লেয়ার প্যান্টে নজরে আসছে এই পোশাক। জাম্পসুট অনেকে ব্যাকলেসও পরছেন। প্রিন্টের ক্ষেত্রে ফ্লোরাল প্রিন্টের ও পোলকা ডট বেশ আকর্ষণীয়। কোনও কোনও জাম্পসুটের শুধু ওপরের অংশ বা শুধু নিচের অংশ প্রিন্টেড হচ্ছে। বাকি অংশ রাখা হচ্ছে একরঙের। এই ধরনের পোশাক তৈরি করতে যেমন সহজ তেমনই পরতেও সুবিধা হয়।
সেই কারণে একে বিশ্বজনীন বলা হয়েছিল। জাম্পসুট পরার ফ্যাশন শুরু হয়েছিল ১৯১৯ সালে। শুরুটা করেছিলেন ফ্লোরেনটাইন থায়াৎ। একদম শুরুর দিকে এই পোশাক আনা হয়েছিল বিশেষ কয়েকটি পেশার সঙ্গে যুক্ত মানুষের জন্য। যেমন বিমানচালক, কার রেসার, প্যারাশ্যুটে ডাইভিং করার জন্য, স্কাই ডাইভার্সদের জন্য এই পোশাককেই উপযুক্ত মনে করা হয়েছিল। এই পোশাক বর্তমানে ইটালির বিখ্যাত মিউজিয়াম পিট্টি প্যালেসের সংগ্রহেও রয়েছে। প্রথম দিকে কয়েকটি ভাগে তৈরি করা হয়েছিল জাম্পসুট। সাতটি বোতাম , একটি বেল্ট এবং এক কাটের এই পোশাক বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে সেই সময়। ১৯৪৩ বিখ্যাত গল্প ‘ দ্য লিটল প্রিন্স’ প্রকাশিত হল। সেখানে লেখক গল্পের নায়ককে জাম্পসুট পরা ছবিতেই দেখান। তবে মেয়েদের জাম্পসুট ও ছেলেদের জাম্পসুটের মধ্যে কিছুটা তফাত ছিল। মেয়েদেরটা ছিল একেবারে স্কিন–টাইট আর খুব একটা আরামদায়ক ছিল না, সেখানে ছেলেদেরটা কিছুটা ঢোলা, অন্য ফ্যাব্রিক দিয়ে তৈরি হত, যাতে খেলাধুলোয় সুবিধা হয়।
এরপর জাম্পসুটকে আরও জনপ্রিয় করে তোলেন মার্কিন মিউজিশিয়ান ও অভিনেতা এলভিস প্রেসলি। তিনি স্টেজ পারফরমেন্স দিতে গিয়ে একবার সাদার ওপর উজ্জ্বল সোনালি কাজ করা জমকালো জাম্পসুট পরেছিলেন। সুদর্শন এই অভিনেতা নজর কেড়েছিলেন সহজেই। বাইরের দেশে ছেলেরা জাম্পসুট পরলেও আমাদের দেশে কিন্তু এই পোশাক মূলত মেয়েরাই পরেন। ভারতে বিশেষত কলকাতা ও মুম্বইতে পোশাকের ফ্যাশন পাল্টায় সিনেমা ও ধারাবাহিকের হাত ধরে। যেখন যে ছবিতে যে পোশাককে তুলে ধরা হয় তখন সেই পোশাকই চলে আসে আমাদের ফ্যাশন দুনিয়ায়। পুজোর ঠিক আগেই বলিউডে জাম্পসুটের চল বাড়ায় এবার পুজোয় ফ্যাশনে এই পোশাক থাকছে প্রথম সারিতে।