কাওরানবাজারস্থ জনতা টাওয়ারের দেশের প্রথম সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক নিজেদের হাতছাড়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিস-বেসিস। দাবি করেছে নির্মীয়মান এই ভবনটিতে স্থানান্তরিত হতে যাচ্ছে সদ্য গঠিত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।
বৃহস্পতিবার বেসিস কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি মাহবুব জামান।
তবে বেসিস’র এই অভিযোগ ও দাবি সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে বার্তা২৪ ডটনেটকে জানিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সচিব রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, “আমি বেশ কিছুদিন হলো রাষ্ট্রীয় কাজে দেশের বাইরে ছিলাম। তবে দেশে এসেও এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্তের কথা শুনিনি। তাছাড়া এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে হাইটেক পার্ক অথরিটি।”
জনতা টাওয়ারে নতুন তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের স্থানান্তর সম্পর্কে জানতে চাইলে পাল্টা প্রশ্ন করে তিনি বলেন, “সচিবালয়ের মতো জায়গা ছেড়ে কাওরানবাজারের মতো বাণিজ্যিক এলাকায় যেতে চাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করাটি খুব একটা যৌক্তিক? আসলে আমি এখনও এমন কোনো প্রস্তাবনা সম্পর্কে জানি না।”
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের ৩ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের প্রথম সভায় কাওরানবাজারস্থ জনতা টাওয়ারকে দেশের প্রথম সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক হিসাবে গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সে পরিনপ্রেক্ষিতে এটি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়কে বরাদ্দ প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ না থাকায় এর উন্নয়ন কাজে কিছুটা বিঘ্ন ঘটে।
তবে ইতোমধ্যে এই টাওয়ারটিতে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপে সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য Expression of Interest (EoI) আহবান করা হয় এবং তারপর Request for Proposal (RFP) আহবান করা হয়। বিগত কয়েক মাসে প্রাপ্ত অফারসমূহ যথাযথ প্রক্রিয়ায় যাচাই বাছাই করে চুলচেরা বিশ্লেষণ এবং যাবতীয় Verification করে একটি কোম্পানিকে নির্বাচন করা হয়। Procurement rule অনুযায়ী তা আইন মন্ত্রণালয়ের Vetting (অনুমোদন) এর জন্য পাঠনো হয়।
চলতি বছরের গত ৯ ফেব্রুয়ারি ডিজিটাল টাস্কফোর্সের নির্বাহী কমিটির সভায় বিষয়টি উত্থাপিত হয় এবং অবিলম্বে কার্যাদেশ প্রদান করে সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কের সমুদয় কার্যক্রম সম্পন্ন করে বর্তমান বছরের সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে চালু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
এরপর গত ১৫ ফেব্রুয়ারি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আবুল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হাইটেক পার্ক অথোরিটির সভায় মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে কার্যাদেশ দেয়া এবং সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে এটিকে সম্পুর্ণরূপে চালু করার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের (ভেটিং) জন্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়।
ইতোমধ্যে আইন মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন পাওয়া গেছে এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। উক্ত সভায় সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক বরাদ্দের জন্য চার সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করা হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের গত ১৬ ফেব্রুয়ারি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রী নির্মানাধীণ পার্কটি পরিদর্শন করেন এবং এর কার্যক্রম নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে পরামর্শ দেন।
সবশেষ গত ২২ ফেব্রুয়ারি বেসিস সফটএক্সপোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত আগমী ৬ মাসের মধ্যে সফ্টওয়্যার টেকনোলজি পার্ক কার্যকর করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
কিন্তু এতোসব উদ্যোগের পর হঠাৎ করেই গত বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে দেয়া রিকিত বক্তব্যে বিসিএস সভাপতি মাহবুব জামান বলেন, “আমরা শঙ্কাগ্রস্ত যে, চূড়ান্ত পর্যায়ে জনতা টাওয়ারে মন্ত্রণালয়ের কার্যালয় স্থাপন ও অন্যান্য সরকারি বেসরকারি অফিস স্থাপনের প্রস্তাব দিয়ে মন্ত্রণালয় থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে সারসংক্ষেপ পাঠানোর উদ্যোগ চলছে। এর ফলে বিগত ২০ মাসের সকল প্রক্রিয়া নস্যাৎ হয়ে যাবার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে এবং দেশের প্রথম সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক স্থাপন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।”
তিনি আরো বলেন, “এই খবর জানার সাথে সাথেই আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের চেয়ারপার্সন এবং মাননীয় প্রধামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে চিঠি দিয়েছি এবং জরুরি ভিত্তিতে সাক্ষাত প্রার্থনা করেছি। আমরা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিব মহোদয়ের সঙ্গেও সাক্ষাত প্রার্থনা করেছি।”
প্রথম ও পূর্ণাঙ্গ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় স্থাপন করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে মাহবুব জামান বলেন, “আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে সচিবালয়ে অবিলম্বে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অফিস স্থাপনের জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।”
অবশ্য জনতা টাওয়ার ঘিরে প্রকাশিত এসব আশঙ্কা ও অভিযোগের সুনির্দিষ্ট কোনো ভিত্তি সম্পর্কে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কোনো তথ্য উপস্থাপন করা হয়নি। মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট কোনো সূত্র এ সম্পর্কিত অভিযোগ আমলে নিতে রাজি হয়নি। এ বিষয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রীর বক্তব্য জানতে ফোন করা হলে কোনো সাড়া মেলেনি।
এদিকে জনতা টাওয়ারের হাইটেক পার্ক নিয়ে হঠাৎ করেই কেন এমন নাটকীয়তার জন্ম নিলো সে সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাইটেক পার্কটি মূলত বিকাশমান সফটওয়্যার শিল্পের নবীন সদস্যদের জন্য তৈরি করা হলেও মূলত অনগ্রসর কিংবা অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রতিষ্ঠানগুলোর তুলনায় প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে বেসিস এবং বিডি জবস কেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে। এ নিয়ে সদ্যসমাপ্ত বেসিস সফটএক্সপোতে উপস্থিত অনেক উদ্যোক্তাই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করায় এ নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে যার বহিঃপ্রকাশ ঘটলো।