শেরপুর, ০৪ মে- শেরপুরের নকলা উপজেলার বানেশ্বর্দী গ্রামে এক মাদ্রাসা ছাত্রীর গলায় শাড়ী পেচানো লাশ উদ্ধারের ঘটনায় ৫ দিন ধরে এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় চলছে। ওই ছাত্রীকে হত্যা করা হয়েছে, না কি সে আত্মহত্যা করেছে তা নিয়ে শুরু হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। রিমা আক্তার (১৩) নামে ওই ছাত্রীর পরিবারের অভিযোগ, রিমাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার পর ঘটনাটিকে আত্মহত্যা হিসেবে চালানোর পায়তারা চলছে। অন্যদিকে পুলিশ বলছে, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়া ছাড়া বলা যাচ্ছে না সেটি হত্যা না আত্মহত্যা।
সুত্রে জানা যায়, গত ২৯ এপ্রিল শুক্রবার বিকেলে বানেশ্বর্দী গ্রামের কৃষক রোহান মিয়ার কন্যা ও স্থানীয় দাখিল মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী রিমা আক্তারের লাশ পাওয়া যায় বসতঘরের ধর্নায় শাড়ী দিয়ে গলায় পেচানো অবস্থায়। তবে তার হাটু বেঁকে পা দুটো মাটিতে ঠেকানো অবস্থায় পাওয়ায় বিষয়টি হত্যা না আত্মহত্যা তা নিয়ে সন্দেহের উদ্রেক হয়। এছাড়া রিমার মাথায়, গলায় ও দুই হাতে বেশ কয়েকটি জখম দেখা যাওয়ায় সন্দেহ আরও ঘনিভূত হয়। ওইসময় স্কুলছাত্রী রিমার বাবা রোহান মিয়া ও মা বসতবাড়িতে ছিলেন না। জমাজমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে ৩ দিন আগে মঙ্গলবার রোহান মিয়ার সাথে তার সহোদর বড় ভাই জোসনাবালীর ঝগড়া হয়। ওইদিন রোহান নকলা থানায় একটি জিডি করে। তার জের ধরেই রোহানের ভাই জোসনাবালী, চাচাতো ভাইয়ের ছেলে লিটন ড্রাইভার ও পল্লী চিকিৎসক আব্দুর রহিমের পুনরায় ঝগড়া লাগে। এক পর্যায়ে রোহানকে মাটিতে ফেলে প্রতিপক্ষরা মারতে থাকলে রিমা ফিরাতে গেলে তাকেও তার চাচা ও চাচাত ভাইরা মারপিটসহ পরনের জামা-কাপড় টেনে ছিড়ে ফেলে। ওই কারণে অর্থাৎ মারপিট ও শ্লীলতাহানীর অপমান সহ্য করতে না পেরে রিমা লজ্জায় আত্মহত্যা করেছে বলে প্রতিপক্ষের আত্মীয়-স্বজনরা এলাকায় প্রচার করছে।
তবে রোহানের অভিযোগ, প্রতিপক্ষের মারপিটের কারণে স্ত্রীসহ সে হাসপাতালে ভর্তি থাকার সুযোগে রিমাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে তার লাশ ঝুলিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। হয়তোবা ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, ওই ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরও পুলিশ তা আমলে নিচ্ছেন না। বরং উল্টো প্রতিপক্ষের লোকজন তার পরিবারকে ঘটনার বিষয়ে বাড়াবাড়ি না করতে শাসাচ্ছে।
এ বিষয়ে জেলা সদর হাসপাতালের আরএমও ডাঃ মোবারক হোসেন জানান, রিমার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। দু‘একদিনের মধ্যে রিপোর্ট পাঠানো হবে। তিনি রিপোর্ট সম্পর্কে মতামত প্রকাশে অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে পুলিশের তরফ থেকে ময়নাতদন্তের পাশাপাশি ডিজিস্টের ধর্ষণ সংক্রান্ত পরীক্ষা ও রিপোর্ট চাওয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে নকলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম হায়দার মঙ্গলবার বিকেলে সাংবাদিকদের জানান, ঘটনাটি প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা মনে হওয়ায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। তদন্ত চলছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট প্রাপ্তির পর পরবর্তী অবস্থা নির্ভর করবে।