আপনি কি ডায়াবেটিস রোগে ভুগছেন? তবে আপনার জেনে রাখা ভালো, প্রত্যেক ডায়াবেটিস রোগীর হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি প্রায় শতভাগ। আপনি যদি হৃদরোগের ঝুঁকি এড়াতে চান তবে প্রথম থেকেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে আপনাকে বেশ তৎপর হতে হবে। খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, কায়িক শ্রম, খাওয়ার ওষুধ ও ইনসুলিন- এর মধ্যে যা যা প্রয়োগ করা প্রয়োজন তার দ্বারাই আপনার চিকিৎসা অব্যাহত রাখতে হবে। মনে রাখবেন আপনার চিকিৎসা গ্রহণের মূল লক্ষ্য হলো রক্তের সুগার সব সময় ১০ অথবা তার নিচে রাখা। ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ, হার্ট ফেইলুর, কার্ডিওমাইওপ্যাথি এবং পেরি ফেরাল ভাসকুলার ডিজিজ- ডায়াবেটিকজনিত অন্যতম ও প্রধান হৃদরোগ।
ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ
ডায়াবেটিস রোগীরা রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য কায়িক শ্রম, ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটি করে থাকেন। যদি আপনার হাঁটার দক্ষতা কমে যায়, হাঁটতে গেলে শরীর প্রচণ্ড ঘেমে যায়, অল্প হাঁটাতেই খুব বেশি পরিশ্রান্ত হয়ে পড়েন বা দম খাটো হয়ে আসে, হাঁটার সময় বুক-গলা চেপে আসে বা বুক ব্যথা অনুভূত হয়, বুকের ব্যথা, গলা, চোয়াল, কাঁধ, বাহু অথবা হাতে ছড়িয়ে পড়ে এবং হাঁটা বা ব্যায়াম বন্ধ করলে কয়েক মিনিটের মধ্যেই উপসর্গগুলো নিরাময় হয়ে যায়, তবে আপনাকে বুঝতে হবে আপনি নিশ্চিতভাবে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন।
হার্ট ফেইলুর
ডায়াবেটিস রোগীরা যদি আগে কখনো হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, যদি দীর্ঘ সময় ধরে রক্তে সুগার অনিয়ন্ত্রিত থেকে থাকে, যদি আগে কখনো রিং পরে থাকেন অথবা বাইপাস (ঈঅই) অপারেশন করে থাকেন কিংবা অনেক বছর ধরে ডায়াবেটিক রোগে ভুগছেন এসব ক্ষেত্রে আপনার হার্ট ফেইলুর হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। হার্ট ফেইলুরের উপসর্গ হিসেবে আপনার কর্মদক্ষতা অনেক কমে যেতে পারে। যেমন হাঁটাহাঁটি করতে গেলে সহজে হাঁপিয়ে ওঠা, সিঁড়ির উপরে উঠতে কষ্ট হওয়া বা দম খাটো হয়ে আসা অথবা বুক চেপে আসা বা বুক ব্যথা অনুভূত হওয়া, রাতে শোয়ার সময় হালকা কাশি হওয়া বা শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, শ্বাসকষ্টের জন্য মধ্যরাতে ঘুম ভেঙে যাওয়া ইত্যাদি।
কার্ডিওমাইওপ্যাথি
ডায়াবেটিক রোগীদের কোনোরূপ উপসর্গ ছাড়াই ধীরে ধীরে হার্ট দুর্বল হতে থাকে। যাদের ডায়াবেটিস দীর্ঘ সময় ধরে অনিয়ন্ত্রিত থাকে তাদের কার্ডিওমাইওপ্যাথি হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। বুকের এক্স-রেতে দেখা যায় হার্ট বড় হয়ে গেছে। এ অবস্থায় উপসর্গগুলো হলো- শারীরিক কর্মক্ষমতা ধীরে ধীরে কমে আসা, বুক ধড়ফড় করা, খুব সহজেই শ্বাস-প্রশ্বাস ঘন হয়ে আসা, অবসাদগ্রস্ততা দেখা দেওয়া, কোনো জটিল কর্মসম্পাদন করতে গেলে মেজাজ খিটমিটে হওয়া এবং সহজেই রাগান্বিত হয়ে যাওয়া।
পেরিফেরাল ভাসকুলার ডিজিজ
হাত-পায়ের শক্তি কমে আসা, হাত ও পায়ের বোধশক্তি কমে যাওয়া, জ্বালাপোড়া অনুভূত হওয়া, হাত-পায়ের পশম ঝরে যাওয়া, ব্যথা অনুভূত হওয়া, ক্ষত হলে দেরিতে শুকানো অথবা ক্ষত বা ঘা কোনভাবেই না শুকানো, কখনো কখনো হাত-পায়ে বিভিন্ন পচন ধরার মতো লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়।
ডা. এম শমশের আলী, সহকারী অধ্যাপক, ঢাকা মেডিকেল কলেজ।