সারায়েভো, ০৭ মে- বসনিয়ার যুদ্ধে দেশটিতে বসবাসরত সার্বিয়াদের নাগরিকদের (সার্ব) গুড়িয়ে দেয়া ঐতিহাসিক ফারহাত পাশা মসজিদ পুনরায় খুলে দেয়া হয়েছে। ঠিক ২৩ বছর আগে এদিনেই মসজিদটি ধ্বংস করা হয়েছিল। যুদ্ধে তখন আরো ৬১৪ টি মসজিদও গুড়িয়ে দিয়েছিল বসনীয় সার্বরা।
বিভক্ত সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে ধর্মীয় সহিঞ্চুতা বৃদ্ধির লক্ষ্যেই মসজিদটি পুনরায় খুলে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এদিকে মসজিদটি পুনরায় খুলে দেয়ার অনুষ্ঠানে তুরস্কের বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী আহমেদ দাগতুভলুও অংশ গ্রহণ করেছিলেন।
মসজিদ পুনরায় খুলে দেয়ায় আনন্দ প্রকাশ করে স্থানীয় মুসলিম আজসা নেজিরুবিক বলেন, ‘আমি খুবই আনন্দিত। আমি জানি এমনটি আর কখনো ঘটবে না। আমার বিশ্বাস, শহরের অনেক নাগরিক এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাবে। অন্যদিকে তাতজানা কাসমেন নামের এক সার্ব বলেন, ‘আমি চাই যাতে শান্তিপূর্ণভাবে মসজিদটি পুনরায় খোলার কাজটি হয়ে যায়।’
বসনিয়ার মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রধান ইফেন্দি হোসেন কাভাজবিক বলেন, ‘এটি আমাদের মধ্যে ভালো কিছু বয়ে আনবে।’ তবে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের মধ্যে এমন অনেকে আছে যারা বিষয়টিকে একচোখা দৃষ্টিতে দেখেন। তারা কখনো কখনো বিষয়টির গুরুত্ব বুঝতে সক্ষম হন না। আসলে এর জন্য আমরা দুঃখিত। খুবই দুঃখিত।’
উল্লেখ্য, বসনিয়ায় ১৯৯২ সালের ৭ এপ্রিল বসনীয় ও সার্বদের মধ্যে জাতিগত দাঙ্গা শুরু হয়। দীর্ঘ সাড়ে তিন বছরেরও বেশি সময় পর ১৯৯৫ সালের ডিসেম্বরে শেষ হয় যুদ্ধ। বসনিয়ার মুসলিমরা ষাট ও সত্তরের দশকে দেশটিতে স্বাধীনতার জন্য জাতীয়তাবাদী আন্দোলন শুরু করেছিল। তখন সেখানে সার্ব ব্যতীত অন্য জাতির মানুষদের নির্বিচারে হত্যা করেছিল সার্ব সেনারা।
২০১৩ সালের আদমশুমারি অনুসারে, বসনিয়ার মোট জনগণের অর্ধেকই মুসলিম। এর আগে সমাজতান্ত্রিক যুগোশ্লাভিয়ার ছয়টি রাজ্যের একটি ছিল বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা। সমাজতান্ত্রিক শাসনামলে ধর্মকে সেখানে নিরাৎসাহিত করা হতো এবং ধর্মানুসারিদের ওপর নির্যাতন চালানো হতো। নব্বইয়ের দশকে যুগোশ্লাভিয়ার ভাঙন এবং সমাজতন্ত্রের পতনের পর থেকে কোনো প্রকার ভীতি ছাড়াই আবার ধর্ম চর্চা করার সুযোগ পায় বসনিয়াবাসী।
আর/১০:৩৪/০৭ মে