আনকারা, ১৬ অক্টোবর- সিরিয়ার শরণার্থীদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংক একটি তহবিল গঠনের চেষ্টা করছে। এজন্য ধনী দেশ ও দাতা সংস্থাগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে বিশ্বব্যাংক।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলেছেন, লেবানন ও জর্ডানে অবস্থারত শরণার্থীরা সংখ্যায় অনেক। তাই তারা ধনী দেশ এবং গাল্ফ দেশগুলোর( বাহরাইন, ইরান, ইরাক, কুয়েত, ওমান, কাতার, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত) কাছ থেকে তহবিল গঠনে সাহায্যের আশা করছেন।
তারা আশা করছেন, তহবিলে অংশগ্রহণের মাধ্যমে এই ধারণা সবাই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে গ্রহণ করবে। একইসঙ্গে পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে কেউ না কেউ প্রথম তহবিল দেবে।
এছাড়া আলোচনার মাধ্যমে লেবানন ও জর্ডানকে স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। এ তহবিলে বিভিন্ন দাতব্য সংস্থাকেও সংযুক্ত করা হতে পারে বলে বিশ্বব্যাংক কর্মকর্তারা বিবিসিকে জানিয়েছেন।
বর্তমানে ১০ লাখেরও বেশি শরণার্থী সিরিয়ার সীমান্তবর্তী দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। সবচেয়ে বেশি শরণার্থী রয়েছে তুরস্কে। আর্থিক সামর্থ্যের দিক থেকে কিছুটা পিছিয়ে থাকায় লেবাবন ও জর্ডানের পক্ষে এ ধরণের পরিস্থিতি মোকাবেলা করা কঠিন।
বর্তমানে লেবাননে দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশের সমপরিমাণ রয়েছে সিরিয়ার শরণার্থী। জর্ডানে এ সংখ্যা ২০ শতাংশ।
লেবাবন ও জর্ডানের বাজেট অর্থায়নের প্রায় ৮৫ শতাংশই আসে শরণার্থীদের কাছ থেকে। যারা তাবুর পরিবর্তে সাধারণ বাড়ীতে বসবাস করছেন। যাদের ব্যয়ভার বহন করে জাতিসংঘ। সাধারণত শরণার্থীদের স্বার্থ্য এবং শিক্ষা খাতে বেশি ব্যয় করে জাতিসংঘ।
সেখানে পানি সরবরাহ এবং বিদ্যুৎ ব্যবস্থা রয়েছে। শরণার্থীরা এসবের বিল পরিশোধ করতে চাইলে ভুর্তুকির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সে জন্য শরণার্থীর সংখ্যা বাড়লে লেবানন ও জর্ডান সরকারের ব্যয় বেড়ে যায়।
বিশ্বব্যাংক কর্মকর্তারা জানিয়েছন, শরণার্থীদের সহায়তার জন্য লেবানন ও জর্ডান আগ্রহ দেখালেও এ দুই দেশ মধ্য আয়ের। তাই বিশ্বব্যাংক দেশ দু’টিকে অনুদান বা সস্তায় লোন দিতে পারে না। এ ধরনের লোন শুধু নিম্নআয়ের দেশকে দেওয়া হয়।
কর্মকর্তাদের মতে, মধ্য আয়ের দেশের জন্য এমন একটি সুদে ঋণ দিতে পারে যাতে বিশ্বব্যাংক যেখান থেকে অর্থ ধার করেছে তার সুদ পরিশোধে সক্ষম হয়।
যে পরিস্থিতি তারা তৈরী করেনি তার জন্য সুদ দিতে হবে কেন? এমন যুক্তিতে লেবানন ও জর্ডান এ পরিকল্পনায় সায় দিতে অনিচ্ছুক বলে বিশ্ব ব্যাংককে জানানো হয়েছে।
এ পরিস্থিতে বিশ্বব্যাংক দাতা দেশগুলোকে প্রস্তাব দেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে যারা সামান্য সুদের দায়ভার নিতে চায়। এটা সরাসরি অনুদান হবে না, এ ধরণের ঋণে কিছুটা পার্থক্য থাকবে বলে বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে।
তহবিলে অংশগ্রহণকারীরা জি-৭, উন্নত অর্থনীতির কোনো দেশ, গাল্ফভুক্ত দেশ এবং অপেক্ষাকৃত কম আর্থিক সক্ষমতাসম্পন্ন ইউরোপীয় কোনো দেশ হতে পারবে।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ১৫ মার্চ মাসে সিরিয়ায় শুরু হয়েছিল সরকার বিরোধী আন্দোলন। প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের পদত্যাগের দাবিতে শুরু হওয়া এ আন্দোলন এক পর্যায়ে রূপ নেয় গৃহযুদ্ধের। প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে উৎখাতে যুদ্ধরত বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে আল কায়েদা ও ইসলামিক স্টেট (আইএস) নামের জঙ্গি সংগঠন। এমন পরিস্থিতিতে দেশ ছেড়ে পালাচ্ছেন লাখ লাখ সিরীয়।
সূত্র: বিবিসি