কাঠমান্ডু, ০৯ ফেব্রুয়ারী- নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালা আর নেই। মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে কাঠমান্ডুর শহরতলীর মহারাজগঞ্জে নিজ বাড়িতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন দেশটির প্রবীণ এ রাজনীতিক।
দেশটির সবচেয়ে পুরনো এবং প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল নেপালি কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন সুশীল কৈরালা। তার বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। দলের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ মানসিংহ গণমাধ্যমকে সুশীল কৈরালার মৃত্যুর খবর জানান।
বর্ষীয়ান এ রাজনীতিবিদের মহাপ্রয়াণের খবরে তার বাড়িতে ছুটে যান দেশটির প্রধানমন্ত্রী কে পি অলি, নেপাল কংগ্রেসের নেতা শের বাহাদুর দেউবা এবং অনান্য রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা। তারা এ রাজনীতিবিদের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান।
আগামী মাসে অনুষ্ঠেয় নেপাল কংগ্রেসের সাধারণ সম্মেলনে দলের প্রেসিডেন্ট পদে ফের দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন সুশীল কৈরালা। ওই পদে তার সম্ভাব্য প্রতি প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার কথা ছিল দলের আরেক শীর্ষ নেতা শের বাহাদুর দেউবা। অবশ্য সুশীল কৈরালার আকস্মিক এ মৃত্যুতে দলের সাধারণ সম্মেলন স্থগিত হয়ে যেতে পারে।
প্রয়াত কৈরালার ব্যক্তিগত সচিব অতুল কৈরালাকে উদ্ধৃত করে এ সংবাদ প্রকাশ করে নেপালি টাইমস। তার বরাত দিয়ে পত্রিকাটি প্রতিবেদনে বলেছে, সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী গত ক’দিন ধরে নিউমোনিয়ায় ভুগছিলেন। অসুস্থতার কারণে গত সোমবার দলের কাঠমান্ডু জেলা সম্মেলন উদ্বোধন করতে পারেননি তিনি।
ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে তার অস্ত্রোপচারও হয়। কিন্তু পরবর্তীতে নানা জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি।
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ৬ দশকেরও বেশি সময় আন্দোলন, সংগ্রাম করেন সুশীল কৈরালা। বিপি কৈরালার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে গণতন্ত্রের সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ হন প্রয়াত সুশীল কৈরালা। তবে এ রাজনীতিক নেপালের মানুষের কাছে সবচেয়ে বেশি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন নতুন সংবিধান প্রণয়নে অবদান রাখার জন্য। নানামুখী সংকটেও দেশটির পার্লামেন্ট ২০১৫ সালের ২০ সেপ্টেম্বর এ সংবিধান অনুমোদন করে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সুশীল কৈরালা নেতৃত্বে না থাকলে সংবিধান প্রণয়নের মতো জটিল বিষয় সম্পন্ন করা হয়তোবা সম্ভব হতো না।
রাজতন্ত্রের পতনে অস্থির হয়ে ওঠে নেপালের রাজনীতি। সঙ্কট মুহূর্তে ২০১৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি দেশটির প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব নেন সুশীল কৈরালা।
সাধারণ জীবনযাপনের জন্য সুপরিচিত সুশীল কৈরালার জন্ম নেপালের রাজনীতিতে প্রভাবশালী কৈরালা পরিবারে ১৯৩৯ সালের ১২ আগস্ট। সুশীল কৈরালাসহ এ পরিবারের চার ব্যক্তি নেপালের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার চাচাতো ভাইদের মধ্যে মাতৃকা প্রসাদ কৈরালা, গিরিজা প্রসাদ কৈরালা ও বিশ্বেশ্বর প্রসাদ কৈরালাও দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী এ রাজনীতিককে ১৯৭৩ সালে বিমান ছিনতাইয়ের অভিযোগে কারাভোগও করতে হয়েছিল।