ঢাকা, ৪ ফেব্রুয়ারি: ব্যাংকিং খাতে সরকারের ঋণের পাহাড় রয়েই গেছে। ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত এই খাত থেকে সরকারের ঋণের পরিমাণ ছিল ১৫ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা, যা পুরো বছরের লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৮০ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
তবে ব্যাংকিং খাত থেকে সরকারের ঋণ গত কয়েক মাসের তুলনায় কমেছে। গত নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে এ খাতে ঋণ ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছিল। প্রাপ্ত তথ্য থেকে দেখা গেছে, গত অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই- ডিসেম্বর) তুলনায় ব্যাংকিং খাত থেকে সরকারের ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ১৩ গুণ। গত অর্থ বছরের জুলাই পর্যন্ত ব্যাংক থেকে সরকার ঋণ নিয়েছিল এক হাজার ৩২৭ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে সরকার ব্যাংক ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১৮ হাজার ৩৭৯ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা আবার বাড়িয়ে ১৮ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। সে হিসাবে অর্থবছরের বাকী সময়ে সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারবে তিন হাজার ৭১২ কোটি টাকা।
জানা গেছে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভর্তুকি দিতে সরকার ব্যাপক হারে ঋণ করে যাচ্ছে। এছাড়া বৈদেশিক সহায়তার হার কমে আসার কারণেও সরকারকে ব্যাংক নির্ভরশীল হতে বাধ্য করেছে। ফলে, সরকার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে গড়ে দৈনিক ৯৬ কোটি টাকা ঋণ নিচ্ছে। অথচ লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ব্যাংক থেকে সরকার দৈনিক ঋণ নিতে পারবে মাত্র ৫২ কোটি টাকা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের আর্থিক সংকট মেটাতে এই মুহূর্তে একটি বড় বৈদেশিক ঋণের প্রয়োজন। কেননা বৈদেশিক সহায়তা কমে যাওয়ার কারণে এ সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০১১-১২ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে দেশে এসেছে মোট ৮০ কোটি ৭৪ লাখ ডলারের ঋণ-সহায়তা। এর মধ্যে ৪১ কোটি ৫৩ লাখ ডলারই চলে গেছে আগের নেয়া ঋণ ও সুদ পরিশোধে। ফলে ওই ছয় মাসের হিসাবে সরকারের হাতে থাকছে ৩৯ কোটি ২০ লাখ ডলার।
এর আগের অর্থবছরে এই সময়ে (জুলাই-ডিসেম্বর) বিদেশি ঋণ-সাহায্য বাবদে এসেছিল মোট ৯৮ কোটি ৪৫ লাখ ডলার, যার মধ্যে আগের ঋণ ও সুদ পরিশোধে সরকারের ব্যয় হয়েছিল ৩৮ কোটি ৮ লাখ ডলার। শেষ পর্যন্ত উন্নয়নে ব্যয় করার জন্য সরকারের হাতে ছিল ৬০ কোটি ৩৬ লাখ ডলার। এই হিসাবে চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে নিট বিদেশি সাহায্যের পরিমাণ কমেছে ৩৫ শতাংশের বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বার্তা২৪ ডটকমকে বলেন, “সামষ্টিক অর্থনীতির স্বার্থে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণের পরিমান কমানো দরকার। ব্যাংকগুলোর ওপর সরকারের নিভর্রতা বাড়ার কারণে তারল্য সঙ্কট, মুদ্রা বিনিময় হারে বিরূপ প্রভাব পড়া ছাড়াও সামগ্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় প্রভাব পড়ছে।”
সরকারের ব্যাংক ঋণনিভর্রতা কমানোর জন্য বৈদেশিক বিনিয়োগের ওপর জোর দেয়া প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
সরকারের অধিক ঋণ গ্রহণ বেসরকারি খাতের উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করে সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, ব্যাংক থেকে সরকার অতিরিক্ত ঋণ নেয়ায় শিল্পোদ্যোক্তারা ঋণ পাচ্ছে না। সরকারী মালিকানাধিন চার ব্যাংকসহ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে দেখা দিয়েছে চরম তারল্য সংকট। এর ফলে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ কমবে। নতুন শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠা হবে না । বাড়বে বেকারত্ব।