চট্টগ্রাম, ০৭ এপ্রিল- মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ রেলস্টেশনের মাঝের সেতুটি প্রায় ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে সংস্কারের চার দিন পরই ধসে পড়ে। এতে সেতুর সংস্কারকাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
সেতুটি ধসে পড়ার কারণে গত সোমবার ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে সিলেটের সঙ্গে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ১৫ ঘণ্টা রেল যোগাযোগ বন্ধ ছিল।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে শ্রীমঙ্গল ও ভানুগাছ স্টেশনের মধ্যবর্তী ১৫৭ নম্বর সেতুর উইং ওয়াল (দুই পাশের সীমানা খুঁটি) এবং অ্যাপার্টমেন্ট (মাঝখানের খুঁটি) ধসে পড়ে। এতে গত সোমবার ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেদিন রাত সোয়া আটটায় মেরামতের পর আবার রেল যোগাযোগ চালু হয়। ওই দিন ১০টি ট্রেনের যাত্রা বাতিল করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানায়, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকাগামী সুরমা এক্সপ্রেস ট্রেন যাওয়ার পথে ১৫৭ নম্বর সেতুটি দেবে যায়। এরপর ওই সেতু এলাকাকে রেলের ‘ডেড স্টপ’ ঘোষণা করা হয়। অর্থাৎ সেতুটি পারাপারের আগে সংশ্লিষ্ট ট্রেন সেখানে থামবে। লোকোমাস্টার (চালক) চৌকিদার বইয়ে সই করে পায়ে হাঁটা বা পাঁচ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালিয়ে সেতুটি পার করবে। সেতুতে ওঠার আগে সংশ্লিষ্ট চৌকিদার দিনের বেলায় লাল পতাকা এবং রাতে লাল বাতি জ্বালিয়ে লোকোমাস্টারকে ট্রেন থামানোর সংকেত দেবেন।
রেলের প্রকৌশল বিভাগ আরও জানায়, ১৫৭ নম্বর সেতুকে ‘ডেড স্টপ’ ঘোষণা করে মেরামতের জন্য ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে সেতুর মেরামতকাজ শুরু হয়। গত ৩০ মার্চ ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামত প্রায় শেষ হলে ‘ডেড স্টপ’ ঘোষণা প্রত্যাহার করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের একাধিক কর্মকর্তা সংস্কারকাজের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁরা বলেন, বৃহত্তর সিলেটে বর্ষার আগেই পাহাড়ি ঢল নামা শুরু হয়। এ বিষয়টি কি প্রকৌশলীদের মাথায় ছিল না?
শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ স্টেশনের মধ্যবর্তী সেতুটি ধসের ঘটনায় চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ঢাকা বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তাকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মোহাম্মদ মকবুল আহাম্মদ বলেন, মেরামতকাজে ত্রুটি ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখছে তদন্ত কমিটি। এ ছাড়া মেরামতকাজ কতটুকু করা হয়েছিল কিংবা কতটুকু কাজ বাকি ছিল, সেটাও চার সদস্যের তদন্ত কমিটি খতিয়ে দেখবে। তদন্ত প্রতিবেদনে কোনো গাফিলতি পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মেরামতকাজের গুণগত মান সম্পর্কে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলীর কাছেও তিনি জানতে চাইবেন।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (সেতু) আবদুল জলিল বলেন, ২৫ ফেব্রুয়ারি সেতু ধসে যাওয়ার পর মেরামতের জন্য প্রায় ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এক মাসের বেশি সময় ধরে সেতুর উইং ওয়াল ও অ্যাপার্টমেন্ট মেরামত করে ট্রেন চলাচলের উপযোগী করে তোলা হয়। বরাদ্দের ২০-২৫ লাখ টাকা খরচ হয়ে যায়। কিন্তু অসময়ে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে আবার সব ধসে পড়েছে। তিনি বলেন, ‘সোমবার ভোরেও ওই সেতু দিয়ে একটি ট্রেন পার হয়। আকস্মিক পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণের কারণে সেতুর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আবার নতুন করে সেতুটি নির্মাণ করতে হবে।’
এস/২০:৫৫/০৭ এপ্রিল