মানিকগঞ্জে গ্যাসের ভয়াবহ সংকট চলছে। গ্যাস সংকটের কারনে শিল্পকারখানায় উৎপাদন প্রায় বন্ধ হওয়ার পথে। আর বাসাবাড়িতে গ্যাস না থাকায় বিকল্প হিসাবে কেরসিনের চুলা ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে গ্রাহকরা। অথচ তাদের প্রতিমাসেই গ্যাসের বিল দিতে হচ্ছে।
তিতাস গ্যাস মানিকগঞ্জের ম্যানেজার ইঞ্জিনিয়ার মানিরুল ইসলাম জানান ধামরাই সহ মানিকগঞ্জে গ্যাসের চাহিদা আছে প্রতি ঘন্টায় ৫১০৪৭ ঘন মিটার । গ্রাহক সংখ্যার হিসাব দিয়ে তিনি বলেন শিল্প কারখানা আছে ৪৭টি, সিএনজি আছে ১৭টি, বানিজ্যিক গ্রাহক আছে ৬৫টি, জেনারেটর আছে ২৯টি এবং আবাসিক গ্রাহক আছে ৮৫০০টি। তবে তিনি চাহিদার কতটুকু দিতে পারছেন তার হিসাব দিতে পারেননি।
আকিজ পার্টিকেল এ্যান্ড হাডবোর্ড কারখানার মেইনটেন্যান্স ম্যানেজার হাসান আল বনি জানান তাদের কারখানা ২৪ ঘন্টা চালু রাখতে কমপক্ষে ৪ পিএসআই চাপে গ্যাস থাকা দরকার। কিন্তু রাতের দিকে কয়েক ঘন্টা প্রয়োজনিয় চাপ থাকলেও সারাদিন কোন চাপই থাকেনা। আবার বিদ্যুতে লোডশেডিং এবং লো ভোল্টেজের কারনে কারখানা চালু রাখা সম্বব হচ্ছেনা। লো ভোল্টেজের চালু রাখলে অত্যাধুনিক এবং মূল্যবান যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যায়।
এদিকে নাম প্রাকাশে অনিচ্ছুক একটি স্টিল কারখানার দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান বিদ্যুতের পাশাপাশি গ্যাস সংকটের কারনে তাদের উৎপাদন কার্যত বন্ধ হয়েগেছে। তিনি জানান গত এক মাস ধরে তাদের চাহিদার এক শাতাংশ গ্যাস পাওয়া যাচ্ছেনা। ফলে তাদের রড উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
ঢাকা-আরিচা সড়কের বরঙ্গাইলে অবস্থিত মুন্নু সিএনজি স্টেশণের মালিক টিটু খান জানান তিতাসের সাথে চুক্তি অনুযায়ী সিএনজি স্টেশনে গ্যাসের চাপ থাকবে ১৫ পিএসআই। অথচ তাদের মিটার রিডিং দেখায় শুন্য পিএসআই। মানিকগঞ্জ ও সাভার সিএনজি স্টেশন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক টিটু খান বলেন গ্যাসের অভাবে তাদের ব্যবসা এখন লাটে ওঠার পর্যায়ে। তিনি বলেন অধিকাংশ সিএনজি স্টেশন এখন ঋন খেলাপিতে পড়েছে।
পঞ্চানন কুন্ড মানিকগঞ্জ শহরে তার হোটেল-রেস্টুরেন্টে রান্না বান্নার জন্য ব্যবহার করেন চারটি গ্যাসের চুলা। ব্যবহার করুক বা না করুক এর জন্য সর্বনি¤œ ৭হাজার টাকা বিল। প্রতিদিন তার কমপক্ষে দশ ঘন্টা চুলা জ্বালাতে হয়। কিন্তু গ্যাসের অভাবে তিনি দেড় দুই ঘন্টার বেশি গ্যাসের চুলা ব্যবহার করতে পারেননা। পঞ্চানন কুন্ড জানান গ্যাসের অভাবে জ্বালানী হিসাবে তিনি কাঠ ব্যবহার করছেন। মাসে তাকে জ্বালানী কাঠ কিনতে ব্যয় করতে হচ্ছে কমপক্ষে দশ হাজার টাকা। গ্যাস না পেলেও ৭হাজার টাকা বিল দিতে হচ্ছে বলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করলেন। তিনি জানান জ্বালানী খরচ বেড়ে যাওয়ায় তাকেও খাবার দাবারের দাম বাড়াতে হয়েছে। আর এ জন্য কাষ্টমারদের নানান কটুক্তি শুনতে হচ্ছে।
মানিকগঞ্জ পৌল এলাকার দাশড়া গ্রামের শহিদুল ইসলামের স্ত্রী পারভিন ইসলাম জানান সকাল আটটারা পর থেকে বিকেল ছয়টা পর্যন্ত গ্যাস থাকেনা। রাতে যে টুকু থাকে তাতে পানি গরম হতে পারে, কিন্তু রান্না বান্নার কাজে লাগেনা। বাধ্য হয়ে তিনি কেরসিনের চুলা কিনেছেন। তিনিও অভিযোগ করেন গ্যাস না থাকলেও তাকে মাস শেষে ৪৫০ টাকা বিল দিতে হয়। আবার কেরসিন বাবদ তার প্রায় ৫/৬শ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। এ অভিযোগ গ্যাস সংযোগ নেয়া মানিকগঞ্জের প্রতিটি পরিবারের।