বাংলাদেশে এইডস’র চেয়েও বেশি হারে বিস্তার ঘটছে থ্যালাসেমিয়া রোগের৷ অথচ
এইডস প্রতিরোধে যতটা উদ্যোগ দেখা যায়, থ্যালাসেমিয়ার ক্ষেত্রে তেমন উদ্যোগ
গ্রহণ করা হচ্ছে না বলে মনে করেন রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মোর্শেদ জামান৷
থ্যালাসেমিয়া রোগের ধরন এবং পূর্বলক্ষণ সম্পর্কে রাজশাহী বক্ষব্যাধি
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. মোর্শেদ জামান বলেন,
“থ্যালাসেমিয়া হচ্ছে এক ধরনের বংশগত বা জন্মগত রক্তস্বল্পতা৷ এটি রক্তের
ত্রুটিপূর্ণ হিমোগ্লোবিনের জন্য হয়ে থাকে৷ এর তিনটি ধরন রয়েছে৷ তীব্র,
মাঝারি এবং মৃদু থ্যালাসেমিয়া৷ তীব্র থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্তদের শিশু
অবস্থা থেকেই এই রোগের উপসর্গগুলো দেখা যায়৷ শিশু রক্তস্বল্পতায় ভোগে,
চেহারায় ফ্যাকাসে ভাব দেখা যায়৷ খাওয়ার রুচি থাকে না৷ খেতে গেলে বমি হয়৷
এমতাবস্থায় শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধিও বাধাগ্রস্ত হয়৷ আবার রক্ত ভেঙে যাওয়ার
ফলে জন্ডিস বা পাণ্ডু রোগও হতে পারে৷ এছাড়া যকৃত ও প্লীহা আকারে বৃদ্ধি
পায়৷ একইসঙ্গে রক্ত ভেঙে যাওয়ার ফলে অতিরিক্ত রক্ত তৈরি হতে থাকে এবং অস্থি
বা হাড়ে বিকৃতি ঘটে৷ চেহারাতেও রোগের উপসর্গ ফুটে ওঠে৷”
বর্তমানে থ্যালাসেমিয়া রোগের প্রকোপ কতটা, এমন প্রশ্নের উত্তরে ডা. জামান
বলেন, “বাংলাদেশ সরকারের এ সংক্রান্ত কোনো জরিপ নেই৷ তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য
সংস্থা ডাব্লিউএইচও’র হিসেবে, বিশ্বে ৬.৫ শতাংশ মানুষ থ্যালাসেমিয়ায়
আক্রান্ত৷ আর বাংলাদেশে চার থেকে আট শতাংশ মানুষ থ্যালাসেমিয়া ও
হিমোগ্লোবিনই ডিজঅর্ডার- যা থ্যালাসেমিয়ার কাছাকাছি অবস্থা সেটি বহন করছে।”
বাংলাদেশে থ্যালাসেমিয়া রোগের ভয়াবহতা কিংবা ঝুঁকি সম্পর্কে তিনি বলেন,
“এটা যেহেতু বংশগত রোগ, তাই ধীরে ধীরে বংশ পরম্পরায় তা ছড়িয়ে পড়ছে৷ ফলে এখন
যদি চার শতাংশ মানুষ এটি বহন করে এবং সচেতনতার মাত্রা না বাড়ে, তাহলে এটা
ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে৷ যেমনটি হয়েছিল সাইপ্রাসে৷ সেখানে ৩৫ শতাংশ
মানুষ থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছিল৷ তবে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে
সেখানেও এটার প্রকোপ কমে এসেছে৷ বাংলাদেশে এইডস এর চেয়েও বেশি হারে
থ্যালাসেমিয়ার প্রকোপ রয়েছে৷ এটি গোপনে ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়ছে৷ অথচ এইডস
এর জন্য যতোটা উদ্যোগ এখানে রয়েছে, থ্যালাসেমিয়া থেকে রক্ষায় তেমন কোনো
উদ্যোগ এখনো গ্রহণ করা হয়নি।”