নারায়ণগঞ্জ, ০৩ মে- নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট চন্দন কুমার সরকারসহ একসঙ্গে সাতজনের অপহরণের ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ থানায় মোট ১২ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়। এতে নাম উল্লেখ করা হয় ৬ জনের। এ ৬ জনের কাউকেই আজও পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি। এ ৬ জনের মধ্যে কয়েকজনের সঙ্গে নজরুল ইসলামের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ ছিল বলে জানিয়েছে দৈনিক সমকাল।
পত্রিকাটি জানায়, মামলায় প্রধান আসামি সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি নূর হোসেন। এ ছাড়া নামোল্লেখ করা অন্য ৫ আসামি হলেন একই থানার সাধারণ সম্পাদক হাজি ইয়াছিন মিয়া, নূর হোসেনের ঘনিষ্ঠ ও বিএনপি অনুসারী হাসমত আলী হাসু, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম রাজু, একই থানার শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন আশিক এবং ভূমি ব্যবসায়ী ও নূর হোসেনের ঘনিষ্ঠ ইকবাল হোসেন।
নজরুলের পরিবারও প্রথম থেকেই অভিযোগ করে আসছে- ছয় আসামিকে গ্রেফতার করলেই হত্যারহস্য উন্মোচিত হবে। তারা দীর্ঘদিন ধরে নারায়ণগঞ্জে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে আসছিল। নদী দখল, দোকান ভাগ-বাটোয়ারা, অবৈধ বাণিজ্য, বিরোধপূর্ণ জমি কেনা-বেচা, পরিবহনে চাঁদাবাজি, শিল্পকারখানায় চাঁদাবাজি, ঝুটের অবৈধ বাণিজ্যসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে কোটি কোটি টাকা আয় করার অভিযোগ রয়েছে এই ছয় আসামির বিরুদ্ধে। বর্তমানে তারা পলাতক থাকায় অভিযোগ সম্পর্কে তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
দৈনিক সমকাল জানায়, মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেন একসময় জাতীয় পার্টি, পরে বিএনপিও করতেন। এলাকাবাসীর মতে, রাজনীতি ছিল তার সাইনবোর্ড। অবৈধ ব্যবসায়িক স্বার্থেই তিনি রাজনীতি করতেন। '৯৭ সালে সিদ্ধিরগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে নূর হোসেনের সঙ্গে প্রার্থী হন তৎকালীন জেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম। নির্বাচনে নূর হোসেন জয়লাভ করেন। এ সময় তিনি বিএনপি করতেন। এরপর থেকেই তাদের মধ্যে শত্রুতার সূত্রপাত।
মামলার দ্বিতীয় আসামি হাজী ইয়াছিন মিয়া। দীর্ঘদিন ধরে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল হয় না। নজরুল ইসলাম একসময় জেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এবং পরে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হন। নজরুল আগামী কাউন্সিলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ কারণে ইয়াছিনের সঙ্গে নজরুলের দূরত্ব তৈরি হয়।
মামলার তৃতীয় আসামি হাশমত আলী হাসু বিএনপির অনুসারী হলেও দলে তার কোনো পদ-পদবি নেই। হাসু সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলের সড়ক ও জনপথ অধিদফতরে ঠিকাদারি করেন। নিহত নজরুলও সড়ক ও জনপথ অধিদফতরে ঠিকাদারি করতেন। তবে হাসু বিএনপির অনুসারী হলেও তিনি ছিলেন নূর হোসেনের ঘনিষ্ঠজন। সড়ক ও জনপথে নূর হোসেনের নেতৃত্বে যারা ঠিকাদারি ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন হাসু তাদেরই একজন।
মামলার চতুর্থ আসামি আমিনুল ইসলাম রাজু সিদ্ধিরগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক। তার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা রয়েছে। নূর হোসেন সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য রাজু। নূর হোসেনের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় রাজুর সঙ্গেও নজরুলের বিরোধ ছিল চরমে।
মামলার পঞ্চম আসামি আনোয়ার হোসেন আশিক সিদ্ধিরগঞ্জ থানা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক। বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত থাকলেও তিনি নূর হোসেনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। বর্তমান সরকারের আমলে হামলা-মামলা থেকে বাঁচতে নূর হোসেনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে চলেন তিনি। তার বিরুদ্ধেও এক ডজন মামলা রয়েছে।
মামলার ষষ্ঠ আসামি ইকবাল হোসেন বিএনপির রাজনীতি এবং ভূমি বেচা-কেনার সঙ্গে জড়িত। তিনিও নূর হোসেনের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। তবে ২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে নজরুল ইসলামের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ইকবাল হোসেনও। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় নজরুলের মনোনয়ন বাতিলের জন্য বিভিন্ন মামলার কাগজপত্র নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা দেন ইকবাল। এতে নজরুলের মনোনয়নপত্র বাতিল করে দেয় বাছাই কমিটি। এ কাজে ইকবালকে সহযোগিতা করেন মামলার ৩ নম্বর আসামি হাসু, ৪ নম্বর আসামি আমিনুল ইসলাম রাজু ও ৫ নম্বর আসামি আনোয়ার আশিক। এসব কারণে ইকবাল, হাসু, আনোয়ার ও রাজুর সঙ্গে নিহত নজরুলের চরম বিরোধ ছিল।