খুলনা, ২৭ এপ্রিল- ওয়ানডে এবং টি২০তে অসাধারণ পারফরম্যান্স। তাহলে টেস্টে কি হবে? এ প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে ওয়ানডে এবং টি২০’র পর থেকে। কারণ, পাকিস্তান যতই ভঙ্গুর হোক, টেস্ট সিরিজ যে খুব সহজ হবে না সেটা অনস্বীকার্য। আবার ওয়ানডে এবং টি২০তে ভালো করার পর টেস্ট সিরিজে ভালো করার একটা তাড়নাও তৈরী হয়েছে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে। সে কথাটাই ফুটে উঠেছে বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের কণ্ঠে।
টেস্টে পরাশক্তিগুলোর বিপক্ষে এতদিন ড্র করার লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নামতো বাংলাদেশ। এই প্রথম কোন সিরিজে এসে জয়ের লক্ষ্যের কথা জোর গলায় জানাতে পারলেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক। খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে প্রথম টেস্টের আগেরদিন (আজ, সোমবার) সংবাদ সম্মেলনে মুশফিকুর রহিম বলেন, ‘আমরা জয়ের লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নামবো। যদি ড্রয়ের লক্ষ্যে মাঠে নামি তাহলে মাঠের খেলায় সেটার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।’
টেস্ট র্যাংকিংয়ে পাকিস্তান রয়েছে চার নম্বরে। দলে ফিরেছেন অধিনায়ক মিসবাহ-উল হক। সঙ্গে আছেন টেস্ট ব্যাটসম্যান ইউনিস খান। সুতরাং, বাংলাদেশের জন্য টেস্ট সিরিজ খুবই কঠিন হতে পারে। এ কারণেই জয়ের লক্ষ্যের কথা জানালেও মুশফিক একই সঙ্গে এটাও বলেছেন, ‘পাঁচদিন পুরোপুরি খেলার জন্য আমাদের সামথ্য আছে এবং আমরা পুরো পাঁচদিন খেলার জন্য আমরা মানসিকভাবে প্রস্তুত।’
খুলনার উইকেট এবং নিজেদের শক্তি-সামর্থ্যরে কথা জানাতে গিয়ে বেশ আত্মবিশ্বাসী শোনা গেলো মুশফিকের কণ্ঠ। তিনি বলেন, ‘খুলনার উইকেট বেশ ভালো। এখানে বাংলাদেশের রেকর্ডও ভালো। সবচেয়ে বড় কথা, বাংলাদেশ দলে এখন যে শক্তি রয়েছে, তাতে ৬০০’র বেশি রান তোলার সামথ্য আছে আমাদের। এবং একই সঙ্গে প্রতিপক্ষের ২০ উইকেট নেওয়ারও সামথ্য আছে।’
ওয়ানডে এবং টি২০তে ভালো করার কারণে, টেস্ট সিরিজেও ভালো করার তাড়না বেড়ে গেছে বলে মনে করেন মুশফিক। একই সঙ্গে পাকিস্তান দলের প্রশংসাও করেন বাংলাদেশের দলনায়ক। ইউনুস খান ও মিসবাহ নতুন করে টেস্ট যোগ দিয়েছে।
এদের বাইরে কাউকে নিয়ে কোনো পরিকল্পনা আছে আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মুশফিক বলেন,‘ মিসবাও ইউনিস টেস্ট ক্রিকেটে তারা কিন্ত দারুন ব্যাটসম্যান। বলতে গেলে লিজেন্ডই। অবশ্যই তাদের ব্যাটিং লাইনআপে শক্তিটা একটু বেড়েছে। তাদের মাথায় কিন্তু থাকবে ৪-০।
সুতরাং মানসিক ভাবে পাকিস্তান একটু হলেও পিছিয়ে থাকবে। আমাদের বোলারদের মূল টার্গেটই থাকবে তাদের এই ২ জন মূল খেলোয়াড়কে চাপে রাখা। যেন দ্রুত তাদের আউট করতে পারি। তবে আমাদের জিততে হলে ওদের ২০টি উইকেটই নেওয়া লাগবে। আর আমাদের ব্যাটসম্যানরা যদি দায়িত্ব নিয়ে খেলতে পারে তাহলে ম্যাচে ফলাফর আমাদের পক্ষেই আসবে।’
খালেদ মাহমুদ সুজনের নেতৃত্বে সেবার টেস্টে জিততে জিততে হেরে গিয়েছিল বাংলাদেশ দল। ঐ সময় অনেক ছোট ছিলেন মুশফিকুর রহিম। তবে সেই স্মৃতি আজও বাংলাদেশ অধিনায়ককে তাড়িয়ে বেড়ায়। এ বিষয়ে মুশফিক বলেন,‘ যতটুকু মনে আছে তখন বিকেএসপিতে পড়তাম। খেলাটা দেখেছি এবং খুবই কষ্ট পেয়েছিলাম। আক্ষেপটাতো অবশ্যই আছে। আক্ষেপ শুধু এটা নয়; পাকিস্তানের সঙ্গে জয় নেই। আক্ষেপ ছিল, টেস্ট ক্রিকেটে আমাদের যে ক্ষমতা আছে সেই অনুযায়ি আমরা শেষ ১৫ বছর ধরে খেলতে পারেনি। সত্যি বলতে শেষ দুই বছর ধরে আমরা বাইরে এবং হোমে আমরা খুব ভাল ক্রিকেট খেলছি। যাই হোক আমরা ভাল একটি আত্মবিশ্বাস নিয়ে টেস্ট খেলতে যাচ্ছি। আমরা কমপক্ষে ৫টি দিন যেন ভাল ক্রিকেট খেলতে পারবো সেই আত্মবিশ্বাসটা আমাদের মধ্যে আছে।’
গত দুই বছর ধরে ব্যাট হাতে সমানে দ্যুতি ছড়িয়ে যাচ্ছেন মুশফিকু রহিম। আর অধিনায়ক হবার পর তার ব্যাটটাও আরও চওড়া হয়েছে। তাতে করে অধিনায়কের এমন পারফরম্যান্স দলের অন্য সদস্যরাও ভালো করার জন্য দারুণভাবে মুখিয়ে থাকে। এ বিষয়ে মুশফিক বলেন, ‘তাতো অবশ্যই। এটা আসলে যে কোন ফরম্যাটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অধিনায়ক হিসেবে যখন কেউ রান করবে, উইকেট নেবে এবং সবকিছু মিলে যখন সিদ্ধান্তগুলো ঠিক থাকবে তখন দলের উপর আলাদা একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। এটা সব দলই চায়। দলের অধিনায়ক সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবে। অবশ্যই আমার ইচ্ছাটাও তেমনই আছে।’